রাহুল গান্ধী। —ফাইল ছবি।
লোকসভা ভোটে সংবিধান হাতে রাহুল গান্ধীর প্রচারের সুবাদে দলিত ভোট কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছিল। কিন্তু সেই ভোট যে কংগ্রেসের থেকে সরে যাচ্ছে, তা হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে টের পেয়েছে কংগ্রেস। এ বার মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমে কংগ্রেস টের পাচ্ছে, পশ্চিমের এই রাজ্যেও দলিতরা একই ভাবে কংগ্রেসের প্রতি অখুশি। হরিয়ানায় ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার নেতৃত্বে শুধুমাত্র জাঠ নেতারা গুরুত্ব পাওয়ায় দলিতরা বাকি অ-জাঠ সম্প্রদায়ের মতো কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। একই ভাবে মহারাষ্ট্রে মরাঠা নেতারা গুরুত্ব পাওয়ায় দলিতেরা ক্ষুব্ধ বলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট এসেছে।
হরিয়ানায় দশ বছর সরকার চালানোর পরে বিজেপির প্রতি জনমানসে ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস তার ফায়দা তুলতে পারেনি। হেরে যাওয়ার পরে কংগ্রেস বুঝেছে, লোকসভা নির্বাচনের সময় দলিত ভোটের সুবাদেই কংগ্রেস হরিয়ানায় ১০টির মধ্যে ৫টি আসন জিতেছিল। কারণ লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী ‘চারশো পার’-এর ডাক দেওয়ায় দলিতদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছিল যে, বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলে সংবিধান বদলে দেবে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে হরিয়ানায় দলিতরা রাজনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছেন না দেখে কংগ্রেসের থেকে সরে গিয়েছিলেন। এক দিকে কংগ্রেসের পক্ষে জাঠ, অন্য দিকে বিজেপির পক্ষে দলিত, ওবিসি-সহ সমস্ত অ-জাঠ সম্প্রদায়ের মেরুকরণের ফলে হরিয়ানার জেতা ম্যাচ কংগ্রেস হেরে যায়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এরই পুনরাবৃত্তি মহারাষ্ট্রের ভোটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কী ভাবে? কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যায় মরাঠাদের হার ৩২ শতাংশ। দলিতদের হার ২৭ শতাংশ। কিন্তু শুধুমাত্র মরাঠা নেতারাই কংগ্রেসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। দলিতরা মনে করছেন, রাহুল গান্ধী জনসংখ্যায় যার যত ভাগ, তাঁদের ততখানি সংরক্ষণ দেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু কংগ্রেসের সংগঠনে বা প্রার্থীতালিকায় দলিতরা জনসংখ্যায় ভাগ অনুযায়ী গুরুত্ব পাচ্ছেন না। যার সবথেকে বড় প্রমাণ হল, কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে ৯৯ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র ১২ জন দলিত।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের দলিতদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ বৌদ্ধ। এই বৌদ্ধ দলিতদের মধ্যে কংগ্রেসের প্রতি ক্ষোভ হরিয়ানার দলিতদের থেকেও বেশি। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে নিজে দলিত হলেও তার প্রভাব মহারাষ্ট্রে বিশেষ নেই। উল্টে এই বৌদ্ধ দলিতদের মধ্যে প্রশ্ন হল, কংগ্রেস কত জন বৌদ্ধ দলিত নেতাকে দলে গুরুত্ব দিয়েছে? কংগ্রেসের উপর থেকে নিচুতলায় কত জন দলিত নেতা রয়েছেন?” মহারাষ্ট্রের দলিত নেতা মুকুল ওয়াসনিক বহু বছর ধরে কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদে রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে দলিত সমাজের প্রশ্ন, ওয়াসনিক দীর্ঘদিন রাজ্যসভায় থাকলেও দলিতদের জন্য কী করেছেন?
মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে দলিতদের এই ক্ষোভের কতখানি প্রভাব পড়তে পারে? কংগ্রেস শিবিরের অঙ্ক বলছে, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ২৮৮টি আসনের মধ্যে ৮৮টি আসনে দলিত ভোটের হার ১৫ শতাংশের বেশি। লোকসভা ভোটে এই ৮৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৩১টি আসনে এগিয়ে ছিল। তার সঙ্গে শরদ পওয়ারের এনসিপি ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনাকে ধরলে মহা বিকাশ আঘাড়ী জোট ৫১টি আসনে এগিয়ে ছিল। কারণ সে সময় বিজেপি সংবিধান বদলে দেবে বলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। অম্বেডকর সোশ্যাল ফোরামের মতো সামাজিক সংগঠন প্রচার করেছিল যে, ‘সংবিধান তৈরির সময়ই আরএসএসের মুখপত্র মনুস্মৃতির শ্লোক নেই কেন বলে আপত্তি তুলেছিল। বাবাসাহেব অম্বেডকরের তৈরি সংবিধানকে ব্রিটিশ সংবিধানের নকল বলেও বিদ্রুপ করেছিল।’ তার সুফল কংগ্রেস পেয়েছে। এখন কংগ্রেস দলিতদের গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে সেই অম্বেডকর-অনুগামীদের মধ্যেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy