ডাল লেকে শিকারায় উঠছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যেরা। মঙ্গলবার। (ইনসেটে ম্যাডি শর্মা)। পিটিআই
কাশ্মীরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাছাই করা সদস্যদের সফর নিয়ে ঘরে বাইরে অস্বস্তিতে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে পৌঁছনোর পিছনে রয়েছে ব্রাসেলসের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগ। ওই সংস্থার পক্ষে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ম্যাডি শর্মা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রায় ৩০ জন সদস্যকে ভারতে আসার আমন্ত্রণপত্র দিয়েছিলেন। একটি ইংরেজি সংবাদপত্রের দাবি, আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়, ভারতে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা হবে। দাবি করা হয়, এ ব্যাপারে মোদী নিজেই আগ্রহী। তিন দিনের সফরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানানো হয়। ম্যাডি শর্মার টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ব্রোকার’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ওই অ্যাকাউন্ট এখন আর চালু নেই। শর্মা দাবি করেছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের তিন দিনের ভারত সফরের খরচ বহন করবে দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন-অ্যালায়েড স্টাডিজ। কিন্তু তাদেরও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কী ভাবে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এই ধরনের সফরের ব্যবস্থা করল মোদী সরকার, তা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠেছে।
ইউরোপের দক্ষিণপন্থী দলগুলির ২৩ জন সদস্যের এই সফর নিয়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে ব্রাসেলসেও। ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়ে আজ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের লিবারেল ডেমোক্র্যাট সদস্য ক্রিস ডেভিস দাবি করেছেন, তিনি কাশ্মীরে গিয়ে অবাধে ঘুরতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁর আমন্ত্রণ খারিজ করে দেয় দিল্লি। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে এই প্রথম কাশ্মীরে গিয়েছে কোনও বিদেশি প্রতিনিধি দল। যাওয়ার আগে দিল্লিতে মোদী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে দেখা করেন ২৩ জন সদস্য।
প্রতিনিধি দলের সদস্য বাছাই ও তাঁদের আমন্ত্রণ জানানোর শর্ত নিয়ে গোড়া থেকেই অস্বস্তি দেখা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম কেন্দ্র ব্রাসেলসে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সূত্রে খবর, এই দলের ২৩ জন সদস্যের প্রত্যেকেই গোঁড়া দক্ষিণপন্থী দলের প্রতিনিধি। তাঁদের অনেকেই আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধারণারই বিরোধী। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খুশি নন। আগেই বিবৃতি দিয়ে এই সফর থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা জানিয়েছে, নিতান্তই ‘ব্যক্তিগত’ সফরে গিয়েছেন পার্লামেন্টের ওই সদস্যেরা।
আজ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের লিবারেল ডেমোক্র্যাট সদস্য ক্রিস ডেভিস দাবি করেন, তিনি কাশ্মীরে গিয়ে অবাধে ঘুরতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁর আমন্ত্রণ খারিজ করেছে দিল্লি। ক্রিসের প্রশ্ন, ‘‘ভারত সরকার কী লুকোতে চাইছে? সফররত সাংবাদিক বা আইনসভার সদস্যদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না কেন?’’ ক্রিস বলেন, ‘‘আমি উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের যে এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিনিধি সেখানে অনেক কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত রয়েছেন। তাঁরা কাশ্মীরে পরিজনের সঙ্গে কথা বলতে চান। এঁদের উদ্বেগ নিয়ে আমি সরব হয়েছি।’’ ক্রিসের মতে, ‘সামরিক শাসন’ জারি করে কোনও সরকার মানুষের হৃদয় জয় করতে পারে না। এর পরে পাল্টা হিংসা হতেই পারে।
অন্য দিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর বক্তব্য, ‘‘দেশের সাংসদদের কাশ্মীরে ঢুকতে দেওয়া হল না। অথচ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীর ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে। এটা অন্যায়।’’ একই সুরে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার মন্তব্য, ‘‘বিজেপির জাতীয়তাবাদের ধরন অদ্ভূত। দেশের সাংসদদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়ে ইউরোপের জনপ্রতিনিধিদের নাক গলানোর অনুমতি দেওয়া হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy