Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ওভারওয়ার্কড’, এমসের ডাক্তারেরা আন্দোলনে

জুনের শুরুতেই সরকারি হাসপাতালে কাজের এই অবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়েছিল ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’(এমস)-এর রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠন। নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘আই অ্যাম ওভারওয়ার্কড’ (‘অতিরিক্ত কাজের বোঝায় আমি বিধ্বস্ত)।

এমসে প্রতিবাদ ডাক্তারদের। ছবি: পিটিআই।

এমসে প্রতিবাদ ডাক্তারদের। ছবি: পিটিআই।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

টানা ১৪-১৫ ঘণ্টা, কখনও কখনও ২২ ঘণ্টার শিফট! কোনও বিরতি নেই। শুধু ওয়ার্ড, ইমার্জেন্সি ও আউটডোরে উপচে পড়া অগণিত রোগী রয়েছে।

জুনের শুরুতেই সরকারি হাসপাতালে কাজের এই অবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়েছিল ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’(এমস)-এর রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠন। নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘আই অ্যাম ওভারওয়ার্কড’ (‘অতিরিক্ত কাজের বোঝায় আমি বিধ্বস্ত)। গোটা দেশে সব সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে তা ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে চিঠি লেখার পর সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডিনদের চিঠি লেখার তোড়জোড় যখন চলছে, তখনই কলকাতায় এনআরএস কাণ্ডটি ঘটে। ঠিক যে বিষয়টি নিয়ে এমসের রেসিডেন্ট ডাক্তারেরা সরব হয়েছিলেন, সেই অস্বাভাবিক কাজের চাপ ও হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাবকেই যথাযথ পরিষেবা ও চিকিৎসক-রোগী সুসম্পর্কের পথে প্রধান অন্তরায় বলে চিহ্নিত করেছেন এ রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। এমস-এর রেসিডেন্ট ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের সদ্য প্রাক্তন সভাপতি হরজিৎ সিং ভাট্টি শুক্রবার ফোনে বলেন, ‘‘এ বার ‘আই অ্যাম ওভারওয়ার্কড’ নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হচ্ছে। দিল্লি এমস ও সফদরজঙ্গ হাসপাতালের চিকিৎসক মিলিয়ে আমরা ৮ জন বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে দেখা করেছি।’’ যদিও হর্ষ বর্ধন ফোনে বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি নিয়ে আমরা বেশি চিন্তিত। তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তাঁদের কাজের চাপ কী করে কমানো যায়, সে ব্যাপারে পরে ভাবনাচিন্তা করব।’’

ভাট্টি বলেন, ‘‘আমাদের দিনরাত কী মারাত্মক চাপের মধ্যে মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো গুরুদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, তা আগে সরকার ও সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। তবেই হয়তো সরকার কিছু ব্যবস্থা নেবে আর সাধারণ মানুষ চিকিৎসকের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন।’’ এর জন্য দেশের সব সরকারি হাসপাতালে রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা (এঁদের মধ্যে পিজিটি, হাউজস্টাফ, আরএমও-রা রয়েছেন) কোনও ধর্মঘট বা কর্মবিরতির পথে প্রথমেই হাঁটবেন না। তাঁরা ‘আই অ্যাম ওভারওয়ার্কড’ লেখা ব্যাজ পরে পরিষেবা দেবেন। মন্ত্রীদের এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও ডিনদের চিঠি দেওয়া হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হবে এবং চিকিৎসকদের খোলাখুলি নিজেদের অভিজ্ঞতা জানাতে বলা হবে। তাতেও কাজ না হলে পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করা হবে বলে ভাট্টি জানান।

এমস-এর রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি অমরেন্দ্র মালহি ফোনে বলেন, ‘‘গত বছর জুনে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানে জানানো হয় যে, দেশে ১১০৮২ জন পিছু এক জন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক রয়েছেন। আমেরিকায় যেখানে এক জন চিকিৎসক দিনে ৭টি স্ক্যান করেন, সেখানে আমাদের এক জনকে এমসেই ১২৫টা স্ক্যান করতে হয়। প্রতিদিন এই চাপে কতটা মাথা ঠান্ডা রাখা বা উচ্চ মানের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব? গত বছর কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এমসেই ৫ জন জুনিয়র ডাক্তারকে মনোরোগ বিভাগে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’’

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ডাক্তারি আর পাঁচটি পেশার মতো নয় জেনেই তো চিকিৎসকেরা এই পেশা বেছেছেন। সেখানে কাজের চাপ রয়েছে বলে রোগীকে তাঁরা কেন ফেলে রাখবেন? বা বিনা কারণে মরণাপন্নকে অন্যত্র রেফার করবেন? এমসের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের আর এক প্রাক্তন সভাপতি বিজয় গুজ্জর-এর কথায়, ‘‘কোনও চিকিৎসক ইচ্ছে করে এটা করেন না। এক জন জুনিয়র ডাক্তারকে যখন হাজার রোগী সামলাতে হয়, তাঁর পক্ষে প্রত্যেককে ঠিক করে দেখা বা মাথা ঠান্ডা রাখা সম্ভব নয়। তাতে রোগীদেরও ধৈর্যচ্যুতি হয়।’’ তাঁরা জানান, দেশে ‘সেন্ট্রাল রেসিডেন্সি স্কিম’-এ জুনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ডিউটির সময় বেঁধে দেওয়া এবং সপ্তাহে এক দিন ছুটির কথা রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর তা চালু হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

AIIMS Overworked Doctors Strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy