সব পুড়ে খাক। ছবি: পিটিআই।
পঁয়ত্রিশ বছরের পুরনো ভিটেটা চিনতেই পারছেন না বিলকিস বানো। উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিব বিহারের বাসিন্দা ষাট বছরের এই প্রৌঢ়া একটানা কেঁদেই চলেছেন। দিল্লির হিংসায় পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে তাঁর বাড়ি। হিংসার আগুনে বাড়ির লাগোয়া পারিবারিক দোকানটাও রক্ষা পায়নি। সব কিছু পুড়ে খাক।
গত সোমবারের কথা মনে পড়লে শিউরে উঠছেন বিলকিস। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে শিব বিহারের হাল সবচেয়ে খারাপ। ঘটনার দিন ঘরেই ছিলেন তিনি। হইহই-এর শব্দ শুনে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখেন, দম আটকানো কালো ধোঁয়া ঘিরে ফেলেছে বাড়িটাকে। কারা যেন এক তলায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। বিলকিস বললেন, ‘‘কোনও রকমে বেরিয়ে আসতেই দুষ্কৃতীরা আমাকে ঘিরে ধরল। সে কি উল্লাস ওদের! আশপাশের বাড়িঘর, দোকানপাট সব জ্বলছে। ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম। দেখতে পেয়ে কোনও রকমে বার করে আনে আমার বড় ছেলে মহম্মদ ইউসুফ।’’ সে দিন দুই ছেলে আর পুত্রবধূকে নিয়ে কাছের একটি মন্দিরে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচেন বিলকিসরা। টাকা, পয়সা, গয়না, নথি কিছুই আনতে পারেননি। ইউসুফ জানালেন, পড়শির থেকে একটা জামা চেয়ে পরেছেন। আতঙ্ক কাটিয়ে ফিরে এলেও বাড়িটা আর চিনতে পারছেন না বিলকিস। পোড়া বাড়িটার দিকে ঠায় তাকিয়ে প্রৌঢ়া শুধু বলে উঠলেন, ‘‘৩৫ বছরের ভিটে। এক দিনেই পুড়ে খাক।’’
পাশে যমুনা বিহার এলাকায় শাশুড়ি, স্বামী, ছেলেদের নিয়ে থাকেন ৩৩ বছরের প্রীতি গর্গ। সোমবার তাঁদের বাড়িতেও আগুন লাগিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। দোতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচেছিল তাঁর দুই ছেলে। সেই ঘটনার কথা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘বেশ কিছু ক্ষণ ধরে এলাকায় অশান্তির আঁচ টের পাচ্ছিলাম। প্রথমে পাথর ছোড়াছুড়ি চলছিল। তারপর আগুন জ্বলল। আমাদের বাড়ি থেকে দু’শো মিটার দূরে পেট্রল পাম্প জ্বালিয়ে দিল ওরা। আগুন লাগালো আমাদের বাড়িতেও। আমরা দোতলায় থাকতাম। এক তলাটা খালিই ছিল। ওরা এক তলাতে আগুন দিল। বেরোবার পথ বন্ধ দেখে ছেলেদের হাত ধরে বারান্দায় এলাম। কান্না চেপে পাঁচ আর সাত বছরের বাচ্চাদের হাত ধরে নীচের দিকে ঝুলিয়ে দিলাম। বললাম, বাঁচতে চাইলে ঝাঁপ দাও। আর চোখ খুলে রাখার সাহস হয়নি।’’ বাচ্চাদের পাঠিয়ে স্বামী আর শাশুড়িকে নিয়ে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ওঁরা।
প্রায় একই অভিজ্ঞতা শিব বিহারে একটি স্কুলের রক্ষী রূপ সিংহ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। রূপ বললেন, ‘‘২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পরীক্ষা ছিল। দুপুরে ঘুমোচ্ছিলাম। তখন দেওয়াল টপকে স্কুলে ঢোকে দুষ্কৃতীরা।’’ রূপের কথায়, ‘‘স্কুলের ছাদের ঘরে যে আমার পরিবার থাকে তা ওরা জানত। আমার স্ত্রীকে তাড়াও করেছিল। বড় মেয়ে মেঘা আমার ঘুম ভাঙায়।’’ দেওয়াল টপকে পাশের বাড়ির ছাদে নেমে পালান রূপেরা। মেঘার বিয়ের জন্য আনা গয়নাপত্রসবই খোয়া গিয়েছে। পিছিয়ে গিয়েছে বিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy