কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।—ফাইল চিত্র।
নাম করে দিল্লি পুলিশের প্রশংসা। আর নাম না-করে কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল। আজ দিল্লির হিংসা নিয়ে আলোচনায় লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জবাবি ভাষণের নির্যাস এটাই। পাশাপাশি, বিরোধীরা আজ সংঘর্ষে নিহত-আহতদের ধর্মভিত্তিক সংখ্যা উল্লেখ করলেও কৌশলী শাহ বলেন, ‘‘হিংসায় কত জন মারা গিয়েছেন, আহত হয়েছেন, তা নিয়েও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন করব! হিংসায় ৫২ জন ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫২৬ জন ভারতীয়।’’
ফেব্রুয়ারির শেষে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষ পুলিশের ব্যর্থতার কারণেই ব্যাপক আকার নিয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধী এবং ভুক্তভোগীদের। আজ সেই অভিযোগ খারিজ করে দিল্লি পুলিশকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন শাহ। বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ষড়যন্ত্র করে বাধানো হিংসা পুলিশ যে-ভাবে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে থামিয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য। পাশাপাশি, নাম না-করে সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়ার পিছনে কংগ্রেসকেই দায়ী করেন শাহ। সে-কথা শুনে শাহের বক্তব্যের মধ্যেই ওয়াক আউট করে কংগ্রেস। ওয়াক আউটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল অন্য বিরোধী দলগুলিকেও। কিন্তু তারা রাজি হয়নি।
শাহের দাবি, দিল্লির হিংসা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ডিসেম্বর থেকেই তার প্রস্তুতি চলছিল। এর সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল জামিয়া-জেএনইউ ও পরে শাহিন বাগের আন্দোলন থেকেই। শাহ বলেন, ‘‘গত ১৪ ডিসেম্বর দিল্লির রামলীলা ময়দানে সিএএ-বিরোধী সভা করে একটি রাজনৈতিক দল। দলের এক নেত্রী মঞ্চ থেকে এসপার ওসপার লড়াইয়ের ডাক দেন। তার দু’দিন পরেই বিক্ষোভ শুরু হয় শাহিন বাগে।’’
অমিতের দাবি
• পুলিশের কাছে প্রথম অভিযোগ আসে ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টোয়। শেষ অভিযোগ আসে ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায়। উত্তর-পূর্ব দিল্লি অশান্ত ছিল ৩৬ ঘণ্টা।
• পুলিশ গুলি ছুড়েছে ৪০০ রাউন্ড। কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে ৫ হাজার রাউন্ড।
• উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রায় ৩০০ লোক এসেছিল। সংঘর্ষে মদত দিতে টাকা এসেছে বাইরে থেকে। হাওয়ালার মাধ্যমে।
• আইএস মডিউলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ধৃত দু’জন।
• সংঘর্ষ ছড়াতে ২২ ফেব্রুয়ারি ৬০টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। যা ২৬ ফেব্রুয়ারি বন্ধ হয়।
• ৭০০টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ২৬৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ চিহ্নিতকরণ সফ্টওয়্যার দিয়ে ভিডিয়ো ফুটেজ থেকে শনাক্তকরণের কাজ চলছে।
• ২টি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে। এ ছাড়া, সক্রিয় পুলিশের ৪০টি দল।
• নিহত ৫২ জন ভারতীয়। আহত ৫২৬ ভারতীয়।
কিন্তু সংঘর্ষ শুরুর এক দিন আগে বিজেপি নেতা কপিল শর্মার হুমকি, কিংবা দিল্লি নির্বাচনের প্রচারে তাঁর নিজের বা দলের সাংসদদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে বাক্যব্যয় করেননি শাহ। উল্টে বোঝাতে চেয়েছেন, কী ভাবে বিভিন্ন শক্তি সরকার-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়। শাহ বলেন, ‘‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনাইটেড এগেনস্ট হেট’-এর মঞ্চ থেকে ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়ে রাস্তায় নামার ডাক দেওয়া হয়। বাস্তবে হয়েছেও তা-ই। ২২-২৩ থেকে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা অবরোধ করে ধর্না মঞ্চ তৈরি করা হয়।’’
সিএএ-এনআরসি নিয়ে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ, এনপিআর প্রশ্নে বিরোধী রাজ্যগুলির আপত্তি এবং সব শেষে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দিল্লির সংঘর্ষ— একের পর এক ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শাহের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে যেখানে দিল্লির আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। ফলে শেষ পর্যন্ত জবাবদিহির দায় এসে পড়েছিল শাহের উপরেই।
২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে যখন উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে পুরোদমে সংঘর্ষ চলছে, তখন আমদাবাদের মোতারায় ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে বসে ছিলেন শাহ। আজ এ নিয়ে তাঁকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি তৃণমূলের সৌগত রায়। জবাবে শাহ বলেন, ‘‘আমার লোকসভা কেন্দ্রে অনুষ্ঠান ছিল। তা ছাড়া, আমি এক দিন আগেই আমদাবাদ চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সংঘর্ষের কথা জানার পরেই ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার পরেই দিল্লি চলে আসি। তার পর থেকে পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ থামানো নিয়ে বৈঠক করতে থাকি।’’ কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি পুলিশকে ২৫ ফেব্রুয়ারি কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছিলেন। শুরুতেই কেন বলেননি? শাহ আজ নিজেই স্বীকার করেছেন ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লির ৮-৯টি জায়গায় ধর্নার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। সে-ক্ষেত্রে পুলিশ কেন আগেভাগেই দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিল না, সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি শাহ।
২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে উপদ্রুত এলাকায় যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ঘটনাচক্রে তিনি রাস্তায় নামার পর থেকেই আর নতুন গন্ডগোলের খবর আসা বন্ধ হয়। জল্পনা শুরু হয়, সংঘর্ষ থামাতে শাহ ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পথে নেমেছেন ডোভাল। তাঁর ভূমিকা ঠিক কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বহু বিরোধী সাংসদ। শাহ দাবি করেন, ‘‘পুলিশের মনোবল বাড়াতে আমার অনুরোধেই ডোভাল সেখানে গিয়েছিলেন।’’ তিনি কেন উপদ্রুত এলাকায় যাননি, সেই প্রশ্নের জবাবে শাহ বলেন, ‘‘আমি গেলে পুলিশ আমার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত।’’ কিন্তু পুলিশের কাছে যখন একের পর এক আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের ফোন আসছিল, তখনই কেন ডোভালকে পাঠানো হল না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। যার কোনও উত্তর নেই।
শাহ আজ লোকসভাকে আশ্বাস দিয়েছেন, কোনও অপরাধী ছাড় পাবে না। কারও পরিচয় দেখা হবে না। তাঁর দাবি, গোয়েন্দা কর্মী অঙ্কিত শর্মাকে খুনের ঘটনার ভিডিয়ো মিলেছে। তার ভিত্তিতে শনাক্তকরণের কাজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy