Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Harsh Mandar

Harsh Mander: গুজরাত দাঙ্গার পর খোলা চিঠি লিখে ইস্তফা দেন, ইডি হানা দিল সেই আইএএস-এর অনাথ আশ্রমে

গুজরাত দাঙ্গার মুখ হিসেবে যাঁর পরিচিতি, সেই অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই আমলে একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ করা হয়েছে হর্ষ মন্দারের সম্প্রীতির কর্মসূচিকে।

হর্ষ মন্দার। ছবি সংগৃহীত।

হর্ষ মন্দার। ছবি সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

আইএএস হিসেবে তিনি প্রায় দু’দশক মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে কাজ করে ২০০২-এ গুজরাত দাঙ্গার পরে, জাতির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখে ইস্তফা দিয়েছিলেন সেই চাকরি থেকে। প্রশাসনিক প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় দাঙ্গার নামে পরিকল্পিত সংখ্যালঘু নিধনের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি সেই চিঠিতে। তিনি হর্ষ মন্দার। ইস্তফার পরে মানবাধিকার-কর্মী হিসেবে শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আলোকশিখা নিয়ে দাঙ্গা বিধ্বস্ত অঞ্চলে শুরু করেন ভালবাসা বিতরণের কর্মসূচি— কারওয়ান-এ-মহব্বত। দাঙ্গায় পরিবার হারানো শিশুদের দেখভালের কাজ শুরু করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ছত্রছায়ায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য দিল্লিতে পৃথক দু’টি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রায় সারাটা দিন সেই দুই আশ্রয়কেন্দ্র এবং বসন্ত কুঞ্জ এলাকায় মন্দারের বাসভবনে তল্লাশি চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
গুজরাত দাঙ্গায় যে প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মন্দার, তার মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী।

গুজরাত দাঙ্গার মুখ হিসেবে যাঁর পরিচিতি, সেই অমিত শাহ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই আমলে একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ করা হয়েছে হর্ষ মন্দারের সম্প্রীতির কর্মসূচিকে। কখনও জাতীয় শিশু অধিকার কমিশনকে দিয়ে মন্দারের পরিচালিত অনাথালয়ে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ তোলানো হয়েছে, কখনও অমিত শাহের পরিচালনাধীন দিল্লি পুলিশ মন্দার ও তাঁর দুই অনাথ আশ্রমে অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেছে। মন্দার বরাবর এই সব অভিযোগকে মনগড়া ও ভাবমূর্তি নষ্টের চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। সম্প্রতি বার্লিনের রবার্ট বশ অ্যাকাডেমির ফেলোশিপ পেয়ে ছ’মাসের জন্য জার্মানি গিয়েছেন সস্ত্রীক মন্দার। তার পরেই এ দিন সকালে তাঁর বাসভবন ও দুই শিশু নিবাসে একযোগে হানা দেয় ইডি। তাঁর বাসভবনে তখন হর্ষের মেয়ে ও জামাই ছিলেন। এক রকম জোর করেই বাড়িতে ঢুকে তল্লাশির নামে সব কিছু ওলটপালট করে ইডি-র লোকেরা। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কয়েক জন অফিসার নিরাসক্ত মুখে বসে নির্দেশ দিচ্ছেন। একই ভাবে ছেলেদের আশ্রয়কেন্দ্র ‘উম্মিদ-আমন ঘর’ এবং মেয়েদের অনাথাশ্রম ‘খুশি-রেনবো হোম’-এও তল্লাশি করেছে ইডি।

কংগ্রেসের পক্ষে মন্দারের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের এই অভিযানের নিন্দা করেছেন দিগ্বিজয় সিংহ। মধ্যপ্রদেশের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যেরই আইএএস ক্যাডার ছিলেন হর্ষ মন্দার। টুইটে দিগ্বিজয় লিখেছেন, ‘৪০ বছর ধরে হর্ষ মন্দারকে চিনি। যে কয়েক জন সৎ এবং কর্তব্যনিষ্ঠ আইএএস-কে দেখেছি, তাঁদের এক জন ছিলেন হর্ষ। গরিব ও পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি বরাবর তিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযানের কঠোর নিন্দা করছি।’

তাঁকে হেনস্থার উদ্দেশ্যে এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে হর্ষ মন্দারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ৬০০ জন সমাজ কর্মী ও বিশিষ্ট জন। তাঁরা একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার কর্মী, শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য কাজ করে যাওয়া হর্ষ মন্দার সততা ও ন্যায়পরায়ণতার এক উদাহরণ। হেনস্থা ও ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে যে ইডি-র তল্লাশি করা হল, আমরা তার কঠোর নিন্দা করি।’ এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকার নেত্রী অরুণা রায়, যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য সৈয়দা হামিদ, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ, প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ, অধ্যাপক অপূর্বানন্দ, সমানাধিকার কর্মী কবিতা কৃষ্ণন এবং অ্যানি রাজা প্রমুখ।

অন্য বিষয়গুলি:

Harsh Mandar Enforcement Directorate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE