এক দিকে চিনের আগ্রাসী অর্থনীতি ও একচেটিয়া উৎপাদননীতি, অন্য দিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে ইইউ-র সদস্য দেশ এবং ভারতের প্রতি হুঙ্কার। এই সাঁড়াশি-পরিস্থিতির মধ্যে আজ দু’দিনের ভারত সফরে এলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন।
১০-১৪ মার্চ ব্রাসেলসে হবে ভারত-ইইউ-এর বাণিজ্য বৈঠক। তার আগে গাড়ি, ওয়াইন-সহ বিভিন্ন পণ্যে আমদানি শুল্ক কমাতে দিল্লির উপরে চাপ বাড়ানো অন্যতম উদ্দেশ্য উরসুলার সফরের। ভারতও চাইছে নিজ শর্তে ইউরোপের সদস্য দেশগুলিতে পণ্য রফতানি বৃদ্ধির সুযোগ। বর্তমানে জোগানের শৃঙ্খলে চিন-নির্ভরতা উদ্বেগের কারণ পশ্চিমের দেশগুলির। তাদের সেই উদ্বেগকে কাজে লাগাতে চাইছে নয়াদিল্লি।
আজ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন উরসুলা। আগামিকাল হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ প্রেস বিবৃতি প্রকাশ হওয়ার কথা। বাণিজ্য ও শুল্ক সম্পর্কিত আলোচনার পাশাপাশি কথা হবে প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে সমন্বয় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়েও। আজ দুপুরে নয়াদিল্লি পৌঁছে উরসুলা তাঁর সমাজমাধ্যমের হ্যান্ডলে পোস্ট করেন, ‘আমার প্রতিনিধিদের (কমিশনার) নিয়ে দিল্লির মাটি ছুঁলাম। সংঘাত এবং প্রবল প্রতিযোগিতার এই কালখণ্ডে প্রয়োজন হয় বিশ্বস্ত বন্ধুর। ইউরোপের ক্ষেত্রে ভারত সেই বিশ্বস্ত বন্ধু এবং কৌশলগত অংশীদার। এই অংশিদারি কীভাবে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে আমাদের।’
আমেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যত দিন আটকে রয়েছে, তার দীর্ঘদিন আগে থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। ২০০৭ সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং দরকষাকষি শুরু হয়েছিল। কমিশনের সফররত এক কর্তা বলেন, ‘‘ভারত বৃহৎ উদীয়মান অর্থনীতি। সেখানে ছোট-বড় কৃষিজীবী মানুষ ও উদ্যোগ রয়েছে। এটি আমাদের চুক্তিতে প্রতিফলিত হবে। কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলি আগ্রহী। তবে চুক্তি যা-ই হোক, ভারসাম্য থাকা জরুরি। যেমন গাড়ি, ওয়াইন এবং স্পিরিটের মতো পণ্যের উপর ভারতের শুল্ক অনেক বেশি। ইইউ এই শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করবে।’’
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়েও মোদীর সঙ্গে কথা বলবেন উরসুলা। তাঁর প্রতিনিধিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমেরিকা রাশিয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুর পরিবর্তন করছে বলে মনে হলেও ইইউ তা শিথিল করার কথা ভাবছে না। মোদীর সাথে ইইউ প্রধানের আলোচনার একটি অংশ নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে হবে। এক কর্তার কথায়, “এটি (রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা) আলোচ্যসূচিতে রয়েছে এবং আমরা ভারতীয় নেতৃত্বের কাছে তা তুলব।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)