ছবি: পিটিআই।
চারপাশে হিংসার খবর। ভেবেছিলেন, বাইরে বেরিয়ে বিপদে না পড়তে হয়। সকাল থেকে তাই বাড়িতেই ছিলেন। তবে রাতে সন্তানদের জন্য খাবার কিনতে বেরোতেই হয়েছিল। তখনই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আচমকাই পায়ে লাগল গুলি। রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না কিছুতেই। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব শেষ। খাবার কিনে আর বাড়ি ফেরা হল না দিল্লির কদমপুরীর বাসিন্দা মহম্মদ ফুরকানের।
তিন সন্তানের বাবা রতনলাল অবশ্য সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কাজের জন্যই। দিল্লির গোকুলপুরী থানার হেড কনস্টেবল। গোষ্ঠী সংঘর্ষের উত্তেজনার খবর পেয়েই নামতে হয়েছিল পথে। তখনই কোথা থেকে ছুটে এল গুলি। বাঁ কাঁধ ফুঁড়ে ঢুকে গেল শরীরে। প্রাণ যেতে সময় লাগেনি। তিন সন্তানের পিতা রতনলাল ছেলেমেয়েদের কথা দিয়েছিলেন, ক’দিন পরেই হোলিতে সবাইকে নিয়ে যাবেন রাজস্থানের সীকরে, গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু সোমবার তাঁর দিল্লির বাড়িতে পৌঁছল মৃত্যু সংবাদ।
সিএএ বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে গত কাল থেকেই উত্তাল উত্তর-পূর্ব দিল্লি। তবে সোমবার নিহত পুলিশকর্মী রতনলাল আর সাধারণ নাগরিক, হস্তশিল্প ব্যবসায়ী ফুকরানের মধ্যে মিল একটাই। ঘরপরিবার নিয়ে দু’জনেই শান্তিতে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন দু’টি পরিবারেই নেমে এসেছে অন্ধকার। জাফরাবাদ ব্রিজের কাছেই কদমপুরীতে থাকতেন ফুরকান। তাঁর ভাই মহম্মদ ইমরান এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, দাদা ফিরবে না। সোমবার দুপুরে ফুকরানের বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। সন্ধেয় সেখান থেকে ফেরেন। তার পরেই খাবার কিনতে বেরিয়েছিলেন ফুরকান।
আরও পড়ুন: চার জায়গায় দেখলেই গুলি, আতঙ্কে কাঁপছে দিল্লি, নিহত ১৩
বাড়ি ফিরতেই ফোন আসে ইমরানের কাছে। ফুরকানের পায়ে গুলি লেগেছে। ‘‘বিশ্বাসই হয়নি খবরটা। সঙ্গে সঙ্গে দাদাকে ফোন করি। ফোন বেজেই যায়,’’ বলেন ইমরান। কিছু ক্ষণ পরে খবর আসে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ফুরকান। সঙ্গে সঙ্গে রওনা দেন হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে ইমরান শোনেন, ফুরকান নাকি আর বেঁচে নেই। দাদাকে বাঁচানোর আর্জি নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে কাকুতি মিনতি করতে থাকেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, ফুরকান মারা গিয়েছেন। কান্নাভেজা গলায় ইমরান আজ বলেন, ‘‘আর কিছু রইল না। দাদার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। কী হবে ওদের?’’
৪২ বছর বয়সি রতনলালের তিন সন্তানও এখন শোকে দিশাহারা। বছর তেরোর সিদ্ধি, দশ বছর বয়সি কনক আর ৮ বছর বয়সি রাম ভাবতেই পারছে না বাবাকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে তারা প্রশ্ন করেছে, ‘‘আমাদের বাবার কী দোষ ছিল?’’ সীকরের ফতেপুর তিওহালি গ্রামের বাসিন্দা রতনলাল ১৯৯৮ সালে দিল্লি পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন। জয়পুরের মেয়ে পুনমকে বিয়ে করার পর থেকে থাকতেন দিল্লির বুরারি এলাকায়।
সোমবার বুরারিতেও উত্তেজনা ছিল। তার মধ্যেই তাঁর পরিবারের কাছে পৌঁছয় মৃত্যুসংবাদ। জ্ঞান হারান পুনম। কান্নাকাটি শুরু করে ছেলেমেয়েরা। সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, রতনলাল শান্তিপ্রিয় স্বভাবের মানুষ ছিলেন। সংঘাতে যেতে চাইতেন না।
বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানের গোঁফজোড়া খুব পছন্দের ছিল তাঁর। তেমনই গোঁফ রেখেছিলেন। রসিকতা করতেন পুলিশকর্মীরা। সহকর্মীদের মধ্যে এখন শোকের ছায়া। দুঃখপ্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চিঠি লিখেছেন নিহত পুলিশকর্মীর স্ত্রীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy