রামলালা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাস। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁর স্মিত মুখে হঠাৎ কিঞ্চিৎ অপ্রসন্নতার ছোঁওয়া! মিনিট সাতেকের একান্ত সাক্ষাৎকার পর্বে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য!
অযোধ্যার রামলালা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাসের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘‘আপনি বলছেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ওই বিতর্কিত কাঠামোয় রামলালা প্রকট হয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই বলেন, আপনার গুরু অভিরাম দাস নাকি সেদিন রাতে গোপনে মূর্তি বসিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।’’
সত্যেন্দ্র যে জবাব দিলেন তার মর্মার্থ হচ্ছে, ভগবান রামের ক্ষেত্রে ‘প্রকট’ শব্দটাই যুৎসই। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা বলতে পারেন দশরথ এবং কৌশল্যার সন্তান রামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব হল ভগবান রাম প্রকট হয়েছিলেন। তা ছাড়া, রামজন্মভূমিতে নিয়মিত পূজার্চনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন আমাদের কৌঁসুলি যে যুক্তি দিয়েছিলেন, শীর্ষ আদালত তা মেনেও নিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ভূমিপুজোয় ১৭৫ জন নিমন্ত্রিত, ৪০ কেজি রূপোর ইট দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মোদী
রামলালার ‘আবির্ভাবের’ কথা বলতে গিয়ে বরকত আলি নামে এক পুলিশকর্মীর বয়ানের প্রসঙ্গও তুললেন রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তাঁর দাবি, ‘‘ওই মুসলিম পুলিশ কনস্টেবলও সোনায় মোড়া অপরূপ রামলালার প্রকট হওয়ার কথা কবুল করেছিলেন। তা ছাড়া অভিরামজি গোপনে মূর্তি রেখে দিন কিংবা তাঁর তপস্যায় বলে রামলালা প্রকট হোন, সুপ্রিম কোর্ট তো মন্দিরের পক্ষেই রায় দিয়েছে।’’
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবা চলাকালীন ‘বিতর্কিত কাঠামো’ (বাবরি মজসিদ) গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথাও কবুল করলেন সত্যেন্দ্র। সেই সঙ্গেই তাঁর গলায় এল স্বস্তির সুর— ‘‘শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৮ বছরের প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়েছে। রামমন্দির নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন হবে।’’
মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই রাম মন্দিরের ভূমিপুজো। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ক্রমশই দাপট বাড়ছে করোনার। রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রথম সারির নেত্রী কমলা রানি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। সত্যেন্দ্রর সহকারী প্রদীপ দাস-সহ অযোধ্যার একাধিক সন্ত ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত। যদিও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দাবি, গত ৫০০ বছরে এমন শুভ মুহূর্ত আর নাকি আসেনি! জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা নিজেই বললেন সত্যেন্দ্র। যদিও সামগ্রিক ভাবে করোনা পরিস্থিতি একটু লঘু করেই দেখাতে চাইলেন। তাঁর মতে, অদৃষ্টকে তো কেউই এড়াতে পারে না। এখন অতিমারি প্রভাব বাড়ছে। আবার যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে করোনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।
আরও পড়ুন: ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমসে ভর্তি হলেন না কেন?’ অমিতকে কটাক্ষ তারুরের
এই পরিস্থিতিতে ভূমিপুজো করে ভিড় বাড়ানো কি প্রয়োজন ছিল? এ ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি কি মানা সম্ভব হবে?
তাঁর সাফাই, ‘‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সচেতন বলেই মাত্র ২০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভিড় এড়ানোর জন্য আমরা সক্রিয়। তা না হলে আগামী ৫ অগস্ট লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হত অযোধ্যায়।’’ তাঁর দাবি, আমন্ত্রিতদের জন্য বিশাল এলাকা জুড়ে ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। তাঁরা সেখানে দূরে দূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে ভূমিপুজোর সাক্ষী হতে পারবেন। থাকছে, টিভি-তে লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থাও।
আর অযোধ্যাবাসীর উদ্দেশে তাঁর বার্তা?
ফের সেই স্মিত হাসি সত্যেন্দ্রর ঠোঁটে, ‘‘মাহেন্দ্রক্ষণ এসে গিয়েছে। এ বার রামমন্দির হবেই। কিন্তু এই মুহূর্তে করোনা অতিমারিকে রোখা আমাদের কর্তব্য। তাই কেউ বাইরে বার হবেন না। ঘরে বসেই টিভিতে ভূমিপুজো দেখুন।’’
তবে বুধবারের ‘ভূমিপূজন’ অনুষ্ঠানে তাঁর যে কার্যত কোনও ভূমিকাই নেই, সে কথা খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন সত্যেন্দ্র। তখন আবার তিনি সামান্য বিষন্ন— ‘‘ভূমিপুজোর জন্য তো বাইরে থেকে (নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্র বারণসী) পুরোহিত আসছেন। আমি ওই অনুষ্ঠানের কেউ নই। আমি রামলালার মন্দিরের নিত্যদিনের পূজারী। রামলালার দৈনন্দিন সেবাই আমার কাজ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy