সিমলাগুড়িতে যৌথ বাহিনীর সেই অভিযানের পর।-ফাইল চিত্র।
অসমের সিমলাগুড়ি গ্রামে জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাটা কি ভুয়ো ছিল?
আদতে সে দিন জঙ্গিদের সঙ্গে কোনও মুখোমুখি সংঘর্ষই হয়নি নিরাপত্তাবাহিনীর?
সেনাবাহিনী, অসম পুলিশ আর সিআরপিএফের চালানো ওই যৌথ অভিযান সম্পর্কে এমনটাই অভিযোগ করেছেন সিআরপিএফের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইনস্পেক্টর জেনারেল রজনীশ রাই। দিল্লিতে সিআরপিএফের সদর দফতরে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাই।
গত ৩০ মার্চ ভোরে অসমের চিরাং জেলার আমগুড়ি পুলিশ ফাঁড়ির অধীনে থাকা সিমলাগুড়িতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বড়োল্যান্ড (সংবিজিত)-এর জঙ্গিদের খোঁজে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী, অসম পুলিশ, সিআরপিএফ এবং সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-কে নিয়ে গড়া যৌথ বাহিনী। বাহিনী সূত্রে জানানো হয়, সে দিন মুখোমুখি সংঘর্ষে ওই সংগঠনের দুই সন্দেহভাজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু সিআরপিএফের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইনস্পেক্টর জেনারেল রজনীশ রাইয়ের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, সে দিন সিমলাগুড়িতে জঙ্গিদের সঙ্গে কোনও মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়নি নিরাপত্তাবাহিনীর। সংঘর্ষের ঘটনাটা একেবারেই ভুয়ো। সে দিন যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে ডি-কালিং গ্রাম থেকে তুলে এনেছিল নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের সিমলাগুড়ি গ্রামে নিয়ে এসে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছিল।
ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়ে রাই বলেছেন, সে দিন সিমলাগুড়িতে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল, পরে তাদের দেহদু’টি এক জন শনাক্ত করেছিলেন। তাঁর কাছ থেকেই জানা যায়, এক জনের নাম লুকাস নারজারি ওরফে এন লাংফা এবং ডেভিড ইসলারি ওরফে দায়উদ। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই শনাক্তকারীর নামধাম জানাতে চাননি রাই। জানিয়েছেন, শনাক্তকারী নিরাপদেই রয়েছেন।
সিমলাগুড়ির যে জায়গায় মৃত্যু হয়েছিল দুই বড়ো জঙ্গির
সেই রিপোর্টে মূলত কোন কোন অসঙ্গতির উল্লেখ করেছেন সিআরপিএফের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আইজি রজনীশ রাই?
এক, সিমলাগুড়িতে যেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে বলে নিরাপত্তাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছিল, জিপিএসের রেকর্ড দেখাচ্ছে, সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টা আগেই সেই স্পটে গিয়েছিল সিআরপিএফের ‘কোবরা’ ইউনিটের জওয়ানরা। রিপোর্টে রাই লিখেছেন, ‘‘এটা থেকেই সন্দেহ হচ্ছে, কোন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনাটা সাজানো হবে, তা আগেভাগে বুঝে নিতে চেয়েছিলেন ‘কোবরা’ ইউনিটের জওয়ানরা। অভিযানের সিনিয়ার অফিসাররাও পরে যৌথ বাহিনীর সরকারি দাবির বিরোধিতা করেছেন।
দুই, মৃত দুই সন্দেহভাজন জঙ্গির ছবি দেখে যাঁরা তাদের শনাক্ত করেছিলেন, তাঁদের বক্তব্যের সারাংশও রিপোর্টে জুড়ে দিয়েছেন রাই। তবে গোপনীয়তা বজায় রাখতে ও শনাক্তকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের রিপোর্ট তাঁর রিপোর্টের সঙ্গে জুড়ে দেননি রাই। তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ তদন্তকারী দলের কাছেই তিনি তা জমা দেবেন।
তিন, যে বাড়িটি থেকে ওই দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে তুলে আনা হয়েছিল, সেই সময় সেখানে একটি ১১ বছর বয়সী ছেলেও ছিল। দু’জনকে নিরাপত্তাবাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়েই পাশের বাড়ির এক মহিলা এসে ওই বাচ্চা ছেলেটিকে অন্যত্র নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যান। যেটা কোনও মুখোমুখি সংঘর্য হলে সম্ভব নয়।
চার, ২১০ ‘কোবরা’র ১৫ নম্বর টিমের যে সদস্যরা সে দিন ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন, পরে তাঁদের জেরা করা হলে অনেকেই ওই অভিযানে তাঁদের সামিল হওয়ার কথা অস্বীকার করেন। অথচ, ‘কোবরা’ ইউনিটের ওই সদস্যরাই আগে অভিযানের কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন!
পাঁচ, সেনাবাহিনী ও অসম পুলিশের একটি টিম ডি-কালিং গ্রামে গিয়ে ওই দুই সন্দেহভাজন জঙ্গিকে তুলে আনার পর আউগুড়িতে যৌথ বাহিনীর আরও একটি টিমের সঙ্গে তারা দেখা করে। সেখানেই ধৃত দু’জনকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১৭ এপ্রিল দিল্লিতে সিআরপিএফের সদর দফতরে পাঠানো তাঁর ওই রিপোর্টের কপি সিআরপিএফের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আইজি রজনীশ রাই পাঠিয়েছেন অসমের মুখ্যসচিব ভিকে পিপারসেনিয়া, সিআরপিএফের তদানীন্তন তদারকি ডিজি সুদীপ লাখটাকিয়া, সেনাবাহিনীর জিওসি ফোর কর্পসের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং যৌথ বাহিনীর অপারেশনাল গ্রুপের চেয়ারপার্সন এএস বেদী, অসম পুলিশের ডিজি মুকেশ সহায়, এসএসবি-র ডিজি অর্চনা রামসুন্দরম এবং সিআরপিএফের উত্তর-পূর্বাঞ্চল জোনের এডিজি মহম্মদ জাভেদ আখতারকেও।
আরও পড়ুন- সিয়াচেনে পাক যুদ্ধবিমান? সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি: বলল ভারতীয় বায়ুসেনা
রিপোর্টে রাইয়ের অভিযোগ, ‘‘ওই সাজানো ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। জঙ্গিয়ানার চেয়েও ভয়াবহ নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা।’’
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ও অসমের মুখ্যসচিব অবশ্য মুখ খুলতে চাননি। অসম পুলিশের ডিজি মুকেশ সহায় বলেছেন, ‘‘পুলিশের আইজি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলাদা ভাবে ঘটনার তদন্ত করছেন। সেই তদন্ত শেষ হলেই কিছু বলা যাবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
ও দিকে, সিআরপিএফের ডিজি আরআর ভাটনগর বলেছেন, ‘‘ওই রিপোর্ট অসম পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। এটা তাদের তদন্ত করে দেখার বিষয়। সেই তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy