Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
CPM

President Election 2022: ‘তৃণমূলের প্রার্থী’ যশবন্তকে সমর্থন! কিল খেয়ে কিল হজম করতে হচ্ছে সিপিএমকে

সরাসরি তৃণমূলের কোনও নেতাকে (যদিও প্রার্থী হওয়ার অব্যবহিত আগে যশবন্ত দলীয় পদ ছেড়ে দিয়েছেন) বামেদের সমর্থন করতে যাওযার ঘটনা এই প্রথম।

যশবন্ত সিন্হা

যশবন্ত সিন্হা ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২২ ০৭:০৩
Share: Save:

কথায় বলে, ঠেলায় পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় একই রকম অবস্থা সিপিএমের! বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে আসা যশবন্ত সিন্হাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করতে গিয়ে দলের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি এবং ক্ষোভ। কিন্তু বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে আপাতত কিল খেয়ে কিল হজম করা ছাড়া সিপিএমের উপায়ও নেই!

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায় বা মীরা কুমারের পক্ষে অতীতে সিপিএম ও তৃণমূল একসঙ্গে ভোট দিয়েছে। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সমন্বয় রেখে চলার ইতিহাসও পুরনো। কিন্তু সরাসরি তৃণমূলের কোনও নেতাকে (যদিও প্রার্থী হওয়ার অব্যবহিত আগে যশবন্ত দলীয় পদ ছেড়ে দিয়েছেন) বামেদের সমর্থন করতে যাওযার ঘটনা এই প্রথম। তিন মাস আগেই কান্নুরে পার্টি কংগ্রেসের অবসরে দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট স্পষ্ট বলেছিলেন, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের যা কাজকর্ম, তার প্রেক্ষিতে তৃণমূলকে তাঁরা ‘গণতান্ত্রিক শক্তি’ বলে মনে করেন না। এখন বিজেপির বিরুদ্ধে সার্বিক ঐক্যের প্রশ্নে সেই দল থেকে আসা এক প্রার্থীকে সমর্থন করা নিয়েই দলে, বিশেষত বঙ্গ সিপিএমে প্রশ্ন উঠেছে। তার উপরে যশবন্তের বিজেপি-অতীতের কারণে এই প্রশ্ন আরও বেশি। তবে বাংলা থেকে এখন লোকসভা ও বিধানসভায় দলের কোনও প্রতিনিধি না থাকায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট! বস্তুত, বাংলা থেকে ভোট নেই বলেই তৃণমূলের নেতাকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়ার পথে এগোতে সুবিধা হয়েছে সীতারাম ইয়েচুরিদের।

কেরল, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র বা বিহার থেকে বাম সাংসদ ও বিধায়কদের যশবন্তকেই ভোট দিতে হবে। বাংলা থেকে সরাসরি সেই কাজ করতে হবে একমাত্র রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে। যিনি মনে করছেন, ‘‘জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে একটা অবস্থান নিতেই হত। কিন্তু প্রার্থী বাছাই নিয়ে আরও ভাবা যেত।’’

বাম মহলের একাংশ অবশ্য এই সিদ্ধান্তে খুশি। তাদের মতে, বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে সিপিএম যে তৃণমূলের সদ্যপ্রাক্তন সহ-সভাপতিকে সমর্থন করতেও রাজি হয়েছে, এটাই এই সময়ের প্রয়োজনীয়তা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, এর ফলে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের বাতাবরণ আরও জোরালো হবে। কিন্তু বাম শিবিরেরই বড় অংশের পাল্টা মত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী জোটের ছবি লোকসভা ভোটের ময়দানে নামলেই ধাক্কা খাবে। তখন রাজ্য স্তরের সমীকরণ অনুযায়ীই প্রার্থী দিয়ে লড়াই হবে। মাঝখান থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এই ছবি দেখিয়ে বামেদের তৃণমূল-বিরোধী লড়াই নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে যাবে বিজেপি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়াইটা কার্যত হচ্ছে বিজেপিরই ‘এ’ বনাম ‘বি’ প্রার্থীর! গোধরা-কাণ্ডে নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাকে এক সময়ে সমর্থন পর্যন্ত করেছিলেন যশবন্ত। বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে উপনির্বাচনে আমরা তেড়েফুঁড়ে নামলাম আর সেই বিজেপির মন্ত্রিসভায় কাজ করে আসা আর এক জনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থন করলাম— এই দুই অবস্থানকে মানুষকে বোঝানোর সমস্যা আছেই!’’

বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্যই শরদ পওয়ারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার আগেই যশবন্তকে তৃণমূল ছাড়ার কথা বলতে হবে। যশবন্ত তেমনই করেছেন। কিন্তু তাতেও বিড়ম্বনা এড়ানো যাচ্ছে না। ইয়েচুরির যুক্তি, অন্য অবস্থান নিতে গেলে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর ‘দায়’ তাঁদের উপরে এসে পড়তো। এমনকি, বাম ঐক্যেও চিড় ধরতো। জেতা যাবে না জেনেও এপিজে আব্দুল কালামের বিরুদ্ধে বামেরা লক্ষ্মী সহগলকে প্রার্থী করেছিল রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ইয়েচুরিদের মত, এখন সেই কাজ করলে বা নির্বাচন থেকে দূরত্ব রাখলে বিজেপিকে ‘সুবিধা’ করে দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ উঠতো!

অস্বস্তি বুঝেই কয়েক দিন কেন্দ্রীয় কমিটির অনলাইন বৈঠকে ইয়েচুরি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, কেন মমতার ডাকা বিরোধী জোটের বৈঠকে তাঁরা গিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পরে গোটা বিষয়টাই শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে! নেতারা এখন প্রকাশ্যে মুখ বন্ধ রাখলেও পরে জলঘোলা হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে দলের একাংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

CPM TMC Yashwant Sinha President Election 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE