গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
তৎপর হতে কি দেরি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার? লকডাউন করে কি আদৌ কিছু লাভ হল?
করোনা মোকাবিলায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিরোধী শিবিরের প্রতিবাদের মধ্যেই আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে দাবি করলেন, ‘‘সঠিক সময়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ দেশে করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছে। যখন ভবিষ্যতে ভারতের কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর্যালোচনা হবে, তখন এই সময়টাকে আমরা কী ভাবে একসঙ্গে কাজ করেছিলাম, তার জন্য মনে রাখা হবে।’’ গোটা বিশ্বে ভারতের করোনা-মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও মোদীর দাবি।
লকডাউনের পরে শুরু হয়েছে ‘আনলক’ পর্ব। মার্চে লকডাউন শুরুর দিনে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল পাঁচশোর কাছাকাছি। এখন তা সাড়ে তিন লক্ষের দোরগোড়ায়। লকডাউনের পরেও পরিস্থিতি এমন হওয়ায় আঙুল উঠেছে মোদী সরকারের দিকেই। এই পরিস্থিতিতে ফের লকডাউন জারি করতে হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছিল।
আরও পড়ুন: বাবার স্বপ্নপূরণে সেনায় যোগ দেন কর্নেল সন্তোষ
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আজ ফের লকডাউনের সম্ভাবনার প্রসঙ্গই তোলেননি। তার বদলে অফিস, বাজার, রাস্তা খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাবধানতা মেনে চলার উপরে জোর দিয়েছেন। অর্থনীতির কথা ভেবে যে আর লকডাউন সম্ভব নয়, তার ইঙ্গিত দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, করোনা যত আটকাতে পারব, ততই অর্থব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, দফতর খুলবে, পরিবহণ চালু হবে, রোজগারের সুযোগ তৈরি হবে।’’
আরও পড়ুন: লাদাখ উস্কে দিচ্ছে ইন্দো-চিনের ৪৫ বছর আগের স্মৃতি
দূরত্ববিধি মেনে অত্যাবশ্যক পরিষেবার কর্মীদের জন্য চলছে মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেন। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
রাহুল গাঁধীর অভিযোগ, লকডাউনের ফলে অর্থনীতির রেখচিত্র নেমেছে। মৃত্যুর হার বেড়েছে। আজ দু’দফায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ঠিক আগে সুপ্রিম কোর্টে এক শুনানির সময় বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যান মন্তব্য করেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হচ্ছে না। দেশের পরিস্থিতির খারাপই হচ্ছে।’’
যেন এই সব অভিযোগের জবাব দিতেই আজ বৈঠকের শুরুতে মোদী বলেন, ‘‘গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার প্রবাসী ভারতীয় দেশে ফিরেছেন। লক্ষ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক নিজের গ্রামে ফিরেছেন। রেল, সড়ক, বিমান, জলপথ সবই খুলে গিয়েছে। তার পরেও, আমাদের বিপুল জনসংখ্যা সত্ত্বেও, করোনা সংক্রমণ তেমন ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখাতে পারেনি। সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৫০ শতাংশ ছাপিয়ে গিয়েছে। ভারতে সবথেকে কম মৃত্যু হচ্ছে।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কিন্তু কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতের পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর যুক্তি, গুজরাতে মৃত্যুর হার ৬.২৫%। মহারাষ্ট্র (৩.৭৩%), রাজস্থান (২.৩২%), পঞ্জাব (২.১৭%)-এর মতো রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য কংগ্রেস-শাসিত পঞ্জাবের প্রশংসা করে সেখানে করোনা-মোকাবিলায় ‘মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন’-এর মডেল ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারির প্রশংসা করেন। অন্য রাজ্যকেও এই মডেলে চলার কথা বলেন তিনি। বিরোধীদের মতে, মোদী এখন দেখাতে চাইছেন, কোনও সিদ্ধান্ত তিনি একা নেননি। মোদী আজ যুক্তি দিয়েছেন, কেন্দ্র-রাজ্য যে ভাবে এক সঙ্গে কাজ করেছে, তা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সর্বোত্তম উদাহরণ। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, বাস্তবে আচমকা লকডাউন জারির সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদীর একার।
আজকের বৈঠকে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে এক মাত্র বক্তা ছিলেন পঞ্জাবের ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি হোক। কেন্দ্র-রাজ্য মিলিত ভাবে মোকাবিলার কৌশল তৈরি করবে এই গোষ্ঠী।
প্রধানমন্ত্রী আজ বাইরে বের হতে হলেও মাস্ক, ফেসকভার, দু’গজ দূরত্ব, নিয়মিত হাত ধোয়ার উপরে জোর দিয়ে বলেন, ‘‘একটু গা-ছাড়া মনোভাব, অনুশাসনে ঢিলেমি, করোনার বিরুদ্ধে আমাদের সবার লড়াইতে জল ঢেলে দেবে।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy