অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি এএফপি।
অভিনন্দন এবং উচ্ছ্বাসের বান ডাকার কথা ছিল ভারতীয়ের নোবেলপ্রাপ্তির খবরে। কিন্তু নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যে ‘মোদীনমিক্সের’ সমালোচক, সে কথা জানার পরেই দ্বিধায় পড়ে যায় গেরুয়া শিবির। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা। এ বার অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে ভুয়ো টুইটার হ্যান্ডল বানিয়ে সেখান থেকে মনমোহন সিংহের নামে প্রশংসা টুইট করার অভিযোগ উঠল গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। বিজেপির পাল্টা চ্যালেঞ্জ— পারলে প্রমাণ করুন।
টুইটার হ্যান্ডলটির ডিসপ্লে নেম ছিল ‘নট দ্যাট স্বরাজ’। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষিত হওয়ার পরে ডিসপ্লে নেম বদলে করা হয় ‘অভিজিৎ ব্যানার্জি’। ডিসপ্লে পিকচার থেকে মহাত্মা গাঁধী ও সুষমা স্বরাজের মুখের কোলাজ সরিয়ে অভিজিৎ বিনায়কের মুখের ছবি দেওয়া হয়। নোবেল কমিটি অভিজিতের যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল, সেই ছবিটিকেই এই টুইটার হ্যান্ডলের ডিসপ্লেতে লাগানো হয়। আর হ্যান্ডল থেকে ‘প্যারডি’ শব্দটি সরিয়ে লেখা হয় ‘ইকনমিস্ট’। তবে হ্যান্ডল নেম যা ছিল, তাই রেখে দেওয়া হয়— ‘পলিটিক্ল’।
কিন্তু টুইটারে কাউকে চিহ্নিত করার জন্য মূলত ডিসপ্লে পিকচার এবং ডিসপ্লে নেম-ই দেখেন সকলে। হ্যান্ডল নেম কেউ সে ভাবে খেয়াল করেন না। ফলে গত কয়েক দিনে অনেকেই ওই টুইটার হ্যান্ডলকেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হ্যান্ডল ভাবছিলেন। কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনন্দন বার্তা পোস্ট করা হচ্ছিল সে হ্যান্ডলে, কখনও অরবিন্দ কেজরীবালের অভিনন্দন বার্তা। সে সব বার্তার জবাবে ‘ধন্যবাদ’ও জানানো হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ‘বিরোধীদের দোষ দিতে মরিয়া সরকার’, কড়া সমালোচনা মনমোহনের
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহের লেটারহেডে লেখা একটি অভিনন্দন বার্তার ছবিও ওই ভুয়ো টুইটার হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করা হয়। তার উপরে আবার অভিজিতের বয়ানে লেখা হয়, ‘‘মনমোহন সিংহজি, আমার গুরু, পথপ্রদর্শক এবং বিনম্রতম মানুষদের এক জন, আপনার বার্তা আমার কাছে নোবেলের চেয়ে কম নয়। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।’’
অচিরেই জানা গিয়েছে, ওই টুইটার হ্যান্ডল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের নয়। তার পরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শুধু ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বানিয়ে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় সেজে একের পর এক টুইট করায় সীমাবদ্ধ নেই বিষয়টা। তার পাশাপাশি ফেসবুকে এবং হোয়াটসঅ্যাপে গত কয়েক দিন ধরে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা কুৎসা ছড়ানো চলছিল। অভিজিৎকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেও দেখা যাচ্ছিল অনেককেই। তার পাশাপাশি সুকৌশলে তাঁর চরিত্র হননের চেষ্টাও চালাচ্ছিল একটি অংশ। তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামেদের অভিযোগ— এই কুৎসা চালাচ্ছিলেন গেরুয়া শিবিরের সমর্থকরাই।
আরও পড়ুন: সত্য নাদেলার বেতন ৩০৫ কোটিরও বেশি, এক বছরে বৃদ্ধি ৬৬%
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের কথায়, ‘‘অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন অর্থনীতিবিদ এবং তিনি মোদী সরকারের অর্থনীতির সমালোচনা করেছেন। সুতরাং তাঁকে কাদের অপছন্দ হবে, বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাঁরাই এই সব কুৎসা করছেন, তাঁরাই এই সব ফেক অ্যাকাউন্ট খুলছেন।’’ যাঁরা অভিজিতের নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে টুইট করছিলেন, তাঁদের এ দিন ‘জালিয়াত’ আখ্যা দেন সোমেন মিত্র। প্রদেশ কংগ্রেসের আইটি সেলের প্রধান মিতা চক্রবর্তীও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খোলার নিন্দা করেন। সোমেনের মতো সরাসরি আক্রমণে যাননি তিনি। তবে মিতা বলেন, ‘‘বিজেপি আইটি সেল যে সারা বছর ধরে ভুয়ো খবর ছড়ায়, সে আমরা সবাই জানি। সুতরাং এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, আন্দাজ করা কঠিন নয়।’’
বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চায়নি। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যে টুইট করেছেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা বঙ্গ বিজেপির আর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মুকুল রায়ও যে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, তা-ও বিজেপি নেতারা মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দলের রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘যদি কারও মনে হয়, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে টুইটারে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বিজেপি খুলেছে, তা হলে তদন্ত হোক। যে কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। প্রমাণ করে দিক, এটা বিজেপি করেছে।’’ সায়ন্তন তৃণমূলের দিকেও আঙুল তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব কাজ তৃণমূলই করতে পারে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তদন্ত করলেই দেখা যাবে যে, তৃণমূল বা তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত কেউ এই সব কাণ্ড ঘটিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy