(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস। —ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ ফিরে পেয়েই ‘শহুরে নকশাল’ শব্দবন্ধে ফিরলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস। এ বার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি দাবি করলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় শহুরে নকশালেরা অংশ নিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ভারতে বিজেপি সরকারকে অস্থির করার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে তারা নেপালে একটি বৈঠকও করেছিল। দেবেন্দ্রের দাবি, মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের মাত্র দিন তিনেক আগে, ১৫ নভেম্বর ওই বৈঠক হয়েছিল, যাতে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানীতে বিজেপি সরকার গড়তে না পারে।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসা ইস্তক সরকার-বিরোধীদের একাংশকে শহুরে নকশাল বলে দাগিয়ে দিয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপির সব স্তরের নেতাই এই শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে সরকার-বিরোধী দলগুলির একাংশকে নিশানা করেন। যদিও তথ্যের অধিকার আইনে এক প্রশ্নের জবাবে বছর চারেক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিজেরাই জানিয়েছিল, কারা শহুরে নকশাল, সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না! এমনকি সরকার ওই শব্দটি ব্যবহারও করে না! যদিও তার পরেও বিজেপি নেতাদের মুখে প্রায়ই বিরোধীদের একাংশ সম্পর্কে শহুরে নকশাল শব্দবন্ধটি শোনা যায়।
শুক্রবার মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস বলেন, ‘‘১৫ নভেম্বর, নেপালের কাঠমান্ডুতে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় অংশ নেওয়া কয়েকটি সংগঠন বৈঠক করে। সেখানে ইভিএম-এর বিরোধিতা করা, মহারাষ্ট্রে ব্যালট পেপারে ভোট করা এবংবিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।’’
সেই সঙ্গেই ফডণবীসের দাবি, একাধিক এই ধরনের শহুরে নকশাল সংগঠন ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় অংশ নিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, এই সব সংগঠন মহা বিকাশ আঘাড়ীর হয়ে ভোটে প্রচারও করেছিল বলে দাবি তাঁর। ফডণবীসের দাবি, ভারতের নির্বাচনে বিদেশি শক্তি নাক গলাচ্ছে এবং সে কাজে বিরোধী দলগুলি তাদের সাহায্য করছে। মহারাষ্ট্রের ভোটে এই সব সংগঠনের ‘জঙ্গি তহবিল’ কাজে লাগানোর বিষয়টি নিয়ে সন্ত্রাস দমন শাখা তদন্ত করছে বলেও বিধানসভায় জানান দেবেন্দ্র।
ক্ষমতায় আসার পরেই বিরোধী সুর চাপা দিতে দেবেন্দ্রের নেতৃত্বে নতুন বিজেপি সরকার সক্রিয় বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন এমভিএ জোটের নেতারা। নতুন সরকার ‘মহারাষ্ট্র বিশেষ জননিরাপত্তা আইন ২০২৪’ আনতে উদ্যোগী হয়েছে। সরকারের দাবি, এই আইন চালু হলে মহারাষ্ট্রে শহুরে নকশালপন্থীদের বাড়বাড়ন্তে রাশটানা যাবে।
পাল্টা বিরোধীদের দাবি, এই দেবেন্দ্র ফডণবীসের প্রথম মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়েই ভীমা কোরেগাঁও ষড়যন্ত্রের মামলা করে একের পর এক সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের অনেকে এখনও কারাবন্দি। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই ‘যড়যন্ত্রে’র প্রমাণ এখনও দিতে পারেননি তদন্তকারীরা। তার মধ্যেই নতুন করে আইন পাশ করে সব রকমের বিরোধী সুর দমন করতে বিজেপি জোট সরকার সক্রিয় হয়েছে বলে সুর চড়াতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
এ দিন বিধানসভায় দেবেন্দ্রের বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত বিদেশি একটি রাষ্ট্রে ভারত-বিরোধী সংগঠনের বৈঠক নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন গত এক মাসে কিছু জানায়নি, সে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তা ছাড়া, যে রাষ্ট্রের নাম দেবেন্দ্র করেছেন, তারা শুধু ভারতের প্রতিবেশী নয়, তাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কও বরাবরই গভীর। দেবেন্দ্রের বক্তব্য সেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ছায়া ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তা ছাড়া, এ বারে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন থেকে গণনার দিন পর্যন্ত প্রায় ৭৬ লক্ষ ভোট ‘রহস্যজনক’ ভাবে বেড়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী তথা অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পরকলা প্রভাকর। যার জেরে মহারাষ্ট্রে বিরোধী নেতারা ইভিএমে কারসাজির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তাঁরা।
এই অবস্থায় ভারত-বিরোধী শক্তি নেপালে বৈঠক করে ইভিএম-এর বিরোধিতা করেছে এবং কাগজের ব্যালটে ভোট করাতে চেয়েছে জাতীয় দাবি কতটা সত্য আর কতটা বাস্তব আড়ালের চেষ্টা, সে প্রশ্নও তুলেছেন একাধিক বিশ্লেষক। তাঁদেরবক্তব্য, গোটা বিষয়টি শহুরে নকশালদের ঘাড়ে চাপিয়ে নজর ঘোরাতে সক্রিয় বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy