নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
করোনা মোকাবিলায় ভারত আমেরিকাকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ না করলে ‘প্রত্যাঘাত’ করা হবে বলে হোয়াইট হাউসে বসে হুঙ্কার দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ওষুধ রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিল, এই ওষুধ ‘যে সব দেশের অত্যন্ত প্রয়োজন’, তাদের সরবরাহ করা হবে। অর্থাৎ আমেরিকাকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ করা হবে। ট্রাম্পের প্রত্যাঘাতের হুমকি নিয়ে কোনও মন্তব্য না করে বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে মিহি স্বরে বলা হয়েছে, “কোভিড-১৯ অতিমারির ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে ভারত বরাবরই বলে এসেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং সহযোগিতার পথে চলা।’’
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্যে কোথাও ট্রাম্প বা আমেরিকার নাম উচ্চারণ পর্যন্ত করা হয়নি। বলা হয়েছে, দেশের মজুত ভাল করে খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অতিমারির দ্বারা বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু দেশকে প্যারাসিটামল এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হবে। ট্রাম্পের হুমকি সম্পর্কে সাউথ ব্লক মুখে কুলুপ আঁটলেও ঘরোয়া রাজনীতিতে তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মাস দেড়েক আগেই ‘নমস্তে ট্রাম্প’-এর জন্য কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে যে চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছিল, তার পরেও আজকের এই রূঢ় আচরণ কতটা মানানসই। প্রয়াত ইন্দিরা গাঁধী থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী এমনকি মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহের উদাহরণ তুলে বিরোধীরা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে কখনও আমেরিকার সামনে মাথা নোয়ায়নি ভারত। এ প্রসঙ্গে মোদীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়েও বিদ্রুপ করেছেন অনেকে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শব্দ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যাঘাতের মতো কঠোর শব্দ তখনই কোনও দেশ ব্যবহার করে, যখন তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় অন্য দেশ চূড়ান্ত আঘাত হানে বা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়। মোদী সরকারের তরফে কড়া ভাষায় ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ না-করা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, এই মুহূর্তে দেশে চূড়ান্ত সঙ্কট চলছে। তার মধ্যে আমেরিকার মতো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।
আরও পড়ুন: তিন জ়োনে ভেঙেই কি নতুন নীতিতে হবে লকডাউন?
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করে বলেছেন, “বন্ধুত্বে প্রত্যাঘাত বলে কিছু নেই। সমস্ত দেশকে তাদের খারাপ সময়ে ভারত অবশ্যই সাহায্য করবে। কিন্তু প্রাণ বাঁচানোর ওষুধপত্র আগে ভারতবাসীর কাছে পৌঁছনো প্রয়োজন।’’ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের কথায়, “আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বহু বছরের অভিজ্ঞতায় আমি কখনওই দেখিনি যে, একটি রাষ্ট্রের প্রধান অন্য রাষ্ট্রকে এ ভাবে হুমকি দিচ্ছেন। ট্রাম্প বলছেন, ভারতীয় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নাকি তাঁদেরই সম্পত্তি! এটা কী ভাবে হয় মিস্টার প্রেসিডেন্ট? ভারত যদি আপনাদের তা বিক্রি করতে চায়, তা হলেই তা আপনাদের কাছে সরবরাহ করা হবে।’’
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প এবং মোদীকে এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ করেছেন। ট্রাম্পের হুমকির তীব্র নিন্দা করে তাঁর বক্তব্য, গত ফেব্রুয়ারিতে আমজনতায় টাকায় ট্রাম্পকে জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন মোদী। সেই টাকা কোভিড-১৯ এর মোকাবিলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারত।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy