গ্রাফিক —শৌভিক দেবনাথ
সফর অসম্পূর্ণ রেখেই আজ সকালে কাশ্মীর ছাড়লেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা। বলে গেলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ কাশ্মীরের এক চরম সমস্যা।’’ তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ীও করে গেলেন।
গত কাল সেনা, বিজেপি ও জেডিইউয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বিদেশিরা। তার ফাঁকেই ডাল লেকে শিকারা-ভ্রমণ করেছেন, সরকারি মোটরবোটেও চড়েছেন। পর্যটকশূন্য কাশ্মীরে এখন শিকারা-মালিকদের দুর্দশা চরমে। তাঁরা যাতে এই বিদেশিদের ধারেকাছে না-ঘেঁষেন, সে জন্য চেষ্টার ত্রুটি ছিল না প্রশাসনের। যে কারণে তাঁদের শিকারার জন্য আলাদা মাঝি জোগাড় করেছিল প্রশাসন। কিন্তু নৌকাবিহার শেষে বিদেশি প্রতিনিধিরা যখন ঘাটে পা রাখছেন, তখন কয়েক জন শিকারা-মালিক পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁদের কাছে। উগরে দিয়েছিলেন ক্ষোভ— ইংরেজিতে। হ্যাঁ, সারা বিশ্বের পর্যটক নিয়ে কারবারের দৌলতে ওঁরা ইংরেজিটা আপনার-আমার চেয়ে খারাপ বলেন না।
কী বললেন বিদেশিদের? প্রশ্নটা শুনে শিকারা-মালিক আজ়িম ভাট বললেন, ‘‘বললাম, সব সমস্যার একটাই সমাধান। আমাদের এ বার ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটা আলাদা দেশই করে দিন। মোদী সরকার আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।’’ আর এক শিকারা-মালিক শফকত মীর আরও ঠোঁটকাটা। জানালেন, বিদেশি প্রতিনিধিদের তিনি বলেছেন, ‘‘আপনাদের তো লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া উচিত। আমরা বন্দি হয়ে আছি। গত তিন মাস ধরে প্রায় না-খেতে পেয়ে মরছি। আর আপনারা পিকনিক করতে এসেছেন! ভারতকে কেন বলছেন না, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে?’’
বেকায়দায় পড়ে বিদেশি প্রতিনিধিরা শিকারা-মালিকদের বলেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে। যা নিয়ে মীর বলছেন, ‘‘সে কি আদৌ হবে? আমাদের তো খোলাখুলি কোনও কথা বলতেই দেওয়া হচ্ছে না। তিন মাস আগে পর্যটকদের বার করে দেওয়ার পর থেকে আর কেউ আসছে না। রোজগার নেই, খাবার নেই।’’
বিদেশিদের সঙ্গে দেখা-করা রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলে ছিলেন জেডিইউয়ের জি এন শাহিন। বললেন, ‘‘আমি ওঁদের বলেছি, তাড়াতাড়ি (কাশ্মীরকে) রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। ইন্টারনেট বন্ধ করা আর ব্যাপক ধরপাকড়ের কথাও জানিয়েছি।’’ বারামুলার স্বঘোষিত যুব নেতা তৌসিফ রায়না জানালেন, হিংসা যে কোনও সমাধান নয়, সে কথাই বলেছেন বিদেশিদের। বলেছেন, যুব সম্প্রদায়-সহ কাশ্মীরিরা চান পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বৃত্তটা থেকে বেরিয়ে আসতে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুর স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। বললেন, ‘‘আমি বলেছি, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার জেরে কাশ্মীরিদেরই দুর্দশা, সন্ত্রাস আর বিচ্ছিন্নতাবাদ বেড়েছিল। তা বিলোপ করে নরেন্দ্র মোদী ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’
আজ উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা আর দক্ষিণের অনন্তনাগে যাওয়ার কথা ছিল ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের। সফর বাতিল করেছেন তাঁরা। সম্ভবত তাঁদের আসার বিরোধিতায় গত কাল থেকেই উপত্যকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভের বহর দেখে সেই সিদ্ধান্ত। আজও রাস্তাঘাটে পুরোদস্তুর বন্ধের চেহারা, যানবাহন নেই। তবে সন্ধেয় এই কপি পাঠানো পর্যন্ত বড় ধরনের কোনও বিক্ষোভের খবরও নেই।
উপত্যকা ছাড়ার আগে আজ সকালে ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা সাংবাদিক বৈঠক করেন বদগাম জেলার রঙ্গরেতের টেকনিক্যাল এয়ারপোর্টে। শ্রীনগরের পাঁচতারা হোটেল থেকে ১১টি বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়িয়ে তাঁদের সেখানে নিয়ে আসেন এক ব্রিগেডিয়ার এবং এক এসপি। সাংবাদিকেরা অপেক্ষা করছিলেন আগে থেকেই। বিদেশিরা তাঁদের বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি দেখলাম। রিপোর্ট তৈরি করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy