Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

ফের নতুন সংক্রমণ ৮৩ হাজার! উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য

মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকে দৈনিক সংক্রমণ রোজই বাড়ছে। উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অসম, ওড়িশা, পঞ্জাবও বাড়াচ্ছে চিন্তা।

গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:৪২
Share: Save:

দেশে দৈনিক নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বৃহস্পতিবারই ছাড়িয়েছিল ৮৩ হাজার। এটি এক দিনে কোনও একটি দেশে ৮০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড। সেই ধারা আজও অব্যাহত। অবশ্য গতকালের মতো আজও দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষাও হয়েছে অনেক বেশি। এক দিনে হয়েছে ১১ লক্ষেরও বেশি টেস্ট।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৩ হাজার ৩৪১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৩৯ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭৪৭ জন। ওই সময়ের মধ্যে আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৬ হাজার ১৫৭ ও ৪৩ হাজার ৭৭৩ জন। গত ২০ দিন ধরেই আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে বেশি মানুষ নতুন করে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু গত দু’দিনে ভারতে আক্রান্ত বৃদ্ধি ওই দু’টি দেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। আক্রান্তের নিরিখে বিশ্বে প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় মোট আক্রান্ত ৬১ লক্ষ ৪৯ হাজার ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ৪০ লক্ষ ৪১ হাজার।

মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকের মতো রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ বাড়ছে। তুলনায় তামিলনাড়ু একটু হলেও নিয়ন্ত্রণে। উত্তরপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অসম, ওড়িশা, পঞ্জাব, হরিয়ানা, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে গত কয়েক দিনে দৈনিক সংক্রমণ বেড়েছে। দিল্লিতে গত মাসের তুলনায় শেষ ক’দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বরং বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক আক্রন্তের সংখ্যা একই গণ্ডিতে আবদ্ধ রয়েছে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে থাকছে ভারত। গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা গোটা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। এর ফলে মোট আক্রান্তও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ ভাবে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ব্রাজিলকে পিছনে ফেলে সংক্রমণের নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে চলে আসবে ভারত। আনলক পর্বে দেশে লকডাউনের কড়াকড়ি নেই। আগামী সপ্তাহ থেকে চালু হচ্ছে মেট্রো। মুক্তমঞ্চ, পাবও যাচ্ছে খুলে। এর মধ্যেই দৈনিক সংক্রমণের লাফিয়ে বৃদ্ধি উদ্বেগ তৈরি করছে।

আক্রান্তের সংখ্যা যেমন রোজ বাড়ছে, তেমনই প্রচুর মানুষ সুস্থও হয়ে উঠছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৩০ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৫১ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ৭৭ শতাংশই সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সুস্থ হয়েছেন ৬৬ হাজার ৬৫৯ জন।

প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত চার দিন ধরে তা ৭ শতাংশেই বন্দি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণ হার ৭.১২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষা হয়েছে ১১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭৬৫ জনের। যা গত কালের থেকে তিন হাজার মতো কম।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

মৃত্যুর সংখ্যায় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, ব্রিটেনের মতো দেশকে ভারত পিছনে ফেলেছিল আগেই। সম্প্রতি মেক্সিকোকে পিছনে ফেলে মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে মোট মৃত্যু অনেক কম। পাশাপাশি ওই সব দেশগুলির তুলনায় ভারতে মৃত্যুর হারও অনেকটাই কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯৬ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৬৮ হাজার ৪৭২ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন সাড়ে ২৫ হাজারের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত সাড়ে ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা কর্নাটকে মৃতের সংখ্যা আজ ৬ হাজার ছাড়াল। দেশের রাজধানীতে সংখ্যাটা ৪ হাজার ৫০০। অন্ধ্রপ্রদেশ (৪,২০০), উত্তরপ্রদেশ (৩,৬৯১), পশ্চিমবঙ্গ (৩,৩৯৪), গুজরাত (৩,০৬২) মৃত্যু তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। পঞ্জাব (১,৬৯০), মধ্যপ্রদেশ (১,৪৮৩), রাজস্থানে (১,০৯৫) মোট মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়ে বেড়ে চলেছে। এর পর তালিকায় রয়েছে তেলঙ্গানা, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, ছত্তীসগঢ়, গোয়া-র মতো রাজ্যগুলি।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যু— দু’টি তালিকাতেই শুরু থেকে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্ত ৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৪৪ জন। দৈনিক প্রায় ১৮ হাজার সংক্রমণ হচ্ছে সেখানে। দিন কয়েক আগেই তামিলনাড়ুকে পিছনে ফেলে সংক্রমণ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছেন গড়ে ১০ হাজার জন। যার জেরে মোট আক্রান্ত চার লক্ষ ৬৫ হাজার ৭৩০ জন। তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত চার লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৫১। তামিলনাড়ুতে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি আগের থেকে একটু কমে ৬ হাজারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকছে। চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে মোট সংক্রমিত হয়েছেন তিন লক্ষ ৭০ হাজার জন। উত্তরপ্রদেশেও মোট আক্রান্ত দু’লক্ষ ৪৭ হাজার। দিল্লি (১,৮২,৩০৬), পশ্চিমবঙ্গ (১,৭১,৮৬১), বিহার (১,৪২,৯৬৭) ও তেলঙ্গানাতে (১,৩৫,৮৮৪) মোট আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। অসম (১,১৮,৩৩৩) ও ওড়িশাতে (১,১৩,৪১১) মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়িয়ে বেড়ে চলেছে। গুজরাতেও আজ মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়াল।

রাজস্থানে মোট আক্রান্তের সংখ্যাটা ৮৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় কেরল সাড়ে ৭৯ হাজার পার করেছে। হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশে মোট আক্রান্ত প্রায় ৭০ হাজার। পঞ্জাবে সাড়ে ৫৮ হাজার, ঝাড়খণ্ডে ৪৬ হাজার, জম্মু ও কাশ্মীরে মোট আক্রান্ত ৩৯ হাজার। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরা। মণিপুর, হিমাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত ১০ হাজারের কম।

পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ তিন হাজারের নীচে ঘোরাফেরা করছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে, নতুন করে দু’হাজার ৯৮৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৪৮ জন সুস্থও হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। করোনার কবলে এ রাজ্যে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৪ জন।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID-19 Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy