প্রতীকী ছবি।
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের। মাঝে কিছু দিন আটকে থাকার পরে ইউরোপের দেশগুলিতে ওই প্রতিষেধক ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হলেও, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ওই প্রতিষেধক নতুন করে অস্বস্তির মুখে পড়েছে ব্রিটেনের এক জার্নালের রিপোর্টে। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ বলা হয়েছে করোনাভাইরাসের যে ‘দক্ষিণ আফ্রিকা’ স্ট্রেন গোটা বিশ্বে ছড়াতে শুরু করেছে, তার বিরুদ্ধে আদৌও কার্যকর নয় কোভিশিল্ড। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন কোভিশিল্ডের দুই দফার প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও গবেষণায় অংশ নেওয়া করোনা আক্রান্ত প্রায় ৯২ শতাংশের সংক্রমণের পিছনে দায়ী ওই স্ট্রেন। ভারতে বিদেশি ভাইরাস স্ট্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও চারশোর ঘরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নন স্বাস্থ্যকর্তারা। বরং আগামী তিন মাসের মধ্যে বর্ষীয়ান ও নির্দিষ্ট অসুস্থতা-সহ ৪৫-৫৯ বছর বয়সিদের টিকাকরণের কাজ যথাসম্ভব শেষ করে আরও কমবয়সিদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসাই লক্ষ্য সরকারের।
ভাইরাসের চরিত্র সময়ের সঙ্গে বদলে থাকে। অনেকেরই মতে, ভাইরাসের চরিত্র পাল্টে গেলে আদৌ কার্যকর হবে না প্রতিষেধক। বাস্তবে সেটাই হয়েছে বলে ব্রিটিশ জার্নালটিতে দাবি করেছেন এক দল গবেষক। তাঁদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে করোনাভাইরাসের যে স্ট্রেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিরুদ্ধে কাজ করছে না কোভিশিল্ড প্রতিষেধক। জার্নালে বলা হয়েছে, একাধিক কেন্দ্রে ‘ডাবল ব্লাইন্ড’ পরীক্ষা করা হয়েছিল। এ ধরনের পরীক্ষায় গবেষক ও অংশগ্রহণকারী কোনও পক্ষই জানতে পারেন না কে প্রতিষেধক পাচ্ছেন আর কাকে ওষুধের পরিবর্তে জল বা স্যালাইন(প্ল্যাসিবো) দেওয়া হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সিদের ১:১ অনুপাতে প্রতিষেধক ও প্ল্যাসিবো (এখানে সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ) দেওয়া হয়েছিল ২১ এবং ৩৫ দিনের ব্যবধানে। প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, যাঁরা প্ল্যাসিবো পেয়েছিলেন তাদের ৭১৭ জনের মধ্যে ২৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অন্য দিকে কোভিশিল্ড প্রতিষেধক পেয়েছেন এমন ৭৫০ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন। দু’টি দল সব মিলিয়ে যে ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন ‘সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেন’-এর কারণে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পরীক্ষা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কোভিশিল্ডের দু’ডোজের প্রতিষেধক করোনাভাইরাসের সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা কবচ দিতে ব্যর্থ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-এর ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিশিল্ডের মতো যারাই কেবল ভাইরাসের একটি স্পাইককে ভিত্তি করে প্রতিষেধক বানিয়েছে, তারাই এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে বাধ্য। কোভ্যাক্সিন যেহেতু সার্বিক ভাবে মৃত ভাইরাসের উপরে প্রতিষেধক বানিয়েছে তাই নীতিগত ভাবে তাদের প্রতিষেধকের নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখন কোভ্যাক্সিনের উচিত এই ধরনের স্ট্রেনগুলির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিষেধক কতটা কার্যকরি সেই গবেষণার ফল প্রকাশ করা। এতে অনেক ধোঁয়াশা কেটে যাবে।’’
দীপ্যমানবাবুর আশঙ্কা, আগামী দিনে সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেন যদি ব্যাপক হারে অন্য দেশে ছড়াতে থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক দেশ ওই প্রতিষেধক প্রত্যাখ্যান করবে।
বিদেশের মাটিতে হওয়া ওই গবেষণার ফলাফল নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না দেশের স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বিদেশ থেকে আসা স্ট্রেনের কারণে অসুস্থের সংখ্যা চারশোর ঘরে রয়েছে। সংখ্যাটি যাতে না-বাড়ে তার জন্য প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া ভারতে যে করোনার স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি বিরুদ্ধে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন সফল ভাবে কাজ করছে। আজ গোটা দেশে সংক্রমণ ৪০ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি যে ক্রমশ উদ্বেগজনক হতে চলেছে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেই কারণে দ্রুত প্রবীণদের পাশাপাশি অল্পবয়সি, কিন্তু বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এমসের অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়ার মতে, বর্তমানে যে প্রবীণ ও ৪৫-৫৯ বছর বয়সিদের টিকাকরণ চলছে, তা আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে অন্যদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। সূত্রের মতে পরবর্তী ধাপে ৩৫-৪৫ বছর বয়সি, কিন্তু মধুমেহ, রক্তচাপ বা কিডনির দীর্ঘ সমস্যা রয়েছে. তাঁদের প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার কথা ভাবা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy