Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘পারলে এসে নিয়ে যাও’, শেষ ফোন

দিল্লির তুঘলকাবাদে একটি রেস্তরাঁয় কাজ করতেন রণবীর। কালকাজি এলাকায় একাই থাকতেন তিনি। লকডাউন ঘোষণার পরে গত ২২ মার্চ গ্রাম থেকে তাঁর স্ত্রী মমতা ফোনে রণবীরকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
মোরেনা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৬:১০
Share: Save:

মাত্র ৪২ সেকেন্ডের অডিয়ো টেপ। মোবাইল ফোনে কথোপকথন। এক প্রান্ত থেকে উদ্‌ভ্রান্তের মতো কেউ বলছেন, ‘‘কাউকে বলো মোরেনা পৌঁছে দিতে।’’ অপর প্রান্তে নীরবতা। উত্তর না-পেয়ে আবার উদ্‌ভ্রান্ত কণ্ঠ, ‘‘১০০ নম্বরে ডায়াল করো’’, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স খবর দাও’’। কোনও সাড়া নেই। শুধু প্রচণ্ড জোরে শ্বাস টানার শব্দ। তার পরে হাঁপাতে হাঁপাতে, ‘‘আসতে পারলে আমাকে নিয়ে যাও, প্লিজ।’’ পরিজনের সঙ্গে এটাই ছিল ডেলিভারি এজেন্ট রণবীর সিংহের শেষ কথা। দিল্লি থেকে মধ্যপ্রদেশের মোরেনায় নিজের গ্রামে ফেরার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৩৮ বছরের এই ব্যক্তি।

দিল্লির তুঘলকাবাদে একটি রেস্তরাঁয় কাজ করতেন রণবীর। কালকাজি এলাকায় একাই থাকতেন তিনি। লকডাউন ঘোষণার পরে গত ২২ মার্চ গ্রাম থেকে তাঁর স্ত্রী মমতা ফোনে রণবীরকে বাড়ি ফিরে আসতে বলেন। গত শুক্রবার তিনি দিল্লি থেকে মোরেনার পথে পা বাড়ান। ওই দিন দুপুর ২টোয় বড় মেয়ে দীপাকে ফোন করেন রণবীর। বলেছিলেন, ‘‘বাস, ট্রেন বন্ধ, কোনও উপায় নেই। হেঁটেই ফিরছি।’’ এর পরে বিকেল ৫টায় পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল রণবীরের।

পরের ফোনটা রাত ৯টায়। কথা বলেছিলেন আর এক মেয়ে পিঙ্কির সঙ্গে। আজ সেই কথা বলতে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে পিঙ্কি। বলতে থাকে, ‘‘গলা শুনেই বুঝেছিলাম খুব ক্লান্ত। বাবা বলেছিল, ‘আর পারছি না, শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে’।’’ ওই সময়ই বিপদের আঁচ পেয়েছিল রণবীরের পরিবার।

শনিবার ভোরে ফের পিঙ্কি ফোন করেন রণবীরকে। পিঙ্কি জানায়, তখন তার বাবা আগরার সিকন্দরা রোডে। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল। বলেছিলেন, বুকে ব্যথা হচ্ছে। এর পরেই আতঙ্কে দীপা-পিঙ্কিরা প্রতিবেশীদের খবর দেয়। আসেন রণবীরের শ্যালক অরবিন্দ সিংহও। তখনই তাঁর সঙ্গে কথা হয় রণবীরের। আজ অরবিন্দ বলেন, ‘‘প্রচণ্ড হাঁপাচ্ছিল। ঠিক মতো কথা বলতে পারছিল না। বললাম, পুলিশ, অ্যাম্বুল্যান্স কাউকে পৌঁছে দিতে বলো। কোনও উত্তরই দিতে পারছিল না। শুধু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘পারলে এসে নিয়ে যাও, প্লিজ’।’’ কথা হয়েছিল মাত্র ৪২ সেকেন্ড।

যেখানে রণবীর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, সেখানে পৌঁছতে কম চেষ্টা করেননি গ্রামবাসীরা। গ্রামের এক চিকিৎসকের কাছ থেকে পরিচয়পত্র ও পুলিশের থেকে পাস নিয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছিলেন। যখন পৌঁছন, তখন সব শেষ। গত কাল রাতে রণবীরের শেষকৃত্য হয়। অরবিন্দের আক্ষেপ, ‘‘২২ তারিখ ফিরে এসেছিলাম। তখন যদি জোর করে ওকে নিয়ে আসতে পারতাম...!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy