Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharad Arvind Bobde

ধর্ষককে বিয়ে করতে বলেননি, রায়ের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, বললেন প্রধান বিচারপতি

ধর্ষণের মতো অপরাধকে ‘লঘু’ করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্ট, অভিযোগ উঠেছিল দেশের প্রধান বিচারপতি বোবদের বিরুদ্ধে। 

প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে।

প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে।

সংবাদসংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ১৫:৫৭
Share: Save:

নিদান দেননি। শুধু প্রশ্ন করেছিলেন। ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ধর্ষিত কিশোরীকে তিনি বিয়ে করবে কি না! কিন্তু বিয়ে করতে বলেননি। অথচ তাঁর বক্তব্যের তেমনই ব্যখ্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বললেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে।

দেশ জুড়ে নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা তীব্র সমালোচনা করেছে বোবদের। গত ১ মার্চের ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত সেই রায়ের পর ‘খলনায়ক’ প্রতিপন্ন করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেও বলা হয় বোবদেকে। সোমবার নিজের বক্তব্যের ব্যখ্যা দিলেন প্রধান বিচারপতি। বোবদে বললেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতকে এমনভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যাতে মনে হয়, মহিলাদের অসম্মান করেছে সুপ্রিম কোর্ট। অথচ এটা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ সুপ্রিম কোর্ট বরাবরই নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে এসেছে।’’

ধর্ষণের মতো অপরাধকে ‘লঘু’ করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্ট, এমনই অভিযোগ উঠেছিল দেশের প্রধান বিচারপতি বোবদের বিরুদ্ধে। গত সোমবার, ১ মার্চ, একটি ধর্ষণ মামলার রায় নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই মামলায় ধর্ষণে অভিযুক্ত মোহিত সুভাষ চভনের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছিল আদালতে। মহারাষ্ট্রের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার কর্মী মোহিতের বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। পকসো আইনে অভিযুক্ত মোহিতের বিরুদ্ধে ওই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট মোহিতকে বলে, ‘‘যদি তুমি (ধর্ষিতকে) বিয়ে করতে চাও, আমরা সাহায্য করতে পারি। যদি না চাও, তবে তুমি তোমার চাকরি খোয়াবে। তোমাকে জেলেও যেতে হবে।’’ সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির শুনানি চলছিল প্রধান বিচারপতি বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। মামলাটির শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘তুমি মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেছ। তবে আমরা তোমাকে জোর করছি না। কারণ সেক্ষেত্রে পরে তুমি বলবে আদালত তোমাকে বাধ্য করেছে।’’ সুপ্রিম কোর্টের এই রায়েরই নিন্দায় সরব হয় দেশের বিভিন্ন মহল।

বিষয়টিকে নারীদের প্রতি অবমাননাকর আখ্যা দেন দেশের বিদ্বজ্জন ও নারীবাদীদের একাংশ। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ধর্ষণের মতো অপরাধকে কী ভাবে প্রধান বিচারপতি এ ভাবে ‘লঘু’ করে দেখাতে পারেন। তিনি কি বিয়েকে ধর্ষণের মতো অপরাধের ‘প্রতিকার’ হিসাবে প্রতিপন্ন করতে চাইছেন? ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে প্রধান বিচারপতিকে ক্ষমা চাইতে বলেন তাঁরা। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সই করেন ৫ হাজারের বেশি মানুষ।

মনে করা হচ্ছে, এরই জবাবে সোমবার আলাদা করে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারপতি বোবদে। তিনি বলেন, পুরো ঘটনাটিরই ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি ধর্ষককে বিয়ে করতে বলেননি। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটাও বলেন, শীর্ষ আদালত ওই প্রশ্ন করেছিল সম্পূর্ণ আলাদা প্রেক্ষিতে।

সোমবার অন্তঃসত্ত্বা এক নাবালিকার গর্ভপাতের আর্জির শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। সেখানেই এই মন্তব্য করেন তিনি। বলেন সুপ্রিম কোর্ট বরাবর মহিলাদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে এসেছে। নারীর অবমাননার কথা এই বেঞ্চ ভাবতেই পারে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE