প্রতীকী ছবি।
দেশে দৈনিক সংক্রমিতের যে সংখ্যা সামনে আসছে, প্রকৃত সংখ্যা তার অন্তত ১০ গুণ বেশি। এমনই মনে করছেন, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একটি অংশ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, এখনও সবাইকে পরীক্ষার বৃত্তে আনা যায়নি। সংক্রমিত হয়েছেন এমন সন্দেহে শুধুমাত্র উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদেরই পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ পরীক্ষার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও একই ঘটনা ঘটছে। এমনকি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া সংক্রমিতের পরিসংখ্যানেও সেই ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা।
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পিটার সি ডোয়ার্টির বক্তব্য, ‘‘বিশ্ব জুড়ে যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃত সংক্রমিতের সংখ্যা তার তুলনায় কম পক্ষে পাঁচ-দশ গুণ বেশি। বৃহত্তর আঙ্গিকে পরীক্ষা ছাড়া প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া মুশকিল।’’ গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে দেশের কোভিড ১৯ পরিস্থিতি ঠিক কী, তা জানার জন্য বাড়ি বাড়ি কোভিড পরীক্ষা করা দরকার। যেটা এখন অসম্ভব। আরও একটি অসুবিধার কথা জানাচ্ছেন তাঁরা। তা হল, শহরে না হয় তবু কোভিড পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু গ্রামগুলিতে কী হচ্ছে, সেখানে কত জন সংক্রমিত হয়েছেন, সেই হিসেব তো পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রকৃত চিত্র অধরাই থাকছে।
গ্রামাঞ্চলে কারও কোভিড হয়নি, এমনটা মনে করার তো কোনও কারণ নেই! বরং কত জন সংক্রমিত হয়েছেন, সেটাই প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: বাড়িতে থাকার শর্ত ভাঙায় বাড়ছে বিপদ, অসমে চিন্তা ফের অসুস্থরাও
মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখ এ বিষয়ে জানাচ্ছেন, যাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদেরই শুধু পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা উপসর্গহীন, তাঁদের পরীক্ষা হচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘ফলে প্রকৃত সংখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যানের তুলনায় সংক্রমিতের সংখ্যা অন্তত দশ গুণ বেশি।’’
দেশে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বেশি পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাই আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি প্রকাশ্যে আসছে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘দৈনিক ১০ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই কোভিড পজ়িটিভের সংখ্যাও স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।’’ কর্তাদের একাংশের এও বক্তব্য, সংক্রমিতের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৭৭.৬৫ শতাংশ। অ্যাক্টিভ কেসের হার ২০.৬৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: টিকা পরীক্ষা নিয়ে মস্কোর অনুরোধ, সক্রিয় হল দিল্লি
তবে যে ভাবে পরীক্ষার তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে, তা আদৌ যথাযথ কি না, তার মধ্যে কোনও অসঙ্গতি থাকছে কি না, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘এখন বলা হচ্ছে, সংক্রমণের দিক থেকে ব্রাজিলকে আমরা ছাপিয়ে গিয়েছি। কিন্তু ডেটা-রিপোর্টিং যদি ঠিকঠাক হত, তা হলে দেখা যেত দু’মাস আগেই ব্রাজিলকে আমরা ছাপিয়ে গিয়েছি!’’ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর সংক্রামক রোগ চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য কী ভাবে আসছে তা পরিষ্কার নয়। শুধুমাত্র সংখ্যাটা জানা যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত ছবি বুঝতে গেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘কত জনের রিপিট টেস্টিং হচ্ছে, কত জনের ডিসচার্জ হওয়ার আগে দ্বিতীয় বার টেস্টিং হচ্ছে, সেগুলো স্পষ্ট নয়। ফলে সংক্রমিতের প্রকৃত সংখ্যা অনেক সময়েই সামনে আসছে না। আমাদের আশঙ্কা, যে সংখ্যা সামনে আসছে, প্রকৃত সংখ্যা তার থেকে অনেকটাই বেশি।’’
hdm2
ফাইল চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy