মুম্বইয়ের উপকূলে আছড়ে পড়তে চলেছে সাইক্লোন ‘নিসর্গ’। ছবি: পিটিআই
দু’সপ্তাহও কাটল না। আমপানের পর এ বার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ না হওয়া সত্ত্বেও নিসর্গ আছড়ে পড়তে চলেছে মুম্বইয়ের উপকূলে। আগামিকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাণিজ্যনগরীর উপকূলে ‘নিসর্গ’ আছড়ে পড়লে তা বিরল ঘটনা হিসেবে ঠাঁই পাবে ইতিহাসের পাতায়। প্রায় ১৪০ বছরে মুম্বইয়ে কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূলে রয়েছে একাধিক ভৌগোলিক কারণ। এমনিতেই আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, আবার তৈরি হলেও ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক কারণে তা মুম্বইয়ে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না।
আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা মুম্বই শেষ ঘূর্ণিঝড় দেখেছিল ১৮৮২ সালে। এখনকার মতো সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের আলাদা করে নামকরণ করা হত না। মূলত যেখানে উপকূলে আছড়ে পড়ত, সেই জায়গার নামানুসারেই নাম হত। তাই সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘বম্বে সাইক্লোন’। বম্বে সাইক্লোনে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মানুষের। তার আগেও সাইক্লোনের ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বুকে সাইক্লোনের নজির খুঁজে পাওয়া যায় না।
কেন এমন হয়? আবহবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ও প্রধান কারণ, আরব সাগরের জলবায়ুর প্রকৃতি। এমনিতেই আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি খুব কম তৈরি হয়। সেখানে বঙ্গোপসাগরে বছরে গড়ে ৫-৬টি সাইক্লোন তৈরি হয়। তার মধ্যে আবার ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় দু’টি। অন্য দিকে আরব সাগরে একটি বা দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেও তা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব কম।
আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহ ও আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির কারণে কোনও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে তা ওমান বা আডেন উপসাগরের দিকে ঘুরে যায়। অথবা গুজরাত উপকূলের দিকে ঘুরে যায়। বম্বে আইআইটির মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শ্রীধর বালাসুব্রহ্মনিয়ণের ব্যাখ্যা, আরব সাগরের পূর্বমুখী বায়ুপ্রবাহ ঘূর্ণিঝড়কে হয় ওমান ও আডেন উপসাগরের দিকে অথবা গুজরাতের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। যেমন ২০১৯ সালে আরব সাগরে সৃষ্ট সাইক্লোন ‘কিয়ার’ আছড়ে পড়েছিল ওমানে। একই কারণে ২০১৭ সালে সাইক্লোন ‘বায়ু’ তাণ্ডব চালিয়েছিল গুজরাতের উপকূলে।
আরও পড়ুন: লাল সতর্কতায় মুম্বই, দুই রাজ্যে প্রবল সাইক্লোন ‘নিসর্গ’ ঝাঁপাবে কাল দুপুরে
প্রাক বর্ষার সময় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুপ্রবাহও কার্যত দেওয়াল তুলে দিয়ে রক্ষা করে মুম্বইয়ের উপকূল। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের জেরে গোটা পশ্চিম উপকূল জুড়ে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়। আবহবিদ্যার পরিভাষায় যার নাম ‘সাবট্রপিক্যাল রিজ’। বালাসুব্রহ্মনিয়ণ বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতাই হল এই সাবট্রপিক্যাল রিজ বরাবর প্রবাহিত হওয়া। কিন্তু সাইক্লোন তৈরি হলেও এই উচ্চচাপ বলয় তার শক্তি উপকূলে আসা পর্যন্ত একেবারে কমিয়ে দেয়।’’ উদাহরণ হিসেবে ২০১৭ সালের সাইক্লোন ‘ওচখি’ মুম্বইয়ের উপকূলে প্রভাব ফেলেছিল বটে, কিন্ত কিন্তু উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় তা সাধারণ ঝড়ে পরিণত হয়েছিল। ফলে মুম্বইয়ের উপকূল ঘূর্ণিঝড় থেকে কার্যত নিরাপদই।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পডু়ন: মে মাসে কাজে যোগ দিয়েছেন ২ কোটির বেশি মানুষ, আশা জাগাচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট
কিন্তু সেই নিরাপদ উপকূলেই ১৮৮২-র পর ফের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতে চলেছে। এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া দফতরের যা পূর্বাভাস, তাতে ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই আছড়ে পড়তে চলেছে বাণিজ্যনগরীতে। সঙ্গে বিপুল জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতাও রয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী। মহারাষ্ট্র-গুজরাত মিলিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০টি দল মোতায়েন করা হয়েছে।
মেঘাচ্ছন্ন মুম্বইয়ের আকাশ। ছবি: পিটিআই
এমনিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভয়াবহ অবস্থা মুম্বইয়ের। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আক্রান্ত ও মৃতই এই রাজ্যের। মহারাষ্ট্রের মধ্যেও আবার ভয়াবহ পরিস্থিতি মুম্বই ও মুম্বই শহরতলির। তার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে বিপদ আরও বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। আমপানের পর যেমন পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল, তেমনটা হতে পারে মুম্বই তথা মহারাষ্ট্রেও। তাই হাসপাতালগুলিতে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুম্বই, ঠাণে, পালঘর, রাইগড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা রয়েছে সিন্ধুদুর্গ, রত্নগিরি, পালঘর, ঠাণে, মুম্বই ও নাসিকে। এ ছাড়া গুজরাতেও জারি হয়েছে সতর্কতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy