Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

লেজের ধাক্কাতেই পুরনো ত্রাসের ছায়া 

এ যাত্রাও সকালের দিকে সমুদ্রের চেহারাটা দেখে সব কিছু ভরাডুবির ভয়টাই চেপে বসছিল। 

তছনছ: ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের রসগোবিন্দপুরে। বুধবার। পিটিআই

তছনছ: ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের রসগোবিন্দপুরে। বুধবার। পিটিআই

নবঘন মাহারানা
পারাদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০৫:০৫
Share: Save:

ঘুমটা ভেঙে গেল মঙ্গলবার রাত ৩টে নাগাদ। সোঁ-সোঁ হাওয়া আর বৃষ্টির ঝমঝম। ঘরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ভয়ে-ভয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। সকালে হাওয়াটা আরও চার গুণ বেড়ে গেল। বুধবার বিকেল পর্যন্ত সেই হাওয়াটাই আমাদের তাড়া করে গেল।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম শুনলেই এখনও আছড়ে পড়ে বিশ বছর আগের স্মৃতি। তখন আমি মোটে চার বছরের। সুপার সাইক্লোনে এক পড়শি কাকু আমায় কাঁধে তুলে নিয়ে একটা স্কুলবাড়ির চাতালে বুক জলে দাঁড়িয়েছিলেন। পারাদ্বীপে ঝড় হলেই সুনামির মতো সমুদ্র সব কিছু গিলে ফেলার ভয়টা চেপে বসে।

এ যাত্রাও সকালের দিকে সমুদ্রের চেহারাটা দেখে সব কিছু ভরাডুবির ভয়টাই চেপে বসছিল।

আমাদের বাড়ি পারাদ্বীপের বাগাড়িয়া এলাকায়। সমুদ্র থেকে মেরেকেটে কিলোমিটার তিনেক। সকালের দিকে একবার বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়ে দেখি হাওয়ার মুখে পা চলছে না। জোর করে মোটরবাইকটায় সওয়ার হতে গিয়েও বসতে পারলাম না। ওটা লটপট করছে। আমি অয়েল রিফাইনারির স্টোরকিপার। আগের রাতেই প্রশাসনের তরফে মাইকে সাবধান করা হয়েছিল, বাড়ি থেকে পারতপক্ষে বেরোবেন না। দরকারি কাগজপত্র উঁচু জায়গায় গুছিয়ে রাখুন। তবু স্থানীয় টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার বন্ধুর সঙ্গে চার চাকার গাড়িতে আমিও একবারটি সমুদ্রের ধারে গিয়েছিলাম।

ঢেউয়ের লহর তখন প্রায় দেড়তলা ছুঁয়ে ফেলছে। জওহরলাল নেহরু বাংলা জেটির কাছে মাছ ধরার বড়-বড় বোটগুলো শালপাতার পলকা ডোঙার মতো দুলছিল। কিছু ক্ষণ পরে আর দাঁড়ানোর সাহস পাইনি। পরে একটা ভিডিয়োতে দেখি, দু’টো বোট ডুবে গিয়েছে। এই বন্দর শহরের দিকে দিকে গাছ পড়েছে। অনেক রাস্তা বন্ধ। এই অবস্থায় আর কে অফিস যাবে!

গত বছর ফণীর সময়েও খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সে বার পুরী-ভুবনেশ্বরই আসল ধাক্কাটা টের পায়। এ বার যা শুনেছি, আমপানের লেজের ধাক্কাটা আমাদের ওড়িশার দিকে এসে পড়েছে। তাতেই প্রাণটা শুকিয়ে গিয়েছিল। আসলে আমরা পারাদ্বীপের লোক সুপার সাইক্লোন হাড়ে-হাড়ে চিনি। বিশ বছর আগে অত ছোট বয়সের কথাও মনে গেঁথে আছে। তিন দিন খাবার-জল জোটেনি। এমনকি জল খাওয়ার গ্লাস-বাটিও ছিল না। একটা কাপড়ে বৃষ্টির জল ফোঁটা ফোঁটা নিংড়ে মা মুখে দিতেন। পেটখারাপের ভয়টয়ও তখন মাথায় উঠেছে।

বিশ বছরে দেশ অনেকটা এগিয়েছে। তবু প্রকৃতির খেয়ালের সঙ্গে কত দূরই বা টক্কর সম্ভব। তাই আগের রাতেই বাড়িতে যথেষ্ট জল মজুত রাখি। এ বার তো ঝড়ের পাশাপাশি কোভিডেরও খাঁড়া। আমাদের জগতসিংহপুর জেলাটাই (পারাদ্বীপ বন্দর যেখানে) রেড জ়োন। ভয় ছিল, ঘরছাড়া হলে কোথায় গাদাগাদি করে থাকতে হবে। শেষমেশ অল্প লোককেই বাড়ি থেকে শিবিরে সরাতে হয়েছে। বিকেল ৩টের থেকে হাওয়ার গতি কমতে থাকে। জগন্নাথ রক্ষে করেছেন।

সন্ধেয় কলকাতার তাণ্ডবের খবরের সময়েও কিন্তু আমাদের ঘরে বিদ্যুৎ নেই।

লেখক: স্থানীয় বাসিন্দা

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy