ফাইল চিত্র।
অনেেকরই প্রশ্ন, সরকারের কাজের বিচারকর্তা না কি গাফিলতি সত্ত্বেও রক্ষাকর্তা!
কোভিড অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে মামলা শুরু করল। অক্সিজেন, ওষুধের জোগান, টিকাকরণের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘জাতীয় পরিকল্পনা’ জানতে চেয়ে আজ প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের বেঞ্চ কেন্দ্রকে নোটিস জারি করেছে। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, “অক্সিজেনের জোগান, জরুরি ওষুধের সরবরাহ, টিকাকরণের পদ্ধতি নিয়ে কেন্দ্রের জাতীয় পরিকল্পনা আমরা জানতে চাই।” এ বিষয়ে আগামিকাল শুনানি হবে।
আপাত ভাবে সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে বলে মনে হলেও প্রবীণ আইনজীবী থেকে বিরোধীরা মনে করছেন, শীর্ষ আদালতের এই পদক্ষেপে আখেরে কেন্দ্রেরই সুবিধে হয়ে যাবে। কারণ দেশের ছ’টি হাই কোর্টে কোভিড মোকাবিলায় অব্যবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই মামলা চলছে। দিল্লি, কলকাতা ও বম্বে হাই কোর্টে কেন্দ্র, নির্বাচন কমিশন বিচারপতিদের তোপের মুখে পড়েছে। অক্সিজেনের অভাব, লাগামছাড়া জনসভা নিয়ে কেন্দ্র, নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীরা আদালতের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।
প্রবীণ আইনজীবীদের বক্তব্য, স্থানীয় স্তরে সমস্যা নিয়ে সরকারকে দায়বদ্ধ করতে হাই কোর্টই সক্ষম। সুপ্রিম কোর্টের সেই খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর দেওয়ার সময় নেই। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পাল্টা মামলা করেছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। প্রধান বিচারপতি এই মামলায় হরিশ সালভেকে আদালতবান্ধব নিয়োগ করেছেন। প্রশ্ন তা নিয়েও। সালভে এখন লন্ডনে রয়েছেন। তিনি সেখান থেকেই ভিডিয়ো কনফারেন্সে বেদান্ত সংস্থার অক্সিজেন তৈরির কারখানা খোলার অনুমতির জন্য আদালতে সওয়াল করেছিলেন। আইনজীবীদের বক্তব্য, সালভের এই মামলায় স্বার্থের সংঘাত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কী ভাবে আদালতবান্ধব নিয়োগ করা হল?
এ বার সুপ্রিম কোর্টের মামলার যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্র হাই কোর্টে প্রশ্নের তির এড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা হাই কোর্টে জানাবেন শীর্ষ আদালত ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি। দিল্লি, বম্বে ও মাদ্রাজ হাই কোর্ট আজ অক্সিজেনের অভাব ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে শুনানি বন্ধ করতে রাজি হয়নি। উল্টে মাদ্রাজ হাই কোর্ট জানতে চেয়েছে, গরিব ও কর্মহীনেরা বেশি দাম দিয়ে বাজার থেকে প্রতিষেধক কিনবেন কী ভাবে? বম্বে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত প্রশ্ন তুলেছেন, আরটি-পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট দেরিতে আসছে কেন? দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি বলেছেন, ‘‘আমি চাইলেও এখন হাসপাতালে বেড পাব না।’’
আজ প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, হাই কোর্টগুলি মানুষের স্বার্থে নিজেদের এক্তিয়ারের মধ্যেই কাজ করছে। কিন্তু এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। হাই কোর্টের বিচারপতিরা মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি। ইঙ্গিত দিয়েছেন, হাই কোর্ট থেকে সমস্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসা হতে পারে। এলাহাবাদ হাই কোর্ট চলতি সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশে পাঁচটি শহরে কোভিড সঙ্কট দেখে লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছিল। যোগী সরকার তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ায় আদালত লকডাউনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। আজ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি লকডাউন জারির ক্ষমতা বিচার বিভাগের বদলে প্রশাসনের হাতেই রাখতে চাই।’’
মুকুল রোহতগি, দুষ্মন্ত দাভে, অঞ্জনা প্রকাশের মতো প্রবীণ আইজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপের আজ নিন্দা করেছেন। রোহতগি বলেন, ‘‘এতে তো হাইকোর্টকে অপ্রয়োজনীয় করে ফেলা হল।’’ দাভে বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালতের পদক্ষেপ অযৌক্তিক, অযাচিত। সরকারের মতো সুপ্রিম কোর্টও এত দিন ঘুমোচ্ছিল। মানুষের সমস্যা দেখার হলে সুপ্রিম কোর্টের আগেই হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল।’’ অঞ্জনা একে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট এতটাই উদ্বিগ্ন হলে আগামী কালের বদলে আজই শুনানি করল না কেন, তা নিয়েও
প্রশ্ন উঠেছে। দাভের প্রশ্ন, বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য, বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও ও বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট কেন এটা হতে দিলেন?
শীর্ষ আদালতের পদক্ষেপের পরে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইট করেন, “নাগপুর ক্লাব থেকে ভগবান আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে রক্ষা করুন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy