মনসুখ হিরেন এবং (ডান দিকে) ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ সচিন ভাজ। ছবি: সংগৃহীত।
মহারাষ্ট্র পুলিশের ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ সচিন ভাজ খুন করেছেন মনসুখ হিরেনকে। পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করে এফআইআর দায়ের করলেন মুকেশ অম্বানীর বাড়ির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক ভর্তি পরিত্যক্ত গাড়ির ‘মালিক’-এর স্ত্রী বিমলা হিরেন।
এই অভিযোগের পর গোটা ঘটনা নিয়ে আসরে নেমেছে বিজেপি। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ভাজের গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস।
৫ মার্চ ঠাণের একটি খাঁড়ি থেকে মনসুখের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ঠাণে পুলিশ প্রথমে একে আত্মহত্যার ঘটনা বলে দাবি করলেও পরে জানায়, মনসুখকে খুন করা হয়েছে। যদিও কী কারণে মনসুখকে খুন করা হল, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি পুলিশ। মঙ্গলবার বিখরোলি থানায় নিজের এফআইআরে বিমলার দাবি, ‘আমার স্বামী ভাল সাঁতার কাটতে পারতেন। তিনি খাঁড়িতে ডুবে যেতে পারেন না। তা ছাড়া, তাঁর দেহ উদ্ধারের সময় মোবাইল, সোনার চেন এবং ঘড়ি পাওয়া যায়নি। গোটা ঘটনা দেখে আমার মনে হচ্ছে, তাঁকে খুন করা হয়েছে। আমার সন্দেহ, ভাজই ওঁকে খুন করেছেন’।
পুলিশের কাছে ৫ মার্চের আগে পর্যন্ত তাঁর স্বামীর গতিবিধিরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন বিমলা। বিমলার দাবি, বিস্ফোরক ভর্তি যে স্করপিওটি মুকেশের বা়ড়ির কাছে উদ্ধার হয়েছে, সেটি আসলে স্যাম পিটার নিউটন বলে এক ব্যক্তির। ৩ বছর ধরেই তা মুনসুখের কাছে ছিল। বিমলার আরও দাবি, ওই স্করপিওটি গত নভেম্বরে ভাজকে দিয়েছিলেন মনসুখ। গা়ড়ির যন্ত্রাংশের কারবারি মনসুখের নিয়মিত কাস্টমার ছিলেন ভাজ। বিমলার কথায়, ‘‘৫ ফেব্রুয়ারি ওই স্করপিওর স্টিয়ারিং সমস্যা নিয়ে ভাজ আমাদের দোকানে এসেছিলেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি গাড়িটি নিয়ে মনসুখ মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। তবে স্টিয়ারিং আটকে যাওয়ায় মুম্বইয়ের মুলুন্ড এলাকার টোল প্লাজায় তা রেখেই ফিরে আসেন। পরের দিন সেখানে ওই গাড়িটি পাওয়া যায়নি।’’
বিমলা জানিয়েছেন, স্করপিও চুরি যাওয়ার কথা বিখরোলি থানার জানিয়ে এফআইআর করেছিলেন মনসুখ। তাঁর কথায়, ‘‘২৫ ফেব্রুয়ারি ওই স্করপিওটি মুকেশ অম্বানীর বাড়ি ‘অ্যান্টিলা’র কাছে উদ্ধার হয়। এর পর বিখরোলির সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস) আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। আমার স্বামী ওই গাড়িটি চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি গাড়ি চুরির ঘটনার কথাও এটিএস-কে জানিয়েছিলেন। এমনকি, এফআইআরের কপিও দেখিয়েছিলেন।’’
মনসুখের খুনি হিসাবে ভাজের নাম করার কারণও পুলিশকে জানিয়েছেন বিমলা। তাঁর দাবি, ‘‘মুকেশের বাড়ির কাছ থেকে গাড়ি উদ্ধারের পর ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২ মার্চ ভাজের সঙ্গে ছিলেন মুনসুখ। ২ মার্চ মনসুখ আমাকে জানিয়েছিল যে ভাজ তাঁকে পুলিশি হেনস্থার করার অভিযোগ দায়ের করতে বলে। ভাজের পরামর্শ মতো পুলিশি এবং সংবাদমাধ্যমের হেনস্থার অভিযোগ জানিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ এবং মুম্বই এবং ঠাণের পুলিশ কমিশনার যথাক্রমে পরমবীর সিংহ এবং বিবেক ফানসারকরকে চিঠি লিখেছিলেন তিনি। সে সময় মনসুখকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পুলিশ কি তাঁর উপর অত্যাচার করেছে? তবে তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন।’’
পুলিশের কাছে বয়ানে বিমলার জানিয়েছেন যে মুকেশ-কাণ্ডে মনসুখকে আগাম জামিনের আবেদন করার পরামর্শও দিয়েছিলেন ভাজ। জামিনের ব্যবস্থাও ভাজ করে দিতেন বলে দাবি করেছিলেন ওই পুলিশ আধিকারিক। মনসুখ নিজেই এ কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন বলে দাবি বিমলার। বিমলার কথায়, ‘‘৪ মার্চ আগাম জামিনের জন্য আইনজীবীর সঙ্গে আমাকে কথা বলতে বলে মনসুখ। তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছিলেন আমার স্বামী। তবে আইনজীবী জানিয়েছিলেন, মুকেশ-কাণ্ডে অভিযুক্ত নন বলে আদালতে মনসুখের আগাম জামিন গ্রাহ্য হবে না।’’
বিমলার দাবি, ৪ মার্চ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তাঁর স্বামীকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন তিনি। সে সময় গোটা বিষয়ে পরামর্শ নিতে তাওড়ে নামে কান্দিভালি ক্রাইম ব্রাঞ্চের এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মনসুখ। পরের দিন ঠাণের খাঁড়ি থেকে মনসুখের দেহ পাওয়া যায়। ঠাণে পুলিশ জানিয়েছে, দেহ উদ্ধারের সময় অত্যন্ত ৫টি রুমাল দিয়ে মনসুখের মুখ বাঁধা ছিল।
গোটা ঘটনায় রাজনীতির রং চড়তে শুরু করেছে। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিমলার এফআইআরের একটি প্রতিলিপি নিয়ে ভাজের গ্রেফতারির দাবি করেছেন ফডণবীস। তিনি বলেন, ‘‘সচিন ভাজকে শাস্তি দেওয়া উচিত। আপনারা তাঁকে প্রমাণ নষ্টের সুযোগ করে দিচ্ছেন। ভাজকে বরখাস্ত করা উচিত।’’ ভাজ একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন বলেও ইঙ্গিত দিয়ে ফডণবীসের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশে তাঁকে রাখা বা হল কী করে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy