অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু এখনও দিল্লি যেন রয়েছে দিল্লিতেই। প্রতিনিয়ত সেখানে ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটে চলেছে। ফের এক বার হাড়হিম করা ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজধানী। সেখানে ১৩ বছরের এক কিশোরকে জোর করে লিঙ্গ পরিবর্তন করিয়ে টানা ৩ বছর ধরে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নির্যাতিত ওই কিশোরের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্তরা এখনও অধরাই।
ঘটনার সূত্রপাত ৩ বছর আগে দিল্লির গীতা কলোনিতে। পুলিশ জানিয়েছে, লক্ষ্মীনগর এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোর নাচের অনুষ্ঠান করত। সে রকমই একটি অনুষ্ঠানে ছ’জনের একটি দলের সঙ্গে তার আলাপ। আরও অনুষ্ঠানে নাচের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ওই দলটি। মন্ডাবলীতে নিয়ে গিয়ে তাকে মঞ্চে অনুষ্ঠান করার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
এর পর ওই দলটির সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শুরু করে নির্যাতিত কিশোর। তার জন্য পারিশ্রমিকও পেতে শুরু করে। নাচই যে তার ভবিষ্যৎ, সে কথা ওই কিশোরের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। সেই মতো চেহারা আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা ধরনের ওষুধ খাওয়াতে শুরু করে। তার পর জোর করে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। মুঠো মুঠো হরমোনাল ওষুধ খেতে বাধ্য করা হয় তাকে। তাতে একটা সময় তার শরীরে বেশ কিছু নারীসুলভ পরিবর্তন দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: কৃষকদের শেষ করে দেওয়াই লক্ষ্য বিজেপি-র, বিক্ষোভ মিছিলে দাবি রাহুলের
পুলিশকে ওই কিশোর জানিয়েছে, শরীরে পরিবর্তন দেখা দেওয়ার পর তাকে বন্দি করে ফেলে অভিযুক্তরা। তার পর ছ’জন মিলে লাগাতার ধর্ষণ করতে শুরু করে। এমনকি বাইরে থেকে লোক এনেও তার ঘরে ঢুকিয়ে দিতে থাকে। দিনের বেলায় ট্র্যাফিক সিগন্যালে রূপান্তরকামী সাজিয়ে তাকে ভিক্ষা করতেও বাধ্য করে তারা। পুলিশে গেলে তার পরিবারও রক্ষা পাবে না, এমন হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাই বিনা প্রতিবাদে অত্যাচার সহ্য করতে থাকে সে।
কিছু দিন পর তার এক বন্ধুকেও অভিযুক্তরা ধরে আনে বলে পুলিশকে জানিয়েছে ওই কিশোর। ২০২০ সালের মার্চে লকডাউন চলাকালীন অভিযুক্তদের আস্তানা থেকে কোনওরকমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় তারা দু’জন। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রথম জনের বাড়িতে আশ্রয় নেয় দু’জনে। বাড়ি ভাড়া করে তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেন ওই কিশোরের মা। কিন্তু শীঘ্রই ওই বাড়ির হদিশ পেয়ে যায় অভিযুক্তরা। ভাঙচুর চালিয়ে সেখান থেকে ফের তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকে রাখা হয় ওই কিশোরের পরিবারের লোকজনকে। তার পর দফায় দফায় তাদের দু’জনকেই আগের মতো ধর্ষণ করতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: দিল্লি যাচ্ছেন শতাব্দী, শাহি-সাক্ষাতের সম্ভাবনা, রাজধানী থেকেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা
কিন্তু সম্প্রতি ফের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় ওই দুই কিশোর। অভিযুক্তদের আস্তানা থেকে বেরিয়ে নয়াদিল্লি স্টেশনে ঠাঁই নেয় তারা। একটা গোটা দিন স্টেশনেই কাটে তাদের। তার পর এক আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাঁকে পুরো ঘটনা বলার পর তিনিই দু’জনকে দিল্লি মহিলা কমিশনে নিয়ে যান। নির্যাতিত দুই কিশোরের বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৭৭ (জোর করে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা), ৩৬৩ (অপহরণ), ৩২৬ (ইচ্ছাকৃত ভাবে আস্ত্র দিয়ে আঘাত করা), ৫০৬ (হুমকি/ভয় দেখানো), ৩৪১ (কাউকে আটকে রাখা) এবং এবং যৌন নির্যাতন থেকে শিশু সুরক্ষা আইনে (পকসো) মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের নাগাল মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy