—ফাইল চিত্র।
তাদের তৈরি ওষুধ সাতদিনের মধ্যে করোনা সারিয়ে তুলবে বলে গতকালই দাবি করেছে যোগগুরু রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ। সেই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই এ বার সিদ্ধা চিকিৎসা পদ্ধতিতে করোনা সারিয়ে তোলা সম্ভব বলে দাবি করল তামিলনাড়ু সরকার। তাদের দাবি, উপসর্গহীন এবং হালকা উপসর্গ থাকা করোনা রোগীদের সিদ্ধা চিকিৎসা পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
তামিলনাড়ুতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই চেন্নাইয়ে একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে ২৫ জন রোগীকে সিদ্ধা চিকিৎসা পদ্ধতিতে সারিয়ে তোলা গিয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তাতেই রাজ্যে করোনার হটস্পট চেন্নাইয়ের অম্বেডকর কলেজে সিদ্ধা চিকিৎসার ব্যাপক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সিদ্ধা চিকিৎসা পদ্ধতিতে মূলত ভেষজ উপাদানে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন কালে ঋষি-মুনিদের মধ্যে এটি প্রচলিত ছিল। তামিলনাড়ুর বেশ কিছু জায়গায় এখনও রাজ্যের এই চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। তবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই এতে রোগীর ক্ষতির সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৬ হাজার, দেশে মোট আক্রান্ত ছাড়াল সাড়ে চার লাখ
তবে রাজ্যের উন্নয়ন মন্ত্রী কে পণ্ডিরাজন বলেন, ‘‘এতে ১০০ শতাংশ সাফল্য মিলেছে। কারও জীবন নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিচ্ছি না আমরা। আমাদের কাছে সিদ্ধা হল তুরুপের তাস। সিদ্ধা, যোগ এবং আয়ুর্বেদকে একত্রিত করছি আমরা। বিষয়টি গবেষণা করে দেখা হয়নি। তবে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মানুষ এতে বিশ্বাসও করেন। সিদ্ধা রোগীদের উপর কী প্রভাব ফেলছে, তার উপর নজর রাখছি আমরা।’’
তবে করোনা রোগীদের মধ্যে যাঁদের অবস্থা গুরুতর, তাঁদের অ্যালোপ্যাথিতেই ভরসা করা উচিত বলে মত কে পণ্ডিরাজনের। তাঁর কথায়, ‘‘সিদ্ধায় ভেন্টিলেটর এবং অক্সিজেন জোগানের ব্যবস্থা নেই। সে ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথিই ভরসাযোগ্য।’’ তবে যাঁরা ইচ্ছুক শুধুমাত্র তাঁদেরই সিদ্ধা পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হচ্ছে বলে জানান রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক। এখনও পর্যন্ত যাঁদের এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই খুশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে চিকিৎসক মহলে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই। নাগাপট্টিনমের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘সিদ্ধার বিরোধী নই আমরা, কিন্তু এ নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে যে ভেষজ মিশ্রণ তৈরি করা হয়, তাতে ধাতুও থাকে, যা কিডনির পক্ষে ক্ষতিকারক। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমে পশুদের উপর ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়, তার পর অসুস্থদের উপর। তাতে উতরোতে পারলে তবেই সকলের উপর তা প্রয়োগ করা হয়। সিদ্ধা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও গবেষণা হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক স্তরে এই চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি।’’
আরও পড়ুন: সন্তান জ্বরে ভুগছে? করোনা পরিস্থিতিতে কী করবেন
কেন্দ্রে বিজেপির শরিক এডিএমকে এই মুহূর্তে তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় রয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর আগে সিদ্ধা পদ্ধতিতে তৈরি ‘কবসুরা কুড়িনীর’ নামের বিশেষ হজমি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল তারা। তা নিয়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল তাদের। কিন্তু কে পণ্ডিরাজনের দাবি, ‘‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীও এটির সুপারিশ করেছিলেন। বাড়ি বাড়ি এটি পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। সকলেই তাতে খুশি।’’
গত বছরের শেষ দিকে চিনেই প্রথম থাবা বসায় নোভেল করোনাভাইরাস। সেই থেকে গত ছ’মাস ধরে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। এখনও পর্যন্ত এর কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের দাবি উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু যার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, সেই ধরনের জিনিস সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
তাই তামিলনাড়ু সরকার এবং রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের তরফে যে সমস্ত দাবি করা হচ্ছে, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ভোক্যালিস্ট টি এম কৃষ্ণ। তিনি বলেন, ‘‘এই সঙ্কটের সময় অন্য কেউ এমন আচরণ করলে, এই ধরনের ভুলভাল তথ্য ছড়ালে, এত ক্ষণে জেল হয়ে যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy