কেরলের রাজ্য বাজেটে এ বার পেট্রল, ডিজ়েল ও মদের উপরে সেস বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অহরহ পথে নামতে দেখা গিয়েছে তাদের। এ বার সেই জ্বালানির উপরেই কর বসিয়ে মূল্যবৃদ্ধির ইন্ধন জুগিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ল কেরলের বাম সরকার! বিতর্ক ঘরে-বাইরে সর্বত্র। পরিস্থিতি আঁচ করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ব্যাপারে আলোচনা করতে হচ্ছে সিপিএমকে।
কেরলের রাজ্য বাজেটে এ বার পেট্রল, ডিজ়েল ও মদের উপরে সেস বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কে এন বালগোপালের মতে, জ্বালানি তেলের উপরে সামাজিক সুরক্ষা সেস বসিয়ে অতিরিক্ত ৭৫০ কোটি টাকা আয় হবে কোষাগারে। ভারতে তৈরি বিদেশি মদের (আইএমএফএল) উপরে সেস থেকে উঠবে অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা। এই টাকায় সামাজিক সুরক্ষার জন্য আলাদা একটি তহবিল গড়া হবে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, পেট্রল ও ডিজ়েলে লিটার প্রতি দু’টাকা করে সামাজিক সুরক্ষা সেস চাপবে। আবগারি ক্ষেত্রে সেস হবে দু’রকম। আইএমএফএল-এর দাম ৫০০ থেকে ৯৯৯ টাকার মধ্যে হলে বসবে বোতল পিছু ২০ টাকা করে সেস। আর দাম এক হাজার টাকার উপরে হলে বোতলে ধার্য হবে ৪০ টাকা সেস।
সামাজিক সুরক্ষার নামে হলেও তেলে সেস এবং তার জেরে দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বিক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিয়েছে! নতুন সেস কার্যকর হলে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার পাশাপাশি কেরলেও পেট্রল, ডিজ়েলের দাম হবে দেশের মধ্যে সর্বাধিক। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে সুধাকরনের আক্রমণ, বাড়তি কর বসিয়ে টাকা তুলে সরকার আসলে শাসক সিপিএমের নেতাদের ‘বিলাসবহুল’ জীবনের খরচ তুলবে! রাস্তায় না নামলেও মজা লুটছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রনের মন্তব্য, ‘‘যে কোনও ব্যাপারেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বামপন্থীরা প্রতিবাদ করে। এখানে অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে নিজেরা সেই কাজই করছে!’’
গোল বেধেছে বাম শিবিরের অন্দরেও। সিপিএম এবং বামপন্থী ফ্রন্ট এলডিএফের নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, পেট্রল, ডিজ়েলের দাম বাড়লে তার জেরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ে, এ কথা বামেরাই বলে থাকে। সেস কমিয়ে মানুষকে কেন সুরাহা দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। এখন সেস বসিয়ে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিলে তার সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া হবে! কেরলের কিছু জেলা তথা শহরের সঙ্গে কর্নাটক, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য লাগোয়া। সিপিএম নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, ব্যবসায়ী মহল পাশের অন্য রাজ্য থেকে তেল নিয়ে এলে আখেরে কেরলের অর্থনীতির ক্ষতিই হবে। লাভ দূরস্থান!
সূত্রের খবর, পরিস্থিতি আঁচ করে কোচির একটি অতিথিশালায় রবিবার আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন মাস্টার। প্রয়োজনে দু’টাকার পরিবর্তে সেস এক টাকা করার যে প্রস্তাব দলের অন্দর থেকে আসছে, তা নিয়েও কথা হয়েছে বলে খবর। তবে অধিবেশন চালু থাকায় এই নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হলে তা বিধানসভাতেই ঘোষণা হবে। ডাকা হয়েছে এলডিএফের বৈঠকও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা এলডিএফের আহ্বায়ক ই পি জয়রাজন বলছেন, ‘‘কর ছাড়া কোনও সরকারই চলতে পারে না। কিন্তু মাহে বা পুদুচেরিতে তেল কম দামে পাওয়া গেলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব কি না, সেটাও ভাবা দরকার।’’ বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশনের অবশ্য দাবি, ‘‘দু’টাকা বাড়িয়ে এক টাকা কমালেও প্রমাণ হয়ে যাবে, রাজ্যের বেহাল অর্থনীতিকে আড়াল করতে এ ভাবে কর চাপাতে হচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy