সুপ্রিয় চক্রবর্তী। ডান দিকে, মেনকা গুরুস্বামী ও অরুন্ধতী কাটজু।
গত তিন দিন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সুপ্রিয় চক্রবর্তী ও অভয় ডাং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে বসেছিলেন। কখনও আশার পারদ চড়েছে। কখনও সংশয় বাসা বেঁধেছে।
দেড় বছর আগে ধুমধাম করেই আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে বিয়ে করেছিলেন সুপ্রিয় ও অভয়। হায়দরাবাদে সামাজিক অনুষ্ঠান হলেও সেই বিয়ে আইনি স্বীকৃতি পায়নি। সমলিঙ্গের বিবাহের আইনি স্বীকৃতির দাবিতে তাই আরও অনেকের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সুপ্রিয়রা।
সমলিঙ্গের বিয়ের আইনি স্বীকৃতি নিয়ে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। গত তিন দিনে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, পুরুষ বা মহিলা বলতে কী বোঝায়, তা শুধু জননাঙ্গের উপর নির্ভর করে না। দু’জন সমলিঙ্গের মানুষের সম্পর্ক শুধুই শারীরিক সম্পর্ক নয়। তাতে আবেগ থাকে। সেই সম্পর্কও থিতু হতে পারে। তাই প্রয়োজনে বিবাহের সংজ্ঞাও বদল হতে পারে।
শুক্রবার সকালে দিল্লি থেকে হায়দরাবাদ রওনা হওয়ার আগে সুপ্রিয় বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত মামলার শুনানি যথেষ্ট ইতিবাচক। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার কী অবস্থান নেবে, তার উপরে সব কিছু নির্ভর করছে।’’ সোমবার থেকে শুনানিতে হাজির থাকার জন্য রবিবারই তাই দিল্লি ফিরে আসবেন সুপ্রিয়। সুপ্রিম কোর্টে যখন মুকুল রোহতগি, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো আইনজীবীরা সওয়াল করছেন, তখন সুপ্রিয়র মনে পড়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে তাঁর কিশোর বয়সের কথা। যেখানে ইন্টারনেট ছিল না। সমকামিতা নিয়ে জানার উপায় ছিল না। যখন নিজের পছন্দ অন্য রকম বুঝেও তা নিয়ে আলোচনা করার মতো কেউ ছিলেন না।
সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সমলিঙ্গের বিবাহ শুধু মাত্র শহুরে অভিজাত শ্রেণির বিষয় বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সুপ্রিয়র মতে, ‘‘অশোকনগরের মতো আধাশহর বা মফস্সল, গ্রামীণ এলাকায় এই সচেতনতা তৈরি অনেক বেশি জরুরি।’’ সেখানেও যে সমলিঙ্গের বিবাহের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তা বোঝাতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা পিটিশনে সুপ্রিয়-অভয় লিখেছেন, ২০২১-এর ডিসেম্বরে হায়দরাবাদের অনুষ্ঠানের থেকেও দু’মাস পরে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে আরও বেশি ভিড় হয়েছিল। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের ভিড় উপচে পড়েছিল।
সুপ্রিয়দের আইনজীবী মেনকা গুরুস্বামী ও অরুন্ধতী কাটজুদের জীবনও এই মামলাকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে। সমকামিতাকে আইনি অপরাধের আওতা থেকে মুক্ত করতে এই দু’জন ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। এখন আবার তাঁরা সমলিঙ্গের বিবাহের স্বীকৃতির পক্ষে লড়ছেন। কারণ, বিয়ে আইনি স্বীকৃতি না পেলে সমলিঙ্গের দম্পতিরা সন্তান দত্তক নিতে পারবেন না। উত্তরাধিকার, জীবন বিমা, কর ছাড়ের মতো নানা সুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হবেন।
শুনানির মাঝেই অরুন্ধতীর বাবা, প্রাক্তন কূটনীতিক বিবেক কাটজু সংবাদপত্রে কলম ধরেছেন। লিখেছেন, চাকরি থেকে অবসরের পরে যখন বড় মেয়ে অরুন্ধতীর সঙ্গে মেনকার সম্পর্কের কথা শুনেছিলেন, জানতে পেরেছিলেন, তাঁর মেয়ে সমকামী, তখন মেনে নিতে পারেননি। খুব কেঁদেছিলেন। তত দিনে মেনকা-অরুন্ধতী একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছেন। অথচ বিবেক সে কথা নিজের মা, আত্মীয়স্বজনদের জানাতে পারেননি। তারপরে মেনকার সঙ্গে দেখা হয়েছে। মেনকাকে তাঁদের পছন্দ হয়েছে। এখন সবই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।
প্রধান বিচারপতি শুনানির সময় জানিয়েছেন, তিনিও ওই লেখাটি পড়েছেন। মেনকার বাবা, লেখক-বিশ্লেষক মোহন গুরুস্বামী সেই লেখা সবাইকে পড়তে বলছেন। আর অরুন্ধতী বলছেন, “আমি আর মেনকা যেন আমাদের বাবা-মায়ের মতোই আমাদের সন্তানদের কাছে ভাল বাবা-মা হতে পারি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy