দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল অরূপ বিশ্বাসকে। তাঁর বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কুণাল ঘোষ ও শওকত মোল্লাকে।
পুরভোটের মনোনয়নে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অমান্য করার দায়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। তাঁর বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে। ঘটনাচক্রে, যাঁরা দু’জনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত।
পাশাপাশিই, তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রীর নির্দেশ কেন অমান্য করা হল, তা জানতে চেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে রিপোর্টও তলব করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলের নির্দেশ অমান্য করে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে বুধবার দলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন শীর্ষনেতৃত্ব। তার পরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে অরূপকে সরিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ কুণাল ও শওকতকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কেন ওই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে একাধিক জল্পনা তৈরি হয়েছে। দলের একটি অংশ মনে করছে, পুরভোটে অভিষেক কোনও আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব না পাওয়ায় দলের অভ্যন্তরে আলোচনা শুরু হয়েছিল। একে দু’টি প্রার্থিতালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, তার মধ্যে একটি তালিকা প্রশান্ত কিশোরে সংস্থা আইপ্যাকের। অন্যটি তৃণমূলের দুই শীর্ষনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সূব্রত বক্সী প্রণীত। দলনেত্রী পার্থ-বক্সীর তালিকাকেই ‘বৈধতা’ দিয়েছেন। তার পর অভিষেককে পুরভোটের প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে রাখায় দলে আরও জল্পনা বাড়ছিল।
সেই বিষয়টি যাতে বেশি ইন্ধন না-পায়, সে কারণেই অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ দুই নেতাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে আনা হল বলে দলের একাংশের ব্যাখ্যা। ওই অংশের এক নেতার কথায়, ‘‘অভিষেককে কিছুই দেওয়া হবে না, তা কী করে হবে! একটা কিছু তো দিতেই হবে। তাই অরূপকে সরিয়ে কুণাল-শওকতকে আনা হয়েছে।’’ এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অভিষেক এবং তাঁর শিবিরকে একটি ‘শান্তিবার্তা’ দেওয়া হল বলেও ওই নেতার ব্যাখ্যা। তবে এই ব্যাখ্যা নিছকই ‘দাবি’। এর কোনও আনুষ্ঠানিক সত্যতা কেউই স্বীকার করেননি। যদিও অরূপ অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ বা ‘আস্থাভাজন’, এমন কথা তৃণমূলের কেউই হলফ করে বলতে পারছেন না।
ঠিক যেমন দলের আরেকটি অংশের দাবি, কুণাল-শওকতকে কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে এনে অভিষেক এবং তাঁর শিবিরকে বার্তা দেওয়া হল যে, তৃণমূলে আসলে ‘শিবির’ বলে কিছু নেই। কেউই কারও ‘লোক’ নন। সকলেই ‘দলের লোক’। দলের সর্বময় নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করায় অরূপকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় দলেরই দু’জনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও অর্থ খোঁজা অর্থহীন।
ব্যাখ্যা যা-ই হোক, এই বার্তা খুব স্পষ্ট যে, মমতাই দলে এখন শেষ কথা বলছেন। তাঁ নির্দেশ অমান্য করার ফলেই সরতে হয়েছে অরূপকে।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ এবং রাজ্য সভাপতি বক্সীর তৈরি করা এবং মমতার সিলমোহর দেওয়া প্রার্থিতালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে পুরভোটে মনোনয়ন জমা পড়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে অভিষেকেরই লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারেই। সোমবারই দলনেত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, দলীয় নেতৃত্বের সই-করা যে তালিকা জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে, সেটিই চূড়ান্ত। তা সত্ত্বেও ওই তালিকার বাইরে থেকে মনোনয়ন জমা পড়ার ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের ভিতরে বাইরে গুঞ্জন ও জল্পনা বাড়ছে। তৃণমূল সূত্রেই খবর ছিল, তালিকা অমান্য করে দলীয় নির্দেশের বাইরে গিয়ে কেউ মনোনয়ন জমা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভেবেছে দল। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যা ঘটেছে, তাকে কে তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশের সরাসরি অবমাননা বলেই মনে করছেন দলের শীর্ষনেতৃত্ব।
তৃণমূল সূত্রে আরও খবর, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা করেছেন পার্থ। চূড়ান্ত প্রার্থিতালিকায় নাম নেই, এমন কারা কারা দলের নির্দেশ অমান্য করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করে শীর্ষনেতৃত্বের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা নেতৃত্বকে। ওই তালিকা ধরে ধরে তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হবে। অপেক্ষা করা হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন অর্থাৎ শুক্রবার পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টেরা দলের নির্দেশ না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অরূপের অপসারণ তারই প্রথম ইঙ্গিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy