প্রতীকী ছবি।
বিদ্যুৎ তৈরি ও পরিষেবা দেওয়ার খরচ বাড়লেও ভোটের রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় রাজ্যে রাজ্যে তার মাসুল বাড়ে না বলে অভিযোগ কেন্দ্রের। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারগুলির অলিখিত আপত্তিতে রাজ্যের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন মাসুল বাড়াতে পারে না। ফলে বণ্টন সংস্থাগুলির লোকসান বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে দেনার বোঝা। অর্থের অভাবে বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করতে না-পারায় লোডশেডিংও করতে হয়। ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলে, তার ছিঁড়ে পড়লে ঠিক সময়ে সারানো হয় না।
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই ব্যবস্থাটাই ভেঙে রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলিকে স্বাবলম্বী করতে এ বার বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রের প্রস্তাব, বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিদ্যুতের মাসুল ঠিক করবে কয়লার দাম বা বিদ্যুৎ তৈরির খরচ মেনে। সেখানে রাজ্য সরকার ছড়ি ঘোরাতে পারবে না। তবে রাজ্য চাইলে যাকে খুশি ভর্তুকি দিতে পারে। তবে তা সরাসরি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে। এখন রাজ্য সরকারের অধীন বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির থেকে বেশি মাসুল আদায় করে। মধ্যবিত্ত, গরিব, চাষিদের থেকে কম মাসুল নেওয়া হয়। কেন্দ্রের প্রস্তাব, এই ‘ক্রস সাবসিডি’ তুলে দেওয়া। পাশাপাশি, এই বিলে বণ্টন সংস্থাগুলিকে চাহিদার কিছুটা অপ্রচলিত বিদ্যুৎ কেনাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিলের খসড়া দেখেই রাজ্যগুলি আপত্তি তুলেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। কিন্তু কেন্দ্র নিজের হাতে সব ক্ষমতা নিতে চাইছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ। অন্য মুখ্যমন্ত্রীদেরও আপত্তি রয়েছে। মমতা এই বিলকে জনবিরোধী, কৃষক-বিরোধী আখ্যা দিয়েছেন। ‘অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশন’-এর মুখপাত্র ভি কে গুপ্তর দাবি, এই বিল পাশ হলে চাষিদের মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি বিল আসবে। গৃহস্থকে প্রতি ইউনিটে ৮ থেকে ১০ টাকা মাসুল দিতে হবে।
আরও পড়ুন: গৃহ-নিভৃতবাসের নয়া নিয়ম কেন্দ্রের
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিংহের পাল্টা দাবি, ‘‘রাজ্যের কোনও ক্ষমতাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সদস্য, চেয়ারপার্সন নিয়োগের ক্ষমতাও কেন্দ্র নিজের হাতে রাখছে না। রাজ্যই নিয়োগ করবে।’’ বিলের খসড়া নিয়ে আগামিকাল, শুক্রবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করবেন তিনি।
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাছাই কমিটিতেও কেন্দ্র ও রাজ্যের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে। শুধু অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতির বদলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বাছাই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিবার বাছাইয়ের জন্য আলাদা কমিটি তৈরির বদলে একটিই স্থায়ী কমিটি থাকবে। কেন্দ্রের লক্ষ্য, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলিকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো। কারণ, লোকসান কমলে আখেরে মাসুলও কমবে। বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরাও এই যুক্তি মানছেন। তাঁদের অনেকের মতে, বণ্টন সংস্থাগুলি তাদের অপেশাদারিত্ব ও বিভিন্ন ক্ষতির বহর গ্রাহকদের মাসুল থেকে তোলার চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন: ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ত্রাণের টাকা পাননি, পুলিশে অভিযোগ ৪০ হাজার
রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক অবস্থা কেমন? সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-র এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির কাছে উৎপাদন সংস্থাগুলির পাওনা ১.২৩ লক্ষ কোটি টাকা। এক বছরে যা ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। লকডাউনের ফলে ঠিক সময়ে বিল আদায় না-হওয়ায়, বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায়, লোকসান আরও বেড়েছে। বণিকসভা সিআইআই-এর দাবি, প্রাথমিক ভাবে সহজে ঋণের বন্দোবস্ত করা হোক। লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে শিল্প ও ব্যবসায় বিদ্যুতের মাসুল কমানো হোক। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বণ্টন সংস্থাগুলিকে লাভজনক করে তুলতে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার করা জরুরি। ক্রেডিট রেটিং সংস্থা আইসিআরএ-রও মতে, বিদ্যুৎ আইনে সংশোধন হলে বণ্টন সংস্থাগুলিই স্বাবলম্বী হবে।
কিন্তু অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স ফেডারেশনের চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র দুবের অভিযোগ, কেন্দ্র বিদ্যুৎক্ষেত্রের পুরো বেসরকারিকরণ চাইছে। এই বিলে বণ্টন সংস্থাগুলিকে ফ্র্যাঞ্চাইজি বা সাব-লাইসেন্সের মাধ্যমে বেসরকারিকরণ করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা চাইলে কোনও এলাকায় বিদ্যুৎ বণ্টনের দায়িত্ব কোনও বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে দিতে পারে। ইলেকট্রিসিটি এমপ্লয়িজ ফেডারেশন-এর অভিযোগ, কিছু বেসরকারি সংস্থা মুনাফার লোভে বিদ্যুৎক্ষেত্রে ঢুকতে চাইছে। কেন্দ্র তাদের স্বার্থে বিদ্যুতের মাসুলের উপর সব নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে, বেসরকারিকরণের রাস্তা তৈরি করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy