সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা যখন দু’ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, তখন মণিপুরের দুই সাংসদ স্লোগান দিতে শুরু করলেন, ‘মণিপুরের জন্য, এক মিনিট, এক মিনিট’। তাতে গলা মেলাল গোটা বিরোধী শিবির।
রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে লোকসভায় বিতর্কে আজ মোদী ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিট ধরে জবাবি বক্তৃতা করলেন। কিন্তু এ বারও মণিপুরের হিংসা নিয়ে একটি কথাও বললেন না। টানা ২ ঘন্টা ১৪ মিনিট ধরেই মণিপুরের দুই সাংসদ-সহ গোটা বিরোধী শিবির কখনও ‘নরেন্দ্র মোদী মণিপুর যাও’, কখনও ‘জাস্টিস ফর মণিপুর’ বলে স্লোগান তুলেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। তবে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে চলা কংগ্রেস সাংসদ মাণিকম টেগোর ও হিবি ইডেনের দিকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়েছেন।
অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও মণিপুরের হিংসা নিয়ে একটিও শব্দ ছিল না। গত বছর মে মাস থেকে মণিপুরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও প্রধানমন্ত্রী একবারও মণিপুরে যাননি। এমনকি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারেও তিনি মণিপুরকে এড়িয়ে গিয়েছেন। মণিপুরের কুকি-মেইতেই বিবাদ প্রশমন করে মোদী সরকার কী ভাবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে, তারও কোনও দিশা মেলেনি। সোমবার রাহুল গান্ধীও মোদীকে এ নিয়ে নিশানা করেছিলেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী নিট দুর্নীতি নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন যে, দোষীদের শাস্তি হবে। পরীক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতির জন্য সব রকম পদক্ষেপ হচ্ছে। আজ রাহুল প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিট নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য সরকার রাজি হয়নি।প্রধানমন্ত্রী অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, কংগ্রেস মিথ্যে প্রচার করছে, যাতে তরুণরা সেনায় যোগ না দেয়। মোদীর অভিযোগ, কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকতে সেনাকে দুর্বল করেছে। বিরোধী হিসেবেও সেনাকে দুর্বল করছে।
বাকি সব বিষয়ে রাহুলকে জবাব দিলেও মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও জবাব দেননি। সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার সময় মণিপুরের সাংসদ এ বিমল আকোইজম বলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তখনই তিনি বলেছিলেন, যতক্ষণ না প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে মুখ খুলছেন এবং বিজেপি মণিপুরকে ভারতের অংশ বলছে, তত ক্ষণ তিনি চুপ করে বসবেন না। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্যের ৬০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। দু’শোর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি। এই ক্ষোভের কারণেই তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে হারিয়ে জিতে এসেছেন বলেও যুক্তি দেন আকোইজম।
আজ লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুরুর আগে কংগ্রেস দাবি তোলে, মণিপুরের আর এক সাংসদ এস এস জামিরকে বলতে দেওয়া হোক। কিন্তু স্পিকার তাতে রাজি হননি। বিরোধী দলের সাংসদরাও একই দাবি তোলেন। তাতেও লাভ না হওয়ায় রাহুলের নির্দেশে মণিপুরের দুই সাংসদ এবং নাগাল্যান্ডের সাংসদ এস এস জামিরকে নিয়ে অসমের গৌরব গগৈ লোকসভার ওয়েলে হাত ধরাধরি করে নেমে পড়েন। তার পরে কংগ্রেসের বাকি সাংসদরাও ওয়েলে নেমে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েই বিরোধীরা ‘সত্য সে ডরতি হ্যায়, মণিপুর সে ডরতি হ্যায়’ বলে স্লোগান দেন। সেই স্লোগান ছাপিয়ে নিজের গলার স্বর শোনাতে মোদীকে বারবার জল খেতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময় বিরোধীদের এই হট্টগোলকে রাজনাথ সিংহ ভর্ৎসনা করেছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে না নেওয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ করেন। স্পিকারও রাহুল-সহ বিরোধীদের নিন্দা করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন মণিপুর নিয়ে মুখ খুললেন না, তার জবাব মেলেনি। মোদী বক্তৃতা শেষ করে অবশ্য বলেন, বিরোধীদের হট্টগোলের মোকাবিলা করার অভ্যাস তাঁর হয়ে গিয়েছে। আজও তিনি ভরপুর আনন্দ পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার শেষে লোকসভার অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয়। অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল আগামী কাল। অর্থাৎ লোকসভার অধিবেশনে কার্যত আজই ইতি হয়ে গেল। রাজ্যসভায় কালও আলোচনা চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy