Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

হাল ছাড়ছে না দিল্লি, মোদী এখনও শরিফেই আস্থাবান

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের (এনএসএ) বৈঠক বাতিল হয়েছে। চলছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। কিন্তু ভারত-পাক শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদী আদৌ হাল ছাড়তে রাজি নন বলে জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের (পিএমও) অফিসারেরা।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০১
Share: Save:

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের (এনএসএ) বৈঠক বাতিল হয়েছে। চলছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। কিন্তু ভারত-পাক শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদী আদৌ হাল ছাড়তে রাজি নন বলে জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের (পিএমও) অফিসারেরা। বরং এখনই এই শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন তিনি। রাশিয়ার উফার মতোই সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠকের সময়ে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলাদা আলোচনার জন্যও তৈরি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তার আগে যে ফের ধাপে ধাপে উত্তাপ কমাতে হবে, তা মেনে নিচ্ছে মোদী শিবির।

দীর্ঘ টালবাহানার পরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করেছে পাকিস্তান। মোদীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, নওয়াজ শরিফকে ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ফলে কিছুটা কড়া সুর নিতেই হচ্ছে। তার ফলে কিছুটা ওঠাপড়া হচ্ছে সম্পর্কেও। কিন্তু তাতে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী।

তবে এনএসএ স্তরের বৈঠক বাতিল হওয়ার পরে এখনই প্রকাশ্যে খুব বেশি সুর নরম করা ভারতের পক্ষেও সম্ভব নয়। তাই এনএসএ বৈঠক বাতিলের পরে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দু’দেশের সেনার ডিজিএমও এবং বিএসএফ ও পাক রেঞ্জার্সের শীর্ষ বৈঠকও। উফা বিবৃতিতে এই বৈঠকটির কথাও বলা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারদের মতে, এই অবস্থায় ফের শীর্ষ পর্যায়ে কোনও যোগাযোগ না হলে অন্য বৈঠকগুলি করা কঠিন।

সে কথা মেনে নিচ্ছেন মোদী ঘনিষ্ঠেরাও। তাই আপাতত সমান্তরাল কূটনীতির মাধ্যমে ফের একটি শীর্ষ বৈঠকের জমি তৈরির দিকেই মন দিতে চান তাঁরা। মোদীর এই চেষ্টায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পিএমও-র অফিসারেরা। তাঁদের দাবি, এক সময়ে পুলিশকর্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন প্রাক্তন গোয়েন্দাপ্রধান ডোভাল। আরএসএস প্রভাবিত সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় উগ্র মনোভাবাপন্ন হিসেবেই তাঁকে চিনত পাকিস্তান। কিন্তু এখন অনেক বদলেছেন ডোভাল। কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি। পাক সরকারের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ভাল। দিল্লিতে পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতের সঙ্গে ব্যক্তিগত সমীকরণ রয়েছে ডোভালের। নওয়াজ-নরেন্দ্র বোঝাপড়ার পাশাপাশি এই সমীকরণ পরবর্তি শীর্ষ বৈঠকের জন্য জমি তৈরিতে সাহায্যও করবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা। সেখানে যাওয়ার কথা মোদী ও শরিফ-দু’জনেরই। এই মঞ্চে উফার মতোই দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক করার জন্য গোপনে প্রস্তুতি শুরু করেছে দিল্লি। নিউ ইয়র্কে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে আমেরিকাও চাপ দিচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে খবর।

আগামী জানুয়ারিতে ইসলামাবাদে সার্ক গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। তাতেও যোগ দিতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী। কারণ, ভারতের মতো বড় দেশের নেতা যোগ না দিলে সাধারণত সার্ক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়। অটলবিহারী জমানায় এক বার তা হয়েছিল। সে বারও সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ইসলামাবাদে। পরের বার ইসলামাবাদেই ওই সম্মেলনে যোগ দেন অটলবিহারী। মোদী শিবিরের মতে, সার্ক বহুদেশীয় মঞ্চ। মোদী জমানায় সার্কের অন্য দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ভারত অংশ না নেওয়ার ফলে সম্মেলন বাতিল হলে অন্য দেশগুলি দিল্লির দিকে আঙুল তুলতে পারে। সেই সুযোগ দিতে চান না মোদী। বরং ওই মঞ্চ ব্যবহার করেও অন্য পড়শি দেশগুলির পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রতিও বার্তা দিতে চান তিনি।

মোদী শিবিরের মতে, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে সঙ্ঘ পরিবারের কাছ থেকে পাকিস্তান-নীতি নিয়ে বাধা কম আসে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর লাহৌর বাসযাত্রার সময়েও সঙ্ঘ বাধা দেয়নি। বরং পাকিস্তানে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়। এখনও দেখা যাচ্ছে, সঙ্ঘ চুপ।

পিএমও সূত্রে খবর, উল্টে আরএসএস নেতা রাম মাধব পাকিস্তানের সঙ্গে সমান্তরাল (ট্র্যাক টু) কূটনীতিতে যুক্ত। তাতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সম্মতি রয়েছে। বরং তীব্র পাকিস্তান-বিরোধী হয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাই পাক-বিরোধী কট্টরপন্থীদের উস্কে দিচ্ছেন। কিন্তু তারাও আলোচনা পুরোপুরি বন্ধের কথা বলতে পারবে না। তাই এখনও শান্তিপ্রক্রিয়া এগোনো যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন মোদী।

পিএমও সূত্রে খবর, পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপ্রক্রিয়া চালালে দেশের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলেই মত মোদীর। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি গিয়ে মসজিদেও পা রেখে‌ছেন তিনি। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালানো সেই চেষ্টারই অঙ্গ। উল্টো দিকে, পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফকে সে দেশের সেনা এবং আইএসআইয়ের যৌথ চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে— এটাও মাথায় রাখা দরকার। মোদী শিবিরের মতে, তাই শরিফকে কিছু সময় দিতেই হবে। তা না হলে ফের ইসলামাবাদের মসনদ দখল করতে পারে সেনা। সে ক্ষেত্রে আলোচনার ক্ষেত্র পুরোপুরি নষ্ট হবে।

নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক বাঁচিয়ে এগোতে চান এখনও আশাবাদী নরেন্দ্র মোদী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy