জিগ্নেশের বিরুদ্ধে মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট আদালত। ফাইল চিত্র।
মহিলা পুলিশকর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগের মামলায় জামিন পেলেন গুজরাতের বিধায়ক তথা দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী। সেই সঙ্গে বরপেটা দায়রা আদালতের বেনজির রায়ে মুখ পুড়ল হিমন্তবিশ্ব সরকার তথা অসম পুলিশের। জিগ্নেশের বিরুদ্ধে আনা মামলাকে ‘সাজানো’ বলে মন্তব্য করে, পুলিশের হেফাজতে একের পর এক বন্দির গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে আদালত স্পষ্ট জানায়, এমন চলতে থাকলে অসম ‘পুলিশ-রাষ্ট্র’ হয়ে যাবে। বিচারকের মন্তব্য, ‘‘পুলিশ তাদের হেফাজতে থাকা অভিযুক্তকে চাপ দিয়ে দোষ স্বীকার করায়, তা জানা আছে। কিন্তু এমন মামলা প্রথম দেখছি যেখানে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এমন অপরাধের বিচার চলছে— যা তিনি পুলিশের হেফাজতে থেকেই করেছেন অথচ অন্য কেউ তা দেখতেই পাননি!’’
জামিন পাওয়ার পরে ‘পুষ্পা’ সিনেমার কায়দায় ‘ঝুঁকেগা নহি’ বলেন জিগ্নেশ। তাঁর কথায়, “মহিলা পুলিশের শ্লীলতাহানির যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল, তা সরকারের কাপুরুষতার পরিচয়। বুঝতে পারছি, ওই বেচারি এসআইকে কতটা চাপ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এই বিজেপি সরকার জনতার হাজার হাজার কোটি চুরি করা মেহুল চোক্সী, নীরব মোদী, বিজয় মাল্যকে ধরে না। কিন্তু আমার একটা টুইট নিয়ে তারা মামলা দিতে ব্যস্ত। টুইটে প্রধানমন্ত্রীকে শান্তির বার্তা দিতে বলেছিলাম। তা থেকে মামলা হতেই পারে না। সারা দেশ বুঝতে পারছে, জিগ্নেশ নয়, সংবিধানকে আক্রমণ করছে বিজেপি। ১ মে জেল ভরো আন্দোলন হবে গুজরাতে।”
বিচারক এ চক্রবর্তী ১০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জিগ্নেশকে জামিন দেওয়ার পাশাপাশি ১৩ পাতার রায়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগকে স্পষ্ট ভাষায় ভুয়ো বলে উল্লেখ করেন। আদালতে শ্লীলতাহানির চেষ্টার কোনও পোক্ত প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ। এফআইআরের বক্তব্যের সঙ্গে অভিযোগকারিণীর বক্তব্যও মেলেনি। বিচারক চক্রবর্তী রায়ে জানান, অভিযোগকারী মহিলা বলেছেন তিনি অভিযুক্তের পাশে বসে আসছিলেন। সেখানে আরও দুই অফিসার ছিলেন। জিগ্নেশের ছোঁয়া তাঁর অশোভন মনে হয়েছে। অভিযোগ সত্য হলে মানতে হয়, দুই অফিসারের সামনেই ধৃত ব্যক্তি এক মহিলা অফিসারকে হেনস্থা করে চলেছেন! বিচারক রায়ে লেখেন, ‘‘আইনপ্রণেতারা আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা শোনেননি। তাই এই প্রসঙ্গে কোনও ধারাও তৈরি হয়নি! বিভিন্ন অযৌক্তিক ব্যাখ্যা ও অসঙ্গতি থেকে বোঝাই যাচ্ছে, পুলিশের অভিযোগ মিথ্যে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ধৃতকে দীর্ঘ দিন আটকে রাখা।’’
পুলিশের এনকাউন্টারের ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, ‘‘কিছু করে দেখানোর জন্য অভিযুক্তকে নিয়ে পুলিশের মধ্যরাতে বেরোনো ও পরে অভিযুক্তকে গুলি করে মারা বা জখম করা এখন অসমে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ রায়ের প্রতিলিপি হাই কোর্টকে পাঠাতে বলে বিচারক লেখেন, ‘‘বিষয়টিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে গণ্য করার কথা বিবেচনা করতে পারে হাই কোর্ট। হাই কোর্ট পুলিশকে বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলুক। যেমন অভিযুক্তকে ধরতে যাওয়া বা তাঁকে নিয়ে সফর করার সময়ে পুলিশের গায়ে বডি ক্যামেরা ও গাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক। সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক সব থানায়। এখনই রাশ না টানলে অসম পুলিশ-রাষ্ট্র হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy