Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India-China Clash

ডিবিও সড়ক লক্ষ্য চিনের, প্রহরায় সেনা

ওই রাস্তার সমান্তরালে চিনের দিকে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে একাধিক সেনাছাউনি। আনোগোনা বেড়ে যায় সাঁজোয়া গাড়ির। মোতায়েন হয় সেনা। 

এই ডিবিও সড়কই চিনের নজরে। —ফাইল চিত্র

এই ডিবিও সড়কই চিনের নজরে। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০৪:৩২
Share: Save:

প্যাংগং, গালওয়ান উপত্যকার পর এ বার চিনের নজর দৌলত বেগ ওল্ডি (ডিবিও) সড়ক। যা রুখতে তড়িঘড়ি গত রাতে দারবুক-শাইয়োক-ডিবিও সড়ক জুড়ে বিপুল সেনা মোতায়েন করল ভারত। গালওয়ান উপত্যকা হয়ে কারাকোরাম গিরিপথ পর্যন্ত চলে যাওয়া রাস্তা লাদাখের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অংশকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়েছে। চিনকে চাপে রাখতে রণকৌশলগত ভাবে ওই রাস্তা ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দিকে অধিকৃত আকসাই চিনের নিরাপত্তার প্রশ্নে ওই সড়ক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করে বেজিং। প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একাংশের তাই আশঙ্কা, এই ধাক্কায় ওই সড়ককেও নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা বেজিং করতেই পারে।

সোমবার লাদাখ সীমান্তে ভারত ও চিনের সেনা-কর্তাদের বৈঠকে সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে দু’পক্ষই সেনা কমাতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে ডিবিও সড়কের কাজ আটকে দেওয়ার তৎপরতা শুরু করে চিনা সেনা। ওই রাস্তার সমান্তরালে চিনের দিকে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে একাধিক সেনাছাউনি। আনোগোনা বেড়ে যায় সাঁজোয়া গাড়ির। মোতায়েন হয় সেনা।

ডেপসাং এলাকার একটি বড় অংশে চিনা সেনা অনুপ্রবেশ করে বসে রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে কংগ্রেস। সহমত প্রাক্তন সেনাদের একাংশ। গালওয়ানের পরে ডেপসাং হাতছাড়া হওয়ার খবর অবশ্য বাহিনী মানতে রাজি নয়। নর্দান কম্যান্ডের এক শীর্ষ কর্তার মতে, চিনা সেনা ডেসপ্যাং এর খুব কাছে ঘঁাটি গেড়েছে। যা ডিবিও সড়কেরও খুব কাছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে লাদাখের মতো দুর্গম এলাকায় সেনা ও রসদ দ্রুত পৌঁছে দিতে ডেপসাংয়ের কাছে সম্প্রতি ভারত একটি এয়ারস্ট্রিপ বানিয়েছে। তাতে আপত্তি ছিল বেজিংয়ের। আকসাই চিনকে সংযুক্ত করে তিব্বত-জিংজিয়াং হাইওয়ের খুব কাছ দিয়ে গিয়েছে ডিবিও সড়কটি। ফলে লাদাখ থেকে আকসাই চিন— গোটা এলাকায় তাদের সুরক্ষার প্রশ্নে গোড়া থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-র সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে দৌড়নো ডিবিও সড়ক চিনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। অনেকের মতে, এই সুযোগে ডেপসাং পেরিয়ে ডিবিও সড়ক কব্জা করে গলার কাঁটা উপড়ে ফেলতে চাইছে চিন।

সরকার এ প্রসঙ্গে নীরব হলেও, বুধবার থেকেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন শুরু হয়েছে সড়ক জুড়ে। মোতায়েন করা হয়েছে বেশি উচ্চতায় লড়াইয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা ও কম্যান্ডোকে। সেনা সূত্রের মতে, চলতি সপ্তাহে দুটি প্যারা কম্যান্ডো ইউনিটকে কাশ্মীর থেকে লাদাখে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি ইউনিট রাষ্ট্রীয় রাইফেলের সঙ্গে ছিল ও দ্বিতীয় ইউনিটটি ছিল ইনফ্র্যান্ট্রি ব্রিগেডের সঙ্গে। সেনা সূত্রের খবর, সীমান্তে উত্তাপ ছড়ানোর পরে এ পর্যন্ত শ্রীনগর ও লে থেকে সাত ব্যাটালিয়ন সেনা লাদাখে পাঠানো হয়েছে। আজ দিনভর চক্কর কেটেছে বায়ুসেনার বিমানও।

সীমান্তে শান্তি ফেরানোর প্রশ্নে দু’দেশ আলোচনা চালালেও, কংগ্রেসের অভিযোগ গালওয়ান উপত্যকায় যে ভাবে চিন প্রায় ১০ হাজার সেনা এবং তাদের জন্য রসদ-গোলাবারুদের ভাণ্ডার মজুত করেছে, তাতে তারা সহজে যাওয়ার নয়। কংগ্রেস নেতা পবন খেড়ার অভিযোগ, পিছু হটার বদলে চিনা সেনা গালওয়ান উপত্যকার পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪ কব্জা করে নিয়েছে। সরকারের উচিত দেশকে প্রকৃত সত্য জানানো। এলএসি নিয়ে টানাপড়েন ঘিরে আজ বিদেশ মন্ত্রকের স্বীকারোক্তি— ভারত সীমান্তে স্থিতাবস্থা চাইলেও, চিনা সেনা তা লঙ্ঘনের চেষ্টা করায় সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নয়াদিল্লি এখনও চায় আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তে শান্তি ফিরুক।

কিন্তু তাতে কাজ না-হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নির্ভর করছে সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নরবণের রিপোর্টের উপর। দু’দিন লাদাখের পরিস্থিতি দেখে আজ দিল্লি ফিরে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত-সহ অন্য দুই সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা তাঁর। সূত্রের মতে, বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। তার পরেই ঠিক হবে পরবর্তী রণকৌশল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy