Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

জাত-পাতের অঙ্ক কষেছেন মোদী, নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে ক্ষোভ দলের অন্দরেই

মন্ত্রী কম। প্রতিমন্ত্রী বেশি। তা-ও জাতপাত বেছে বেছে। মন্ত্রিসভায় ঢিল ছুড়লে এখন সবার আগে কোনও না কোনও প্রতিমন্ত্রীর গায়ে লাগবে। শপথগ্রহণ সমারোহ তখন সবেমাত্র শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে চা-চক্রে ব্যস্ত। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনে দাঁড়িয়ে এমন সরস মন্তব্যটি ধেয়ে এল মোদী সরকারেরই এক মন্ত্রীর কাছ থেকে।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ২২:১৯
Share: Save:

মন্ত্রী কম। প্রতিমন্ত্রী বেশি। তা-ও জাতপাত বেছে বেছে। মন্ত্রিসভায় ঢিল ছুড়লে এখন সবার আগে কোনও না কোনও প্রতিমন্ত্রীর গায়ে লাগবে।

শপথগ্রহণ সমারোহ তখন সবেমাত্র শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে চা-চক্রে ব্যস্ত। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনে দাঁড়িয়ে এমন সরস মন্তব্যটি ধেয়ে এল মোদী সরকারেরই এক মন্ত্রীর কাছ থেকে। অনেকে তখন বলাবলি শুরু করেছেন, কোথায় গেল প্রধানমন্ত্রীর সর্বনিম্ন সরকার আর সর্বোচ্চ প্রশাসনের স্লোগান! এ তো সর্বোচ্চ সরকারের নমুনা। তাঁকে নিরস্ত্র করতে এগিয়ে এলেন আর এক মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। বললেন, “সরকারের কাজও তো দেখতে হবে। কাজ বেশি, মন্ত্রীও বেশি। সকলকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।”

কিন্তু শুধুই কি কাজের নিরিখে হয়েছে এই সম্প্রসারণ? অরুণ জেটলি বলছেন, ‘‘কাজ তো আছেই। সামাজিক সমীকরণও মাথায় রাখা হয়েছে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে।’’ হিসেব কষলে দেখা যাবে, নতুন মন্ত্রীদের বাছাইয়ের সময় নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ সব থেকে বেশি বেছেছেন দলিত নেতাকে। অজয় টামটা, রামদাস আটাওয়ালে, অর্জুন মেঘওয়াল, রমেশ জিগাজিনাগি, কৃষ্ণারাজ। দু’জন তফসিলি উপজাতি— যশবন্তসিন ভাবোর, ফগন কুলস্তে। দু’জন ওবিসি— পি পি চৌধুরী, অনুপ্রিয়া পটেল। আর সংখ্যালঘু দু’জন, এস এস অহলুওয়ালিয়া এবং এম জে আকবর। আর এই জাত-পাত-সম্প্রদায়ের অঙ্ক কষার সময় নজর রাখা হয়েছে, কোন রাজ্য থেকে কাদের আনা হবে। সে নাম যতই অপরিচিত হোক না কেন।

আর এই বাছাই পর্ব নিয়েই এখন চাপা ক্ষোভ বিজেপির অন্দরে। নরেন্দ্র মোদী জমানায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশের রেওয়াজ প্রায় বন্ধ। তাই গুমরে গুমরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেতারা। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘যে পাঁচ জনকে আজ নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিলেন, তাঁদের অধিকাংশের নাম এত দিন কেউ জানতেন? অথচ প্রায় দু’বছর ধরে তাঁরা মন্ত্রী ছিলেন। আজও যাঁরা এসেছেন, তাঁদেরও অধিকাংশের নাম অনেকের অজানা।’’ ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন গুজরাত থেকে বাদ পড়া মন্ত্রী মনসুকভাই ভাসাভা। আদিবাসী মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এতদিন। আজ বললেন, ‘‘এতদিন ধরে কাজ করে কী কারণে বাদ দেওয়া হল, তা কিছুই বুঝতে পারছি না। দলের নেতৃত্বের কাছে আমার এটাই প্রশ্ন।’’

