সোরিয়াসিসের ইঞ্জেকশন ‘ইটোলিজুমাব’ও এ বার ব্যবহার করা যাবে কোভিড রোগীদের সারিয়ে তুলতে। -ফাইল ছবি।
ত্বকের রোগ ‘সোরিয়াসিস’ সারাতে যে ওষুধের চল রয়েছে, সেই ‘ইটোলিজুমাব’ ইঞ্জেকশন কোভিড রোগীদেরও দেওয়া যেতে পারে। যদি সেই কোভিড রোগীরা মাঝারি থেকে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগেন। কোভিড রোগীদের জন্য এ বার এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিল দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যদিও কলকাতার চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, প্রদাহ কমানো ছাড়া এই দামি ওষুধে বিশেষ কোনও কাজ হবে না।
কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলার ভি জি সোমানি জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েই এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে। আর সেটাও করতে হবে কোভিড রোগীরা সঙ্কটজনক অবস্থায় পৌঁছলে।
তিনি জানিয়েছেন, তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ‘জরুরি অবস্থায় এই ওষুধের পরিমিত ব্যবহার’ করা যেতে পারে।
যদিও কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় সোরিয়াসিসের ইঞ্জেকশন ব্যবহার নিয়ে কলকাতার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের একাংশ কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করছেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘এই ওষুধটি নির্দিষ্ট ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না। শুধু কোভিড শরীরে ঢুকলে যে মাত্রাহীন প্রদাহ (‘ইনফ্ল্যামেশন’) তৈরি হয়, তা কিছুটা কমিয়ে দেবে। তবে এই ওষুধের দাম অনেক। এতে কোভিড চিকিৎসা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।’’
অরিন্দম এও জানিয়েছেন, একটা করে নতুন ওষুধ বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়ছে বই কমছে না। এখনও কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি, কোন ওষুধ এই ভাইরাসকে পুরোপুরি বধ করতে পারবে। চিকিৎসক, বিজ্ঞানী সকলেই দিশেহারা। যে কয়েকটা ওষুধ বাজারে আনা হয়েছে তা হয়তো কিছুটা কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই সবই একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন ওষুধ আসুক। মানুষের কল্যাণে একাধিক ওষুধ আসলেও কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থে কোনও ওষুধের ব্যবহার হবে আর সাধারণ মানুষের অর্থনাশ হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
কোভিড রোগীদের সারিয়ে তুলতে এখন প্রায় প্রতি দিনই নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা। যত দিন না নতুন ওষুধ বা টিকা বাজারে আসছে, তত দিন অন্যান্য রোগ ও সংক্রামক ব্যাধি সারানোর চালু ওষুধগুলিকে কোভিড রোগীদের উপর পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা চলছে। দেখার চেষ্টা হচ্ছে, ওই সব ওষুধে কোভিড রোগীরা সেরে উঠছেন কি না বা কতটা সেরে উঠছেন।
এ বার সেই তালিকায় জুড়ল সোরিয়াসিসের ইঞ্জেকশন ইটোলিজুমাবের নামও। বায়োকন সংস্থার অনুমোদিত ওই ড্রাগটি প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল সোমানি।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯-এ মধ্যবয়সিদের মৃত্যুহারে উদ্বেগ
আরও পড়ুন: ‘সংঘর্ষে’ নিহত উত্তরপ্রদেশের বাহুবলী বিকাশ, হুবহু মিলে গেল ‘ভবিষ্যদ্বাণী’
এক জন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ রোগীর উপর এটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সাফল্য মেলার পরেই এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাইটোকিন রিলিজ সিন্ড্রোমের চিকিৎসার জন্য এই ওষুধের ব্যবহার সন্তোষজনক ফল দিয়েছে বলে জানিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)’-এর পালমনোলোজিস্ট, ফার্মাকোলজিস্ট এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরেই সোরিয়াসিসের চিকিৎসার জন্য বায়োকনের তৈরি এই ওষুধটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কোভিড রোগীদের উপর এই ওষুধটি প্রয়োগের আগে চিকিৎসকদের প্রতিটি রোগীর থেকে লিখিত সম্মতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy