ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
পুরীর রথের রশিতে টান পড়ার আগের মুহূর্তে তখন শুরু হতে চলেছে ছেরা পহরা। রুপোর দোলায় চড়ে তিন ভাই-বোন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথের সামনে হাজির প্রধান সেবায়েত পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেব। সোনার ঝাড়ু হাতে তিনিই জগন্নাথের রথের পথ পরিমার্জন (ছেরা পহরা) করবেন।
সোমবার সকালে দেখা গেল, একমাত্র রাজা ছাড়া কার্যত কারও মুখেই মাস্ক নেই। ঘেঁষাঘেঁষি করেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন অন্য সেবায়েতরা। উৎকল প্রশাসনের সিদ্ধান্তমাফিক ভক্তশূন্য রথযাত্রায় শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক সেবায়েত, পুলিশ, প্রশাসন ছাড়া কেউ থাকবে না, আগেই ঠিক হয়েছিল। কার্ফুর জন্য রথের পথ বড় দাণ্ডও ছিল জনসাধারণের অগম্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার পাহুন্ডি বিজে (রথে আরোহণ) বা ছেরা পহরার সময়ে সেবায়েতদের ঘেঁষাঘেঁষি ঠেকানো যায়নি। এই পরিস্থিতি অবশ্য একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু ওড়িশার কোভিড-পরিস্থিতি এখনও স্থানীয় বাসিন্দা তথা প্রশাসনকে খানিক আতঙ্কে রাখছে।
রবিবারেই ওড়িশায় কোভিডে ৬৫ জন মারা গিয়েছেন, যা এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সর্বাধিক। সোমবার মৃতের সংখ্যা নামমাত্র কমে ৬৩ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ৪৬৬২ জন। দেখা গিয়েছে, ৭২৭৫৪ জনের কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৯৯৩ জন। সংক্রমণের হার এখনও ৬.৪৩%, যা খানিক উদ্বেগেরও। অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় ওড়িশায় কোভিডে মৃত্যু কমলেও এখন আগের তুলনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রথযাত্রার ছবিটা কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। কিন্তু রাজ্যের চিরাচরিত আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে সুষ্ঠু ভাবে জগন্নাথ-সংস্কৃতির রীতিতে নড়চড় না-হওয়াকেই গুরুত্ব দিয়েছে নবীন পট্টনায়কের প্রশাসন।
এ বার পূর্বাভাস মেনে রথে বৃষ্টি হয়নি পুরীতে। আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। আবহাওয়াও আরামপ্রদ। দুপুরে রথ টানার সময়ে খালি পায়ে সেবায়েতদের যাতে কষ্ট না হয়, মুহুর্মুহু জল ছড়ানো হচ্ছিল রথের পথে। প্রবীণ দয়িতাপতি রামচন্দ্র দাস মহাপাত্র ছিলেন জগন্নাথদেব এবং সুভদ্রার রথে। সন্ধ্যায় তিনি বলছিলেন, “সব কিছুই সুষ্ঠু ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হয়েছে।”
এ দিন সকাল সাতটার আগেই পাহুন্ডি বিজের আচার শুরু হয়। বেলা ১১টার মধ্যে ছেরা পহরা সম্পন্ন। এর পরে বলভদ্রের রথ তালধ্বজ চলতে শুরু করে বেলা ১২টা নাগাদ। আধ ঘণ্টার ব্যবধানে সুভদ্রা এবং জগন্নাথের রথও রওনা দেয়। বিকেল পাঁচটার মধ্যেই তিনটি রথই গন্তব্য তিন কিলোমিটার দূরের গুন্ডিচা মন্দিরে পৌঁছে গিয়েছে। ভুবনেশ্বরে জগন্নাথ-সংস্কৃতি বিশারদ সুরেন্দ্রনাথ দাস উচ্ছ্বসিত, “টিভিতে সব দেখেছি। কারও কোনও কষ্ট হল না! সব কিছুই সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে।
এ-ও প্রভুর চমৎকার!” আগামী ২০ জুলাই জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথের বাহুড় যাত্রা বা উল্টোরথ। ২১ জুলাই জগন্নাথদেবের সোনাবেশ ধারণ। ২২ জুলাই নীলাদ্রী বিজের আচার অনুষ্ঠান শেষে ফের মন্দিরে রত্নসিংহাসনে ফিরবেন জগন্নাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy