কে কে শৈলজা।
সম্মেলনের পাঁচ মাসের মাথায় রাজ্য সম্পাদক বদল করতে হল কেরলের ক্ষমতাসীন সিপিএমকে। অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। তাঁর জায়গায় দলের নতুন রাজ্য সম্পাদক হলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং রাজ্যের মন্ত্রী এম ভি গোবিন্দন মাস্টার। সিপিএমে রাজ্য সম্পাদক হয়ে মন্ত্রী থাকার রেওয়াজ নেই। দলের রাজ্য সম্পাদক পদে পরিবর্তনের পরে এ বার পিনারাই বিজয়নের মন্ত্রিসভাতেও রদবদলের সম্ভাবনা প্রবল বলেই সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত।
সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য বালকৃষ্ণন বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ। শারীরিক কারণেই আগে এক বার তাঁকে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে হয়েছিল। কিন্তু মাদক পাচারের মামলায় নাম জড়িয়ে তাঁর ছেলে গ্রেফতার হওয়ায় যে বিতর্ক বেধেছিল, তার জেরেই বালকৃষ্ণনকে পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে— এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত হতে না দেওয়ার লক্ষ্যে বালকৃষ্ণনকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছিল কিছুটা সুস্থ হতেই। কোচিতে গত মার্চে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে তিনি তৃতীয় বারের জন্য পূর্ণ সময়েরই সম্পাদক হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর অসুস্থতা আবার বেড়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন দু’দিন আগে। চেন্নাইয়ে তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা আজ, সোমবার। তার আগে রবিবার তিরুঅনন্তপুরমে বালকৃষ্ণনের ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও আরও এক পলিটবুরো সদস্য এম এ বেবি।
তিরুঅনন্তপুরমের এ কে জি সেন্টারে ইয়েচুরি, দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, পলিটবুরোর সদস্য বেবি এবং এ বিজয়রাঘবনের উপস্থিতিতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং রাজ্য কমিটির বৈঠকে গোবিন্দনকে নতুন সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে। সূত্রের খবর, আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদল সম্ভাব্য হয়ে উঠেছে। এবং দ্বিতীয়ত, রাজভবনে আটকে রয়েছে ১১টি বিল। সই করতে রাজি হচ্ছেন না রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাতের সুর কি এ বার আরও চড়া করবে সিপিএম?
সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মন্ত্রী সাজ়ি চেরিয়ান ইস্তফা দিয়েছেন কিছু দিন আগে। সেই জায়গা এখন ফাঁকা। স্থানীয় স্ব-শাসন এবং আবগারি দফতরের মন্ত্রী গোবিন্দন দলের রাজ্য সম্পাদক হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রিসভায় তাঁর জায়গাও খালি হওয়া আসন্ন। দলের অন্দরে ভাবনা রয়েছে, নতুন কয়েক জন মুখকে মন্ত্রিসভায় এনে শূন্যস্থান পূরণ করার। আবার অন্য একটি সূত্র নিয়েও চর্চা চলছে, স্পিকার এম বি রাজেশকে ওই পদে ইস্তফা দিইয়ে তাঁকে মন্ত্রিসভায় আনার। সে ক্ষেত্রে স্পিকারের দায়িত্বে নিয়ে যাওয়া হতে পারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জকে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদে ফেরানোর কথা ভাবা হতে পারে কে কে শৈলজাকে। যদিও তিনি এখন বিধায়ক নন। কিন্তু নিপা ভাইরাস, করোনার পরে মাঙ্কি পক্স, টম্যাটো ফ্লু যে ভাবে একের পর এক ঢুকছে কেরলে, তাতে অতিমারি মোকাবিলায় প্রশংসিত শৈলজার অভিজ্ঞতা কাজে আসতে পারে। রদবদল প্রসঙ্গে গোবিন্দন অবশ্য বলেছেন, ‘‘এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে হবে।’’
এখনও পর্যন্ত সিপিএম রাজ্যপালকে পাল্টা আক্রমণে গেলেও বিজয়নের সরকার রাজভবনের সঙ্গে সমঝোতা রাখার কৌশল নিয়েই চলেছে। তবে রাজ্যপাল আরিফ এখন আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন। দলের নেতা হিসেবে গোবিন্দন বালকৃষ্ণনের চেয়ে ঢের বেশি ক্ষুরধার বলে পরিচিত। ইয়েচুরিরা তাঁকেই রাজ্য সম্পাদক হিসেবে বেছে নেওয়ায় এ বার রাজ্যপাল-সহ অন্য বিষয়ে সিপিএমের রণ-কৌশল কেমন হয়, সে দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক শিবিরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy