প্রতি কেজির দাম ১ লক্ষ টাকা। বিহারের মাটিতে এমন ‘সোনার ফসল’ ফলছে শুনে হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছিল সর্বত্র। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গোটাটাই ভুয়ো। যে যুবককে এই অসাধ্যসাধনের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, ‘হপ শুটস’ নামের ওই ফসলের হদিশ দিতে পারেননি তিনি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি এড়িয়ে কার্যত পালিয়ে বেঁচেছেন। যে জমিতে এই ফসল ফলছে বলে জানা গিয়েছিল, সেখানে গিয়ে তেমন কোনও ফসলের হদিশ মেলেইনি। এ জেলা, ও জেলা ঘুরিয়ে বিশেষজ্ঞদের ওই সব্জি ফলানোর কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি ওই যুবক।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন উল্লেখ করে গত ৩১ মার্চ বিহারের মাটিতে সোনার দামে বিক্রি হওয়া ‘হপ শুটস’ ফলছে বলে নেটমাধ্যমে জানিয়েছিলেন সুপ্রিয়া সাহু নামের এক আইএএস অফিসার। সরকারের নজর কাড়তে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেও নিজের টুইটে ট্যাগ করেন তিনি। তাতে অমরেশ সিংহ নামের বিহারের ঔরঙ্গাবাদের এক কৃষিজীবী যুবককে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তা নিয়ে নেটমাধ্যম তো বটেই, সব জাতীয় এবং আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমেও শোরগোল পড়ে যায়। আনন্দবাজার ডিজিটালও বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তার পরেই বিষয়টি যাচাই করতে নেমে পড়ে অনুসন্ধিৎসু হিন্দি এবং ইংরাজি সংবাদমাধ্যমের একাংশ। বিহারের ঔরঙ্গাবাদে অমরেশের গ্রামে গিয়ে হাজির হয় তারা। কিন্তু ‘হপ শুটস’ নামের কোনও ফসল রয়েছে বলে জানেনই না বলে উল্লেখ করেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের মানুষের কাছ থেকেই অমরেশের নম্বর জোগাড় করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। কিন্তু তাঁদের মুখোমুখি হতে রাজি হননি অমরেশ। ফসলের কথা জানতে চাইলে জানান, ঔরঙ্গাবাদ নয়, সেখান থেকে ১৭২ কিলোমিটার দূরে নালন্দার একটি জমিতে ওই ফসল ফলাচ্ছেন তিনি।
One kilogram of this vegetable costs about Rs 1 lakh ! World's costliest vegetable,'hop-shoots' is being cultivated by Amresh Singh an enterprising farmer from Bihar, the first one in India. Can be a game changer for Indian farmers
— Supriya Sahu IAS (@supriyasahuias) March 31, 2021https://t.co/7pKEYLn2Wa @PMOIndia #hopshoots pic.twitter.com/4FCvVCdG1m
কিন্তু তাঁর দেওয়া ঠিকানা ধরে নালন্দা গিয়েও ওই ফসলের হদিশ মেলেনি। এর পর বিষয়টি নিয়ে ঔরঙ্গাবাদের জেলাশাসক সৌরভ জোরওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘পটনা থেকে কিছু সরকারি আধিকারিকও ফসলটি সম্পর্কে জানতে চাইছিলেন। কিন্তু এই নামের কোনও ফসল এখানে ফলে না।’’ তিনি আরও জানান, অমরেশ মূলত কালো চাল এবং গম উৎপন্ন করলেও, কখনও ‘হপ শুটস’ চাষ করেননি তিনি।
‘হপ শুটস’ নামের যে সব্জিকে ঘিরে হুলুস্থুল শুরু হয়েছে, তা চাষ করার জন্য মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকার আবহাওয়াই অনুকুল। চাহিদা না থাকায় অন্য কোথাও সে ভাবে চাষ হয় না এই সব্জির। বাজারে এই সব্জির দাম কেজিতে প্রায় ১ লক্ষ টাকা। এই গাছের ফুল দিয়ে বিয়ার তৈরি হয়। পানীয় সামগ্রীর সুগন্ধীতেও ব্যবহার করা হয় ‘হপ শুটস’-এর ফুল। এ ছাড়াও ক্যানসার এবং যক্ষ্মার ওষুধ তৈরিতে ‘হপ শুটস’ ব্যবহার করা হয়।