কিন্তু বিজেপি সূত্রই কবুল করছে, আসলে গুজরাতে সামনে ভোট। সেখানে রাজনৈতিক সমীকরণও বদলেছে। পটেলদের সংরক্ষণ নিয়ে এখন তুলকালাম অবস্থা। তাই লেওভা পটেল সম্প্রদায়ের পারষোত্তম রূপালা, কড়ভা পটেল সম্প্রদায়ের মনসুখভাই মান্ডাভিয়া-সহ তফসিলি উপজাতির যশবন্তসিন ভাবোর— তিন জন গুজরাত থেকে ঠাঁই পেয়েছে। তেমনই ভোটমুখী সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। জাত-পাত যে রাজ্যকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। পূর্বাঞ্চল বরাবরই মায়াবতীর গড়। সেখান থেকে আগেই ওবিসি নেতা কেশব প্রসাদ মৌর্যকে দলের সভাপতি করা হয়েছে। এ বারে শাহজাপুর থেকে দলিত নেত্রী কৃষ্ণারাজকে নেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়। আবার কুর্মি নেতাদের দাপট মোকাবিলায় অনুপ্রিয়া পটেল আর একজন ব্রাহ্মণ নেতা মহেন্দ্র পান্ডেকে নেওয়া হয়েছে। তেমনই ভোট আসন্ন আর এক রাজ্য উত্তরাখণ্ড থেকেও দলিত নেতা অজয় টামটাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যার অর্থ, বাকি সবকিছু শিকেয় তুলে রাজ্য ধরে ধরে জাত-পাতের অঙ্ক কষেই হয়েছে মন্ত্রিসভার ফেরবদল। যে অঙ্ক মাথায় রেখে ৭৫ পেরিয়ে গেলেও উত্তরপ্রদেশের নেতা কলরাজ মিশ্রকে সরাতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী।

কিন্তু মন্ত্রী কে না হতে চান? বিজেপির শরিক দল ‘আপনা দল’-এর অনুপ্রিয়া পটেলকে মন্ত্রী করার পর তাঁর দলের মধ্যেই বিদ্রোহ যেমন প্রকাশ্যে এসে পড়েছে, বিজেপিতে সেটি হচ্ছে অন্দরে। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, গুজরাত থেকে এতজন মন্ত্রী সরানো হলে কেন কর্নাটকের জি এম সিদ্ধেশ্বরাকে সরানো হল না? কেনই বা একজন মন্ত্রী করা হল কর্নাটক থেকে? পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে এখনও ক্ষমতা দিতে পারল না, তা-ও দু’জন সাংসদই কেন এখন মন্ত্রীপদে? শরিক দলের রামদাস আটাওয়ালে নিজের শপথবাক্যই ঠিকমতো পড়তে পারছেন না, তিনি কী করে সরকারের কাজ সামলাবেন? শুধু দলিত হওয়াই কী তাঁর যোগ্যতা? বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে খোলা হাত দেওয়া হলে হয়ত তিনি জাত-পাতের অঙ্ক মাথায় না রেখে শুধুই কাজের নিরিখে চলতেন। কিন্তু ভোট বড় বালাই।’’

আর এখানেই থাবা মারছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার রদবদল দেখে বোঝা যায়, পরপর কয়েকটি রাজ্য হেরে এখন ভয় পাচ্ছেন তিনি। তাই ভোট-রাজ্য বেছে বেছে জাত-পাতের ঘুঁটি সাজিয়েছেন। তাঁর সর্বনিম্ন সরকারের স্লোগান এখন উধাও।’’ ২৪ আকবর রোডে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের এক নেতার রসিকতা, ‘‘জাত-জাত করতে গিয়ে শেষপর্যন্ত জাত খোয়াল নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা!’’ এই বিতর্ক সামাল দিতে সন্ধ্যায় এক বিবৃতি জারি করে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় জানিয়েছে, তাঁর নতুন মন্ত্রীরা সরকারি কাজে কতটা দক্ষ। তাঁদের নাম বাছাইয়ের পিছনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি।

কিন্তু এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, সরকারের অর্ধেক মেয়াদ পূর্ণ করে এক নতুন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও খবর...

১৯ নতুন মন্ত্রী মোদীর ক্যাবিনেটে, আরও এক মন্ত্রী পেল পশ্চিমবঙ্গ

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Cabinet Caste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy