শেষকৃত্যের আগে সুষমাকে স্যালুট মেয়ে ও স্বামীর। ছবি: পিটিআই
বিদেশে বন্দি কোনও ভারতীয়কে উদ্ধার করা হোক বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তকে সাহায্য— সুষমা স্বরাজকে টুইট করলেই মুশকিল আসান হয়েছে আমজনতার। সাহায্যে অকৃপণ, এমন সহজলভ্য বিদেশমন্ত্রী ভারতবাসী আগে কখনও পেয়েছে কি না, তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। সুষমার আকস্মিক প্রয়াণ কারও কাছে মাতৃবিয়োগ, কারও কাছে অভিভাবক হারানোর যন্ত্রণা।
মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ার হামিদ নিহাল আনসারি ২০১২ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন পাকিস্তানে। তাঁকে চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানের সামরিক আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছিল। ছ’বছর সে দেশের জেলে কাটানোর পর সুষমার নিরন্তর প্রয়াসে তিনি ভারতে ফেরেন। সে কথা স্মরণ করে আজ আনসারি বলেন, ‘‘উনি আমার মায়ের মতো। ওঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। উনি আমার হৃদয়ে চিরকাল থাকবেন। দেশে ফেরার পর উনি আমাকে ভবিষ্যতে চলার পথ দেখিয়েছেন।’’ পাকিস্তানে বন্দি থাকাকালীন নিহত হওয়া সর্বজিৎ সিংহের মুক্তির জন্যও সুষমার উদ্যোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। তখন অবশ্য তিনি বিদেশমন্ত্রী নন। তাঁর উদ্যোগের কথা স্মরণ করে সর্বজিতের বোন দলবীর কৌর বলছেন, ‘‘বিশ্বাস করতে পারছি না সুষমা স্বরাজ নেই। বিজেপির নয়, এটা দেশের ক্ষতি। সর্বজিতের ব্যাপারে প্রচুর সাহায্য করেছিলেন।’’
সুষমার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর ভেঙে পড়েছেন পাকিস্তানে ১৫ বছর কাটানোর পর দেশে ফেরা মূক ও বধির গীতা। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর নিরলস চেষ্টায় যিনি ভারতে ফিরতে পেরেছিলেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে থাকা গীতা আজ সাঙ্কেতিক ভাষায় বলেছেন, ‘‘উনি আমার মায়ের মতো ছিলেন। আমি অভিভাবককে হারালাম।’’ আট বছর বয়সে সমঝোতা এক্সপ্রেসে লাহৌর চলে গিয়েছিলেন গীতা।
২০১৪ সালে ইরাকে আইএস জঙ্গিরা ৩৯ জন ভারতীয়কে অপহরণ ও হত্যা করেছিল। নিহতদের মধ্যে এক জন মনজিন্দ্র সিংহ। তাঁর দিদি গুরপিন্দ্র কৌর জানিয়েছেন, কী ভাবে সুষমার প্রচেষ্টায় তাঁরা ভাইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘উনি যদি সাহায্য না করতেন, তা হলে আজীবন আমাদের অপেক্ষা করতে হত। সুষমা যে ভাবে আমাদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন, তা ভোলার নয়।’’ পরিজনের খোঁজে ন’দশ বার প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। গুরপিন্দ্রের কথায়, ‘‘খুব সহজেই ওঁর সঙ্গে দেখা করা যেত।’’
ইরাকে আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন ৪৬ জন ভারতীয় নার্স। তাঁর সকলেই কেরলের বাসিন্দা। তাঁদের দেশে ফেরাতে সুষমার উদ্যোগের কথা আজ মনে করিয়ে দিয়েছেন কেরলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা ওমেন চান্ডি। জানিয়েছেন, নার্সদের বিষয়ে খোঁজখবরের জন্য তিনি মধ্যরাতেও ফোন করেছিলেন সুষমাকে। বন্দি নার্সদের মধ্যে অন্যতম মেরিনা। শোকাহত মেরিনা বলছেন, ‘‘সুষমাজি কখনও বিপন্নের ধর্ম বা রাজনৈতিক পরিচয় দেখতেন না। তাঁর কাছে সকলেই ছিল ভারতীয়।’’
২০০৩ সালে কেরলের একটি গ্রামে দু’টি এডস আক্রান্ত শিশুকে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, অন্য পড়ুয়াদের মধ্যেও ওই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সুষমা। ওই গ্রামে গিয়ে তিনি ওই শিশু দু’টিকে জড়িয়ে ধরেছিলেন এবং ছবিও তোলেন। উদ্দেশ্য, এডস সম্পর্কে কুসংস্কার দূর করা। সুষমার মৃত্যু সংবাদের পর কেরলে একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ওই ছবিটি। ওই শিশুদের ৭০ বছরের ঠাকুমা আজ জানিয়েছেন, তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁদের বাড়িতে আসার পর শিশুদের জীবনটাই পাল্টে গিয়েছিল।
সুষমাকে ‘বল্লারি মা’ বলে অভিহিত করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ১৯৯৯ সালে বল্লারি থেকে সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিলেন প্রয়াত বিদেশমন্ত্রী। সে বার ৫০ হাজার ভোটে পরাজিত হলেও বল্লারির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কখনওই ছিন্ন হয়নি।
চলতি বছরেই নষ্ট হয়ে যাওয়া পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণের কারণে মস্কো বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছিল অভিনেতা কর্ণবীর ভোরাকে। তখন তাঁকে সাহায্য করেছিলেন সুষমা। আজ সুষমার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ভোরার টুইট, ‘‘তাঁর (সুষমা) জন্যই বিদেশে কোনও ভারতীয় অসুবিধার মধ্যেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেননি।’’
সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করেও যে মানুষের উপকার করা যায়, সেই পথ সম্ভবত প্রথম দেখিয়েছেন সুষমাই। রাজনীতিক, প্রশাসকের ভূমিকা ছাপিয়ে তিনি সকলের ‘কাছের মানুষ’ হয়ে উঠেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy