Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বাঁচাতে পারলাম না ডাক্তারবাবুকে

তিন মিনিটে গাড়ি এল। ভিতরে এক এসআই। আমরা গাড়িতে উঠলাম। বাগানের হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম কয়েকশো শ্রমিক রয়েছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

কমল দাস
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৪
Share: Save:

সে দিন ৩১ অগস্ট। এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে। তাই ব্যস্ততা তুঙ্গে। মধ্য টিওক এলাকার রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমায়। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ ওসি স্যারের ফোন, ‘‘চা বাগানে গণ্ডগোল হচ্ছে। গাড়ি পাঠাচ্ছি। দেখে এস।’’

তিন মিনিটে গাড়ি এল। ভিতরে এক এসআই। আমরা গাড়িতে উঠলাম। বাগানের হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম কয়েকশো শ্রমিক রয়েছে। আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। কোনও মতে ঠেলেঠুলে এগোই। দেখি প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষ সামনের ঘরে কাউকে মারধর করছে। তাদের টেনে বের করতে গেলে আমাদের উপরেই চড়াও হল। ঘরে ঢুকতেই লাগল মিনিট দশেক। সঙ্গে থাকা তিন বিএসএফ জওয়ান ঘরে ঢুকলেও আমি দরজায় পাহারায় রইলাম। ক্ষিপ্ত জনতা জানালার ভাঙা কাচ ছুড়তে লাগল। কেটে গেল আমার ডান হাত। তা দেখে এক জওয়ান আমায় ভিতরে টেনে এনে নিজে কার্বাইন নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালেন।

ঘরে ঢুকে আঁতকে উঠলাম। মাটিতে রক্তের ধারা। চেয়ারে বসে কাঁপছেন ডাক্তারবাবু, দেবেন দত্ত। পা থেকে নাগাড়ে রক্ত বেরোচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো হাসপাতাল কর্মীকে বললাম, পা বাঁধতে হবে। ব্যান্ডেজ দিন। তিনি বললেন, হাসপাতালের সব জিনিস ওরা ফেলে দিয়েছে। দৌড়ে পিছনের ঘরে গেলাম। দেখলাম স্যালাইনের পাইপ কয়েকটা রয়েছে। সেটাই নিয়ে এসে শক্ত করে পা বেঁধে দিলাম, যদি রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এরপর ফোন করলাম অ্যাম্বুল্যান্সে। অল্প পরে রক্ত বন্ধ হল।

মানুষ ঠেকিয়ে ক্লান্ত জওয়ানদের বিশ্রাম দিতে আমি দরজার সামনে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হাত টেনে ধরলেন ডাক্তারবাবু। বললেন, ‘‘বাবা আমায় ছেড়ে যেও না। তাহলে আমি আর বাঁচব না।’’ বললাম, স্যর আপনার কিচ্ছু হবে না। অ্যাম্বুল্যান্স আসছে। তিনি জল খেতে চাইছিলেন। খুঁজে পেতে এক বোতল জল এনে তাঁকে দেওয়া হল।

অ্যাম্বুল্যান্স আর আসে না। খবর পেলাম, সামনের জনতা অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙচুর করেছে। ঠিক হল, পিছনের দরজা দিয়ে ডাক্তারবাবুকে বের করে থানার গাড়িতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। ডাক্তারবাবুকে ধরে ধরে নিয়ে গেলাম। তিনি নিজেই গাড়িতে উঠলেন। ভাবলাম এত রক্তপাতের পরেও যখন এটুকু শক্তি রয়েছে, নিশ্চয় সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাঁকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে ফের এলাম বাগানে। সন্ধ্যা সাতটায় যখন থানায় ফিরে জামা খুলছি, শুনলাম ডাক্তারবাবু আর নেই। তাঁর কথাগুলো কানে বাজছে, ‘‘বাবা আমায় ছেড়ে যেও না।’’

(লেখক টিওক থানার কনস্টেবল)

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy