Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
National Register of Citizens

‘এমন যন্ত্রণার চেয়ে জেল ভাল’

জাবেদার বাবা জাবেদ আলির নাম ১৯৬৬, ১৯৭০ ও ১৯৯৭ সালের ভোটার তালিকায় ছিল।

ফরেনার্স ট্রাইবুনাল।—ছবি এপি।

ফরেনার্স ট্রাইবুনাল।—ছবি এপি।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

ফরেনার্স ট্রাইবুনালে মামলা হারার পরে, নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ১৫টি নথি হাইকোর্টে জমা দিয়েছিলেন বাক্সা জেলার তামুলপুরের বাসিন্দা জাবেদা বেগম। কিন্তু কোনও নথিই তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেনি। এমনকি নিজের বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গেও নিজের সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারেননি জাবেদা। এ দিকে মামলা লড়তে গিয়ে নিজেদের একমাত্র সম্বল তিন বিঘা জমির পুরোটাই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। দিল্লি বা সুপ্রিম কোর্ট দূরের কথা, গুয়াহাটিতে আসার সঙ্গতিও আর নেই জাবেদার। স্বামী রেজ্জাক আলি অনেক দিন ধরে শয্যাশায়ী। জাবেদা এখন বিনা চিকিৎসায় স্বামীর মৃত্যু আর অনাহারে নিজের ও মেয়ের মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনে চলেছেন।

গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি মনোজিৎ ভুঁইয়া ও পার্থিবজ্যোতি শইকিয়ার বেঞ্চ গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাবেদার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মামলায় রায়ে জানিয়েছে, ভূমি রাজস্ব দেওয়ার রসিদ, প্যান কার্ড, এমনকি ব্যাঙ্কের পাসবইও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না। যদিও এনআরসি নবীকরণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট প্রামাণ্য নথি হিসেবে যে ১৪টি প্রমাণপত্রের তালিকা নির্দিষ্ট করেছিল, সেখানে তিন নম্বরে ছিল জমির নথিপত্র, ১১ নম্বরে ছিল ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের পাসবই।

জাবেদার বাবা জাবেদ আলির নাম ১৯৬৬, ১৯৭০ ও ১৯৯৭ সালের ভোটার তালিকায় ছিল। সেই তালিকা, প্যান কার্ড ও ব্যাঙ্কের পাসবই, জমির কর জমা দেওয়া রসিদ— সবই হাইকোর্টে জমা দিয়েছিলেন জাবেদা। কিন্তু সব প্রমাণই অগ্রাহ্য করে আদালত জানিয়েছে, জাবেদা বা তাঁর পরিবার ১৯৭১ সালের আগে থেকে অসমের বাসিন্দা— তা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ হয়নি। জাবেদা ও তাঁর স্বামী ও পরিবারকে চেনেন বলে আদালতে শংসাপত্র দিয়েছিলেন গ্রাম-প্রধান গোলোক কলিতা। তাতেও কাজ হয়নি।

তাঁর স্বামীর নামেও ডি-ভোটার নোটিস রয়েছে। বহু বছর ভোটও দিচ্ছেন না তাঁরা। বড় মেয়ে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। মেজো মেয়ে নিখোঁজ। ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী শয্যাশায়ী। জাবেদা জানান, রোজ খাবার জোটানোই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। লড়াই করার দৈহিক, মানসিক ও আর্থিক কোনও শক্তিই বাকি নেই। ‘‘এমন যন্ত্রণার জীবনের চেয়ে জেলে থাকা ভাল,’’ বলে মনে করছেন বছর পঞ্চাশের জাবেদা। স্বামী রেজাকের আক্ষেপ, ‘‘শয্যাশায়ী থেকে বউ-মেয়েকে কষ্ট দেওয়া, তাঁদের কষ্ট পেতে দেখার থেকে মরে যাওয়া ঢের ভাল।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy