মন্ত্রিসভার তালিকা নিয়ে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের কাছে পিনারায় বিজয়ন। ইনসেটে, কে কে শৈলজা। নিজস্ব চিত্র।
রোদ চড়া থাকতে থাকতে খড় শুকিয়ে নাও। কিংবা ঝোপ বুঝে কোপ মারো!
যে দিক থেকেই ব্যাখ্যা করা যাক না কেন, পুরনো ওই প্রবাদের পথেই হাঁটল কেরলের সিপিএম। নজির গড়ে রাজ্যে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে শুধু মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে রেখে বদলে ফেলা হল গোটা মন্ত্রিসভাই! সেই ধাক্কায় বাইরে চলে গেলেন কোভিড মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা কুড়নো কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজাও। যিনি এ বার দক্ষিণী ওই রাজ্যে প্রায় ৬২% ভোট পাওয়ার রেকর্ড গড়ে জিতেছেন। মন্ত্রিত্বে নতুন মুখের সারিই শুধু নয়, প্রাক্তন সাংসদ এবং সদ্য বিধানসভায় জয়ী তরুণ নেতা এম বি রাজেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে স্পিকার পদে।
বাংলায় ১৫ বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক বিধায়ককে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস। তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি তাঁর মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ এনেছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এমন জয়ের পরে যত বেশি সম্ভব নতুন মুখকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার পক্ষপাতী ছিলেন যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সমান্তরাল যুক্তি ছিল, নীতিগত ভাবে এই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হলেও যাঁরা দীর্ঘ দিন দলের ভাল-মন্দে সঙ্গে আছেন, তাঁদের এক ঝটকায় সরিয়ে ফেলা বাস্তবে সমীচীন হবে না। ফলত, ভারসাম্য রেখে মন্ত্রিসভা গড়তে হয়েছে মমতাকে।
কেরলে সিপিএম এ বার টানা দু’দফা বা তার বেশি দিন বিধায়ক আছেন, এমন নেতা-নেত্রীদের প্রার্থী করেনি। ভোটে জেতার পরে মন্ত্রিসভা গঠনে তাদের সিদ্ধান্ত অতীতের এই সব নজিরকেই ছাপিয়ে চলে গেল!
কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই শৈলজাকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশ জুড়ে। দক্ষ হাতে করোনা মোকাবিলা করে কেরলকে তিনি সামনের সারিতে এনে দিয়েছিলেন। সেই শৈলজাকে বাদ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে সিপিএম বড় বেশি ঝুঁকি নিল, এই পরিণাম ভাল না-ও হতে পারে— এমন মত দিতে শুরু করেছেন বামপন্থীদের বড় অংশই। এমনকি, বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা ও সাংসদ শশী তারুর মন্তব্য করেছেন, ‘‘তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতার পাশাপাশিই তাঁকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সব সময় হাতের কাছে পেয়েছি, সহায়তা পেয়েছি। মন্ত্রিসভায় শৈলজা থাকবেন না, ভেবে খুবই খারাপ লাগছে!’’
স্বয়ং শৈলজা অবশ্য সব ক্ষোভ-আক্ষেপে জল ঢেলে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বিষয় রসায়ন। আমিও তো পাঁচ বছর আগে স্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রিত্বে নতুন ছিলাম। দল একটা দায়িত্ব দিয়েছিল, সেটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করেছি। নতুনদেরও একই ভাবে সুযোগ দিতে হবে, তাঁরাও ভাল কাজ করবেন।’’ শৈলজার মতে, করোনা মোকাবিলার কাজ এখন একটা ‘সিস্টেম’-এর মধ্যে চলছে, মন্ত্রী বদলে তার কোনও ক্ষতি হবে না।
তিরুঅনন্তপুরমে মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে মন্ত্রিসভা সম্পর্কিত এই চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। তার পরে এলডিএফের বৈঠক সেরে রাজভবনে ২১ জনের মন্ত্রিসভার তালিকা জমা দিয়েছেন বিজয়ন। মুখ্যমন্ত্রী বাদে মন্ত্রিসভায় সিপিএমের ১১ এবং সিপিআইয়ের ৪ জনই নতুন। অন্যান্য বাম শরিকদের হাতে থাকছে ৫টি মন্ত্রিপদ। সিপিএমের মন্ত্রী তালিকায় রয়েছেন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি মহম্মদ রিয়াস ও মহিলা সংগঠনের নেত্রী আর বিন্দু। এঁরা পারিবারিক সম্পর্কে যথাক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের জামাই ও ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদক এ বিজয়রাঘবনের স্ত্রী। শপথ গ্রহণ হবে কাল, বৃহস্পতিবার।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিন বিজয়ন ও কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন ছাড়াও ছিলেন পলিটবুরোর আরও দুই সদস্য এস আর পিল্লাই এবং এম এ বেবি। সূত্রের খবর, শৈলজাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশেরও ভিন্ন মত আছে। তাই বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে জলঘোলা হতে পারে। তবে কেরল রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, দ্বিতীয় দফা হয়ে যাওয়ায় বিজয়নেরও এটা শেষ বার। নতুন নেতৃত্বকে জায়গা তৈরি করে দেওয়ার নীতি নিয়েই তাঁরা চলছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy