যাদবপুরে হচ্ছে না ‘গো বিজ্ঞান পরীক্ষা’।
‘গো বিজ্ঞান’ নিয়ে পরীক্ষা নিতে বলেছে ইউজিসি। এই মর্মে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠিও গিয়েছে। কিন্তু এমন কোনও পরীক্ষা হচ্ছে না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শিশুদের পাঠ্যক্রমে এত দিন ‘রচনা’ হয়েই থেকে গিয়েছিল গরু। তাকে জনমানসে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে নিতে চেষ্টায় কসুর নেই সরকারের। তার জন্য বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে ‘গো বিজ্ঞান পরীক্ষা’ নেওয়া হচ্ছে।ইতিমধ্যেই তাতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ৫ লক্ষ মানুষ। দেশের ৯০০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই মর্মে নির্দেশও পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অনলাইনে গরু বিষয়ক এই সরকারি পরীক্ষায় বসার জন্য পড়ুয়াদের উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের কোনও পরীক্ষা নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক স্যমন্তক দাস আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। কিন্তু যাদবপুরে এই পরীক্ষা হচ্ছে না।’’
বাংলা বিভাগীয় প্রধান রাজ্যেশ্বর সিংহ বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানমনষ্ক, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা প্রচার করে, রাষ্ট্রের দায়িত্বও সেটাই হওয়া উচিত। সেখানে এই ধরনের একটা বিষয়কে চাপিয়ে দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। বিশেষ করে এই সময়ে যখন করোনা পরিস্থিতি চলছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করা অনেক বেশি জরুরি ছিল বলে মনে হয়। তার বদলে এমন একটা বিষয়ের পরীক্ষার নাম করে আসলে একটা দর্শন চাপানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আপাতত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কিছু হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে।’’
গরু নিয়ে এই পরীক্ষার আয়োজক কেন্দ্রীয় পশুপালন মন্ত্রক অধীনস্থ ‘রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ’ কমিটি। দেশের পশুকল্যাণের জন্য ২০১৯-’২০ সালের বাজেটে ‘রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ’-এর নাম অন্তর্ভুক্ত করে আর্থিক বরাদ্দের বন্দোবস্ত করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় মৎস্যচাষ, পশুপালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা হিসেবে কাজ করে কামধেনু আয়োগ। পশুপালন মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেই ১ ঘণ্টার এই অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে তারা। তাদের আয়োজিত পরীক্ষার, পোশাকি নাম, ‘কামধেনু গো বিজ্ঞান প্রচার-প্রসার পরীক্ষা’। ঘোষিত লক্ষ্য, জাতীয় গো-কল্যাণ কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির সেই পরীক্ষার সম্ভাব্য কিছু প্রশ্ন ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। আর তা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে নতুন করে।
বছর খানেক আগে দেশি গরুর দুধে সোনার ‘হদিস’ দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এরপর রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা পোল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্র পেশ করে গো-দুগ্ধে সোনার উপস্থিতি দাবি করেন। ওই গবেষণাপত্রে গরুর দুধে অন্য নানা খনিজের সঙ্গে সামান্য সোনার উপস্থিতির কথা বলা হয়েছিল। তবে তা দেশি গরু নয়। কামধেনু আয়োগের পাঠ্যসূচি অবশ্য জানাচ্ছে, কেবলমাত্র দেশি গরুর দুধেই রয়েছে সোনা।
‘রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ’-এর তরফে ‘মাল্টিপল চয়েস’ জাতীয় পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি পাঠ্যসূচিও প্রকাশ করা হয়েছে সম্প্রতি। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৯৮৪ সালে ভোপালে গ্যাস দুর্ঘটনায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু যাঁদের মাটির ঘরের দেওয়ালে গোবর লেপা ছিল, তাঁদের কোনও ক্ষতি হয়নি’। ২০০৮ সালে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, গ্যাস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৩,৭৮৭ বলে জানিয়েছিলেন। আর গোবরের ‘রক্ষাকবচের’ কথা সরকারি স্তরে বা গ্যাস-দুর্গত পরিবারগুলির তরফে গত সাড়ে তিন দশকে শোনা যায়নি।
শুধু তা-ই নয়, গো-হত্যার সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক নিয়েও অভিনব ‘বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব’ হাজির করেছে কামধেনু আয়োগ। সেখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিংবদন্তি বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের নাম। তাদের ব্যাখ্যা, কোনও এক জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে গবাদি পশু জবাই করা হলে তাদের মরণ-আর্তনাদের ‘প্রভাব’ পড়ে ভূস্তরের উপর। ‘আইনস্টাইনিয়ান পেন ওয়েভ’-এর দীর্ঘস্থায়ী ফল হিসেবেই ভূমিকম্প হয় বলে জানানো হয়েছে পাঠ্যসূচিতে।
দেশে গত প্রায় দু’দশক ধরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি)-এর অনুপাতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ প্রায় বাড়েনি বললেই চলে। তা আটকে আছে ০.৬ থেকে ০.৭ শতাংশের মধ্যে। ভারত যে সমস্ত দেশের সঙ্গে প্রযুক্তিতে পাল্লা দিতে চায়, সেই আমেরিকা (২.৮%), চিন (২.১%), ইজরায়েল (৪.৩%), কোরিয়ায় (৪.২%) তা অনেক বেশি। ভারতে তা জিডিপির অন্তত ২% হওয়া উচিত বলে সুপারিশ করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদও। এই যেখানে হাঁড়ির হাল, সেখানে গো-বিজ্ঞান নিয়ে মাতামাতিতে উঠছে প্রশ্ন। তবে এ নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য সুরঞ্জন দাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, ফোন ধরেননি তিনি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উত্তর দেননি মেসেজেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy