পুঞ্চে জঙ্গি হামলায় হত পাঁচ জওয়ানকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। ছবি: পিটিআই।
কারও চার মাসের সন্তান, তো কারও সাত মাসের। কেউ আবার সদ্য বিয়ে করেছিলেন। বৃহস্পতিবার এক লহমায় সব কিছু যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে জঙ্গি হামলায় হত পাঁচ জওয়ানের পরিবারে এখন শুধুই কান্নার রোল।
রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের যে পাঁচ জওয়ান জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে চার জন পঞ্জাবের এবং এক জন ওড়িশার। তাঁরা হলেন, হাবিলদার মনদীপ সিংহ, ল্যান্স নায়েক দেবাশীষ বিস্বাল, ল্যান্স নায়েক কুলবন্ত সিংহ, সিপাহী হরকিষণ সিংহ এবং সিপাহী সেবক সিংহ। হত জওয়ানদের মধ্যে কারও ৭ মাসের শিশুকন্যা রয়েছে, কারও আবার ৪ মাসের পুত্রসন্তান। তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা চাইছেন, যে ভাবে জওয়ানদের মারা হয়েছে, খুঁজে খুঁজে জঙ্গিদের যেন আরও ভয়ানক মৃত্যু দেওয়া হয়।
হত জওয়ানদের মধ্যে মনদীপ, কুলবন্ত, হরকিষণ এবং সেবক সিংহ পঞ্জাবের বাসিন্দা। দেবাশীষ ওড়িশার পুরীর বাসিন্দা। পুরী জেলার অলগুম গ্রামের বাসিন্দা দেবাশীষরা দুই ভাই। ২০২১ সালে বিয়ে করেছিলেন দেবাশীষ। তাঁর সাত মাসের কন্যাসন্তান রয়েছে। এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন দেবাশীষ। তাঁর এক আত্মীয় দিলীপ বিস্বাল বলেন, “দেশের সেবা করতে চাইত দেবাশীষ। যখনই বাড়ি আসত, কোনও না কোনও সামাজিক কাজে লেগে পড়ত। এলাকার তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা ছিল ও।”
দেবাশীষের দাদা পঞ্চানন আবার বলেন, “ভাবতে পারিনি এই দিন দেখতে হবে আমাদের। আমরা এক বাহাদুর ছেলেকে হারালাম। এমন এক জনকে হারালাম যে শুধু পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যও নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিল।”
পঞ্জাবের মোগা জেলার চারিক গ্রামেও কান্নার রোল উঠেছে। এই গ্রামেরই ছেলে কুলবন্ত সিংহ। তাঁর ভাই কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমরা চাই সরকার এর উপযুক্ত জবাব দিক।” কুলবন্তের চার মাসের পুত্রসন্তান রয়েছে। এ ছাড়ার দেড় বছরের এক কন্যাসন্তানও রয়েছে। গ্রামবাসীরা জানান, কুলবন্তের বাবাও এক জন সেনাকর্মী ছিলেন। কার্গিল যুদ্ধে নিহত হন তিনি। তখন কুলবন্তের বয়স ছিল মাত্র ২ বছর।
সিপাহী সেবক সিংহ ভাতিন্ডার ওয়াঘা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের একমাত্র পুত্র ছিলেন সেবক। তাঁর দুই বোন রয়েছে। সেবকের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই বার বার জ্ঞান হারিয়েছেন তাঁর মা। সমানে কেঁদে চলেছেন তাঁর দুই বোন। বাবা শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালেই এক বোনের সঙ্গে কথা হয়েছিল সেবকের। সন্ধ্যাতেই খবর আসে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর। সেবক বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন যে, পরের ছুটিতে বাড়ি ফিরে বোনের বিয়ে দেবেন। কিন্তু তা অধরাই থেকে গেল। ২০১৮ সালে সেনায় যোগ দেন সেবক। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
সিপাহী হরকিষণ সিংহ পঞ্জাবের গুরুদাসপুরের ফতেহগড় চুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। বয়স ২৫। হরকিষণের বাবা মঙ্গল সিংহও সেনায় কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে সেনায় যোগ দেন হরকিষণ। তিন বছর আগে বিয়ে করেন। হরকিষণের দেড় বছরের এক কন্যাসন্তান রয়েছে। স্ত্রী দলজিৎ সন্তানসম্ভবা। বৃহস্পতিবার সকালে কন্যার সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন হরকিষণ। সন্ধ্যাতেই তাঁর মৃত্যুর খবর আসে।
যে পাঁচ জওয়ান নিহত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন হাবিলদার মনদীপ সিংহও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। পরিবারে মা, স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। ছুটি নিয়ে মার্চে বাড়িতে এসেছিলেন। সদ্য কাজে যোগ দিয়েছিলেন। মনদীপের কাকা বলেন, “সন্ধ্যা ৭টায় খবর পেলাম ভাইপো আর বেঁচে নেই। জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে। তার পর থেকেই বাড়িতে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।” মনদীপের দুই পুত্রের এক জন কুশদীপ। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। করণদীপ দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy