ছবি: রয়টার্স।
রেশন, মজুরি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলছেন শ্রমিকেরা। হাজারো মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। অভাব উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর। হাসপাতালের ডাক্তারদের নিজস্ব সুরক্ষা সরঞ্জাম বা চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাব নিয়েও অভিযোগ বিস্তর।
সে দিকে টাকা খরচ না করে কেন বায়ুসেনাকে দিয়ে আকাশ থেকে ফুল ছড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল নানা স্তরেই। বিরোধীদের প্রশ্ন, সার্জিকাল স্ট্রাইকের ফায়দা ভোটে তোলার পরে কি ফের রাজনৈতিক স্বার্থে সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে?
শুক্রবার চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানকে পাশে নিয়ে ঘোষণা করেন, রবিবার দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান উড়ে যাবে। পুষ্পবৃষ্টি হবে হাসপাতালের উপরে। কোভিড হাসপাতালের সামনে বাজানো হবে সেনা-ব্যান্ড। নৌসেনার জাহাজ সেজে উঠবে আলোয়। জানা গিয়েছে, ব্যারাকপুরে বায়ুসেনার ঘাঁটি থেকে থেকে ওড়া একটি এমআই-১৭ বিমান চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার হাসপাতালের রাজারহাট ক্যাম্পাস (কোভিড হাসপাতাল) এবং কলকাতায় কমান্ড হাসপাতালের উপর পুষ্পবৃষ্টি করবে। একই ভাবে দিল্লিতে এমস, জিটিবি হাসপাতাল, সফদরজং হাসপাতাল-সহ যে সব হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা করছে, সেগুলির উপর রবিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পুষ্পবৃষ্টি করবে বায়ুসেনার বিমান।
আরও পড়ুন: এ বঙ্গে কিসে কিসে ছাড়? রাজ্যের সিদ্ধান্ত সোমবার
গত সপ্তাহে আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক একই ভাবে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানাতে বায়ুসেনার ‘ফ্লাইপাস্ট’-এর ঘোষণা করেছিলেন। এ দেশে সে সবের সঙ্গে বাড়তি সংযোজন শুধু পুষ্পবৃষ্টি। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “এর থেকে অনেক কম খরচে গরিব-মজুরদের জন্য মাসে ৭,৫০০ টাকা করে দেওয়া যেত।” অনেকেই বলছেন, বায়ুসেনা পুষ্পবৃষ্টি না করে তো পরিযায়ী শ্রমিকদের বিমানে ফেরানোর কাজ করতে পারত।
নরেন্দ্র মোদী সরকার অবশ্য বোঝাতে চাইছে, এটা সামরিক বাহিনীর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে কংগ্রেস সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করছে বলে বিজেপি প্রচার করবে ভেবে কংগ্রেসের শীর্ষনেতাদের বদলে নীচের সারির মুখপাত্রেরা কেন্দ্রের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের কটাক্ষ, নতুন সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন ‘মোদীমহল’-এর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। তার উপর প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির জন্য প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিশেষ বিমান কেনা হচ্ছে। তার সঙ্গে এই ফ্লাইপাস্ট। এ সব থেকেই মোদী সরকারের অগ্রাধিকার স্পষ্ট। ইয়েচুরি বলেন, “এ ভাবে সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানো খুবই উদ্বেগজনক। এর জন্য কত টাকা খরচ হবে, তা কি সরকার জানাবে?”
আরও পড়ুন: ধন্দ রেখে লকডাউনের নির্দেশিকায় সংশোধন কেন্দ্রের
প্রাক্তন ফৌজি-কর্তারাও বাহিনীর এমন কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। তাঁরা বলছেন, সেনার এখন সীমান্ত সুরক্ষায় নজর দেওয়া উচিত। কারণ পাকিস্তান এই রকম সঙ্কটের সুযোগ নিতে চাইবে। সামরিক বাহিনী অতিমারির মোকাবিলায় প্রশাসনকে সাহায্য করতেই পারে। কিন্তু এই সব ‘নাটকে’ জড়ানোর দরকার নেই। বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার অংশুমান মৈনকরের মতে, এ জন্য বিপুল খরচের কথা মাথায় রাখা দরকার। লকডাউনের মধ্যেই সেনার অফিসার এন এস বল ক্যানসারে মারা গেলেও তাঁর বাবা-মায়ের জন্য বায়ুসেনার বিমান দেওয়া হয়নি। সেনার অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বীরেন্দ্র ধানোয়ার বক্তব্য, “সামরিক বাহিনী কেন সরকারি চিয়ারলিডারের কাজ করবে? আমি যে সেনায় কাজ করতাম, এটা সেই বাহিনী নয়। এমন কিছু হবে ভেবেই বিরক্ত লাগছে।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy