রবিবার থেকে জ্বলতে শুরু করেছিল দিল্লি। ছবি: এএফপি।
হাসপাতালে ঢুকলে এমনিতেই মনমেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আর আজ দিলশাদ গার্ডেনের (পূর্ব দিল্লি) গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালের চত্বরে কয়েক পোঁচ বাড়তি বিষন্নতা। মর্গের সামনে দেহ ফিরে পাওয়ার লাইন ও জটলা। পাশে চাদর পেতে বসা কোনও এক মৃতের পরিবারের মহিলাদের নিরন্তর বিলাপ।
‘‘খুব শান্ত আর ঝুটঝামেলার বাইরে থাকা মানুষ ছিল আমাদের মেহতাব। একটু ভীতুও। কাল বিকেল পাঁচটা নাগাদ হঠাৎ চা খেতে চাইল। ঘরে দুধ ছিল না। বাইরে তখনও গোলমালের আওয়াজ পাচ্ছিলাম আমরা। বাড়ির সবাই নিষেধ করলাম বাইরে যেতে, কথা শুনল না’’— চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন দিদি ইয়াসমিন। দৌড়ে দিয়ে গিয়ে দুধ কিনে আনার কথা বলে বাইশ বছরের মেহতাব পা রেখেছিলেন বাইরে। মর্গের সামনে তাঁর মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আজ সকাল থেকে অপেক্ষা করছে তাঁর পরিবার। ইয়াসমিন বলেন, ‘‘সন্ধের পর আমাদের ফোন করে একটা বেসরকারি হাসপাতালের নাম জানিয়ে বলা হয়, ওকে আগুনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওখানে যেন খুঁজে নিই।’’
রবিবার থেকে জ্বলতে শুরু করেছিল দিল্লি। এখানে যাঁরা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের স্বজনেরা কেউ সোমবার কেউ মঙ্গলবারে নিহত হয়েছেন। ঘটনার আকস্মিকতা এবং শোক মিলিয়ে কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন মানুষগুলো। চার মাস আগে শাদি হয়েছিল শাহিদ আলভির। আজ শুয়ে আছেন লাশকাটা ঘরে। অটো চালক শাহিদ রাজধানীতে এসেছিলেন বুলন্দশহর থেকে। ছোটবেলায়, পরিবারের হাত ধরে। সোমবার বিকেলে মালিকের কাছে গাড়ি জমা করে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর ভাই ইরফান বলেন, ‘‘দু ঘণ্টা আগেও ওর সঙ্গে কথা হল। বিকেলে ফিরে ওর সঙ্গে সিনেমা যাওয়ার কথা। তবে ভজনপুরা এলাকায় উন্মত্ত ভিড় ওকে তুলে নেয়, গুলি করে। আমরা লোকমুখে খবর পেয়ে বিশ্বাসই করিনি। কিন্তু পরে পুলিশ বলে এখানে আসতে। এখন দেহের খোঁজ পাইনি। দু’দিন ধরে এখানেই অপেক্ষা করছি।’’
আরও পড়ুন: ‘ভয় কী, এই মহল্লা তো তোমাদেরই’
হাসপাতালে দাঁড়িয়েই বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন এ রকমই একটি পরিবার। শাহদরার কর্দমপুরায় সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ চলছিল। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইমরানের কথায়, ‘‘কপিল মিশ্র টুইট করার পরেই আগুন জ্বলতে শুরু করে। যারা হিংসায় অংশ নিচ্ছে তাদের পাশাপাশি যারা উস্কানি দিচ্ছে— তাদেরও কেন শাস্তি হবে না ?’’
হাসপাতাল জানিয়েছে, নিহত ২২ জনের দেহ রয়েছে সেখানে। ১৮৩ জন গুরুতর আহত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুই সম্প্রদায়েরই মানুষ। উনিশ বছরের তরুণ বিবেক চৌধরিকে হাসপাতালে আনা হয় মঙ্গলবার। মাথায় ভয়ঙ্কর আঘাত। তার বন্ধুরা জানাচ্ছেন, কারওয়াল নগরের শিব বিহারে যাচ্ছিলেন বিবেক। উন্মত্ত জনতা রাস্তা আটকে নাম, পরিচয়পত্র দেখতে চায়। দেখাতে না পারায় মাথায় আঘাত করে ড্রিল মেশিন দিয়ে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিবেকের অবস্থা সঙ্কটজনক। আইসিইউয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাইশ বছরের রাহুল ঠাকুরও। তাঁর বন্ধু সৌরভ শর্মা বলেন, ‘‘ওঁর বুকে গুলি করা হয়েছিল। দশ মিনিটের মধ্যে আমরা অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে হাসপাতালে আসার চেষ্টা করি। একদল লোক বাধা দিতে থাকে। কোনও মতে এসে পৌঁছেছি বলে হয়ত ওঁকে বাঁচাতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy