Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Ladakh

গোগরাতেও কি জমি হারাল ভারত, বিতর্ক

সংঘর্ষের আগে প্যাংগং লেকের পেট্রোলিং পয়েন্ট-৮ পর্যন্ত টহল দিতে পারত ভারতীয় সেনা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই সীমানা হয়ে দাঁড়ায় পেট্রোলিং পয়েন্ট-৫।

এলএসিতে ভারতীয় সেনা। ফাইল চিত্র।

এলএসিতে ভারতীয় সেনা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১৪
Share: Save:

পূর্ব লাদাখের গোগরা ও হট স্প্রিং (পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৫) এলাকা থেকে সোমবার সেনা পিছিয়ে আনা শেষ করেছে ভারত ও চিন। কিন্তু বিরোধীরা তো বটেই, বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যন স্বামীও অভিযোগ তুলেছেন, চিনের চাপে নিজের এলাকা ছেড়ে পিছিয়ে এসে নিজের জমিতেই ‘বাফার জ়োন’ তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে ভারত। স্বামীর কথায়, ‘‘চিন বুঝিয়ে দিয়েছে, যা আমার সে তো আমারই। যা তোমার তা-ও আমার।’’

প্রায় দু’বছর আগে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে দীর্ঘ সময় ধরে সীমান্তে চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ছিল দু’দেশের সেনা। পরবর্তী সময়ে দু’দেশের সেনা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে একাধিক বৈঠকের পরে বিভিন্ন স্থানে সেনা পিছিয়ে আনতে রাজি হয় উভয় পক্ষ। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে ভারত। যেমন, সংঘর্ষের আগে প্যাংগং লেকের পেট্রোলিং পয়েন্ট-৮ পর্যন্ত টহল দিতে পারত ভারতীয় সেনা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই সীমানা হয়ে দাঁড়ায় পেট্রোলিং পয়েন্ট-৫। যার ফলে বাকি অংশে নজরদারির অধিকার হারায় ভারত।

গত সপ্তাহে যে সেনা পিছোনোর প্রশ্নে দু’দেশ রাজি হয়েছে, তাতেও ভারত বেজিংয়ের চাপে নিজের জমি ছেড়েছে বলে অভিযোগে সরব হয়েছেন লাদাখ অটোনোমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এলএএইচডিসি)-এর কাউন্সিলর কনচখ স্টানজিং। তাঁর দাবি, ভারতীয় সেনার এই পশ্চাদপসরণের ফলে দেশের সীমানায় থাকা কুগ্র্যাং উপত্যকা আগামী দিনে বিতর্কিত এলাকা হিসেবে গণ্য হবে। যদিও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দাবি, ‘‘সম্প্রতি দু’দেশ সেনা পিছিয়ে আনায় সীমান্তে আরও একটি সমস্যা কমল।’’

লাদাখে ভারত-চিনের সীমান্ত এলাকা চুশুল থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর স্টানজিংয়ের অবশ্য বক্তব্য, ভারত কেবল পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৫ থেকে নয়, করম সিংহ পাহাড়ে থাকা পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৬ থেকেও পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা-সহ ভারতের দিকে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকা বাফার জ়োনে পরিণত হয়েছে। এর জেরে পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৬-র উপরে দীর্ঘদিনের নিয়ন্ত্রণ ভারত হারাবে বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। স্টানজিংয়ের দাবি, ‘‘সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ভারতের দিকে থাকা কুগ্র্যাং উপত্যকার বড় অংশ বাফার জ়োনে পরিণত হবে। স্থানীয় পশুপালকদের চারণভূমি হিসেবে ওই উপত্যকা ব্যবহার হত। কিন্তু স্থানীয় মানুষের আবেগকে কে আর পাত্তা দেয়!’’ সুব্রহ্মণ্যন স্বামীর কথায়, ‘‘চিন আসলে ভারতীয় জমি থেকে সরে গিয়েছে। আর ভারত নিজের জমিতেই (সীমান্ত থেকে) পিছিয়ে এসেছে।’’

আগামিকাল থেকে উজ়বেকিস্তানে শুরু হচ্ছে এসসিও বৈঠক। সেখানে এক মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ওই বৈঠকের ঠিক আগে সীমান্তে দু’তরফের সেনা পিছিয়ে আনা দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে পার্শ্ববৈঠকের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

কিন্তু সত্যিই কি ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ানে হওয়া সংঘর্ষের আগে দু’দেশের সেনা যে যেখানে ছিল, সেখানেই ফিরে গিয়েছে— প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর প্রশ্ন, ‘‘চিন ইতিমধ্যেই সংঘর্ষের আগের স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে আপত্তি জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তো লড়াই না করেই ভারতের প্রায় হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি চিনের হাতে তুলে দিয়েছেন। কী ভাবে সেই জমি ফিরে পাওয়া যাবে, তা কি কেন্দ্র ব্যাখ্যা করবে?’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের প্রশ্ন, ‘‘এখন ডেপসাং উপত্যকায় ওয়াই জংশনের কাছে চিনা সেনা বসে রয়েছে। সেগুলি কবে উদ্ধার হবে? কবে পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪, ১৫ ও ১৭-তে ফের নজরদারি করতে পারবে ভারত?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ladakh China Indo china clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy