দিল্লির এক সরকারি স্কুলে খুদে পড়ুয়ার সঙ্গে মেলানিয়া ট্রাম্প। ছবি: পিটিআই
‘‘আপ কহাঁসে আয়ি হ্যায়? আপ ক্যায়া করতি হো?’’
কপালে চন্দনের ফোঁটা। গলায় গাঁদার মালা। সে সব নিয়ে গুছিয়ে ক্লাসে বসতে না বসতেই কচি গলায় উড়ে আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন। তা-ও আবার হিন্দিতে। দিল্লির নানকপুরার সর্বোদয় সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের এক্কেবারে খুদেদের ক্লাসে ঢুকতেই যে এমন সব ‘কঠিন’ প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে, তা হয়তো ভাবতে পারেননি মেলানিয়া ট্রাম্প। উদ্ধারকর্তা হয়ে এলেন দোভাষী। প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন ফার্স্ট লেডি!
আড়ষ্টতা ভাঙতে সময় লাগল কয়েক মিনিটই। তার পরেই তিন-চার বছরের শিশুদের সঙ্গে মিশে গেলেন মেলানিয়া। স্কুলের শিক্ষিকা তৃপ্তি বালা বলেন, ‘‘শিশুদের তিন রকমের খেলনা দেওয়া হয়েছিল। মাটি দিয়ে মূর্তি বানানো, ব্লক দিয়ে বাড়ি বানানো আর রং দিয়ে কারুকার্য করা। ঘুরে ঘুরে তিন ধরনের ক্লাস ওয়ার্কে অংশ নেন মেলানিয়া। উত্তর দেন শিশুদের সব প্রশ্নের।’’ শুরুতেই কপিল নামে যে শিশুটি মেলানিয়াকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছিল, তাঁকেও কোলে নিয়ে আদর করে দেন ট্রাম্প-ঘরণী।
আরও পড়ুন: নতুন উচ্চতায় সম্পর্ক, দাবি মোদী-ট্রাম্পের
এ দিন বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ সর্বোদয় স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ায় ফ্লোটাস (ফাস্ট লেডি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস)-এর গাড়ি। ভোর থেকেই গোটা স্কুল ও স্থানীয় এলাকার দখল নিয়ে নেন সিক্রেট সার্ভিস ও দেশীয় গোয়েন্দারা। কার্ড ছাড়া স্কুলের একশো মিটার বৃত্তে আনাগোনায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। স্কুলে পৌঁছনোর রাস্তাতেই ভারত-আমেরিকার পতাকা নিয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল স্কুলের বাচ্চারা। মেলানিয়া গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে প্রথমে তিলক পরিয়ে মালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় একেবারে ছোট্ট পড়ুয়ারা। পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে।
আনন্দ পাঠ্যক্রম কী?
• ২০১৮ সালের বিশ্ব সুখ রিপোর্টে ১৫৫টি দেশের মধ্যে ভারত ছিল ১৩৩তম। সে কথা উল্লেখ করে পাঠ্যক্রমে ভাষা, অঙ্ক, ছাড়াও পড়ুয়াদের ভাল থাকার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, ফলে তারা যাতে সহমর্মী, সচেতন নাগরিক হিসেবে তৈরি হয়, তা দেখাও স্কুলের লক্ষ্য।
কী ভাবে রূপায়ণ
• নার্সারি-কেজি ৪৫ মিনিট
করে ক্লাস, সপ্তাহে দু’বার। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় থেকে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি, এমন তিনটি গ্রুপে ক্লাস হয়।
• শেখানো হয়—মনোযোগ বাড়ানো, সচেতনতা বাড়ানো, গতানুগতিক ভাবনার বাইরে ভাবতে শেখা, প্রশ্ন করা, সহমর্মী হতে শেখা, পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ রক্ষা। আত্মবিশ্বাসী মানুষ তৈরি করা
• এ জন্য কোনও পরীক্ষা হয় না
প্রথমে নার্সারি ক্লাস। তার পর মেলানিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় স্কুলের মাঠে। সেখানে তখন চলছে সূর্য নমস্কারের পালা। তা সাঙ্গ হতে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে পঞ্চম শ্রেণির ‘হ্যাপিনেস ক্লাস’-এ অংশ নিতে যান মেলানিয়া। মূলত যে ক্লাসের কারণেই মেলানিয়ার আজকের ওই স্কুল সফর। শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার আনা অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার দেড় বছর আগে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক অবসাদ দূর করতে সরকারি স্কুলগুলিতে ওই হ্যাপিনেস ক্লাস-এর কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে ওই ক্লাসে নিয়মিত ভাবে পথনাটিকা, গল্প বলা, বিতর্কের মতো অনুষ্ঠান করার সুযোগ যেমন পড়ুয়াদের রয়েছে, তেমনি উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত ধ্যান করার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। থাকছে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের পাঠও। ক্লাসের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ মেলানিয়া বলেন, ‘‘হ্যাপিনেস ক্লাসের মূল থিম হল সকলের উন্নতি। শ্রেণিকক্ষে বসে এক অপরকে গল্প বলা, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা অনুসরণীয়।’’ মেলানিয়াকে ভাঙড়া ও রাজস্থানি নৃত্য গিড্ডা নেচে দেখান যথাক্রমে জনকপুরি বি ব্লক ও পূর্ব দিল্লির এস কে ভি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। মেলানিয়াকে উপহার হিসাবে পড়ুয়াদের আঁকা তিনটি মধুবনী চিত্র উপহার দেওয়া হয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক স্কুলে থেকে আমেরিকান দূতাবাসের উদ্দেশে রওনা দেন মেলানিয়া। তত ক্ষণে তিনি যেন স্কুলেরই একজন! শিক্ষিকা পূজা যাদব বলেন, ‘‘উনি চলে যাচ্ছেন দেখে অনেক ছাত্রীই তাঁকে এসে জড়িয়ে ধরে। প্রোটোকল, নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে কাউকেই হতাশ করেননি ফার্স্ট লেডি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy